ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাকৃবির গৌরবোজ্জ্বল ৫৬ বছর

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২০ আগস্ট ২০১৭

বাকৃবির গৌরবোজ্জ্বল ৫৬ বছর

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূল চালিকাশক্তি কৃষি। আমাদের আবহমান বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। প্রথম উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার পথিকৃৎ ও সর্বোচ্চ জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ৫৬ বছরের গৌরবময় যাত্রাপথ অতিক্রম করে ৫৭তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তরে ও ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম বিদ্যাপীঠ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও গৌরবম-িত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরেই ১৯৬১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রকৃতিকন্যা খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ আবাসন ব্যবস্থাও করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩টি ইনস্টিউট, ৬টি অনুষদ ও ৪৪টি বিভাগ রয়েছে। সম্প্রতি জুলাই ২০১৭ সংস্করণে বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রকাশিত ওয়েবমেট্রিক্সে র‌্যাংকিং অব ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটিস এ বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। স্পেনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্প্যানিশ জাতীয় গবেষণা কাউন্সিলের করা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এদের অধিভুক্ত কলেজের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে এ অবস্থান দেখানো হয়েছে। ওয়েবমেট্রিক্সের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় দেশে ১ নম্বর অবস্থানে থাকলেও বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এর অবস্থান ২০৬১ নম্বরে। ভৌত অবকাঠামো ছয়টি অনুষদীয় ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, গ্রাাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ছাত্রদের জন্য নয়টি ও ছাত্রীদের জন্য চারটি হলো, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবন, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, দুই হাজার আসনবিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন ভবন, জিমনেসিয়াম, স্টেডিয়াম, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রকৌশল ভবন, অতিথি ভবন, ক্লাব ভবন, ৬৫৭টি আবাসিক ইউনিট, ১২টি ফার্ম, ফিল্ড ল্যাব, ক্লিনিক, ওয়ার্কশপ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জার্মপ্লাজম সেন্টার, শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মরণে নির্মিত বধ্যভূমি, বিজয় ৭১, মরণ সাগর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্বরসহ দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট (বিনা) এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিউট (বিএফআরআই) এ ক্যাম্পাসে অবস্থিত। গৌরবের বিষয়সমূহ জার্মপ্লাজম সেন্টার ॥ উদ্ভিদের অন্যান্য সংগ্রহশালা, এটি গবেষণায় বিশ্বের মধ্যে প্রথম এবং আয়তনে দ্বিতীয়। প্রায় ৩২ একর জায়গার ওপর সাড়ে ১১হাজার ফলের প্রজাতি নিয়ে গড়ে ওঠেছে জার্মপ্লাজম সেন্টারটি গত ২২ বছরে ৬৭টি ফলের নতুন জাত আবিষ্কার করেছে। কৃষি জাদুঘর ॥ প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত এই মিউজিয়ামটি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র কৃষি মিউজিয়াম। মৎস্য জাদুঘর ॥ ‘বায়ো-ডাইভারসিটি সেন্টার’ বিচিত্র প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণের দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফিশ মিউজিয়াম এটি। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ॥ কৃষি বিষয়ক বই সংগ্রহের বিচারে এশিয়ার বৃহত্তম লাইব্রেরী। পুস্তক সংখ্যক প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তিন তলাবিশিষ্ট এই ভবনে একটি সাইবার কক্ষ রয়েছে। ক্যাম্পাস ॥ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর ক্যাম্পাস এটি যা প্রায় ১২০০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদী। ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে চলে গেছে রেল লাইন। বোটানিক্যাল গার্ডেন ॥ বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষণের দিক থেকে বাংলাদেশের এক নম্বর এটি। দুষ্প্রাপ্য গাছ-গাছালির সংগ্রহ নিয়ে ২৫ একর জায়গা জুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেনটি। ভেটেনারি ক্লিনিক ॥ প্রশিক্ষণ, পশু চিকিৎসা সেবা প্রদানের দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যতম পশু চিকিৎসালয়। প্লান্ট ডিজিজ ক্লিনিক ॥ উদ্ভিদের রোগ নির্ণয়, গবেষণার কাজে ব্যবহৃত এই ক্লিনিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম উদ্ভিদ চিকিৎসালয়। মুক্তিযুদ্ধে বাকৃবি ১৯৭১ সালের দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হারায় তার ১৯ বীর সস্তানকে। তারা হলেন জামাল হোসন, নাজমুল আহসান, শামসুল হক তালুকদার, নাজির আকতার কাশেম, আবদুল মতিন খন্দকার টিপু, হাবিবুর রহমান, আবুল কাশেম, খুরশীদ আলম শিবলু, কাজী মঞ্জুর হোসন, ইব্রাহিম মোস্তফা কামাল, মনিরুল ইসলাম আকন্দ নামের ১১ ছাত্র ও আক্কাস আলী, মধুসূদন, নূরুল হক, গাজী ওয়াহিদুজ্জামান, হাসান আলী, গিয়াস উদ্দিন নামের ছয় কর্মচারী এবং পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম ভুইয়াকে। তাদের নামে বিশ্বদ্যিালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের পিছন অংশে নির্মাণ করা হয় মরণ সাগর নামের স্মৃতিসোধ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শহীদ ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার নামে তিনটি হলের নামকরণ করা হয়। হলগুলো হচ্ছে শহীদ শামসুল হক হল, শহীদ নাজমুল আহসান হল এবং শহীদ জামাল হোসেন হল। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড, মো, আলী আকবর বলেন, ‘খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ নামে যে ইস্যু বর্তমানে সারা বিশ্ব জুড়ে শোনা যাচ্ছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক-গ্র্যাজুয়েটদের অক্লান্ত পরিশ্রম এ অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে রফতানির দিকে ধাবিত হচ্ছি। দেশ থেকে ক্ষুধা মঙ্গার অবসান ঘটেছে।
×