ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেদের ফেভারিট ভাবতে পারছেন না স্মিথ

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ২০ আগস্ট ২০১৭

নিজেদের ফেভারিট ভাবতে পারছেন না স্মিথ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঢুকেই সবার আগে উইকেটের দিকে গেলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। দীর্ঘক্ষণ উইকেট দেখলেন। বোঝার চেষ্টা করলেন। কি আছে এই উইকেটে। যা বুঝলেন, তাহলো স্পিনই মূল ভরসা। টেস্টে কেউ ফেবারিট নয়। অথচ একটা সময় ছিল বাংলাদেশে কোন শক্তিশালী দল খেলতে আসা মানেই হচ্ছে তারা ফেবারিট। কিন্তু শুক্রবার রাতে ঢাকায় পা রাখার পর শনিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের ফেবারিট বলতে পারলেন না স্মিথ। জানেন এখন বাংলাদেশে কোন দলই বাংলাদেশের বিপক্ষে নিরাপদ নয়। একটু ভুল হলেই হার অবধারিত। তাইতো স্মিথ বলেছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে দারুণ একটি সিরিজ হবে। বাংলাদেশ এখানে অনেক ভাল দল। আমি কাউকে ফেবারিট বলতে পারছি না। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমাদের স্কিলে ভরসা আছে। আমরা যদি ঠিকমতো খেলতে পারি ভাল একটি সিরিজ হবে।’ বাংলাদেশে আসার বিমানে চড়ার আগেই স্মিথ বলেছিলেন, ‘নিজেদের কন্ডিশনে তারা (বাংলাদেশ) ভীষণ শক্তিশালী দল। চ্যালেঞ্জিং সিরিজ হতে যাচ্ছে।’ শনিবারও একই কথা বললেন। তবে সঙ্গে স্পিন নিয়ে যে আতঙ্ক আছে তাও বুঝিয়ে দিলেন। স্মিথ জানালেন, ‘পুরো সিরিজজুড়ে স্পিন অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।’ সঙ্গে স্মিথ রিভার্স সুইংও আশা করছেন। তাহলে যে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলা যাবে। স্মিথ বলেছেন, ‘রিভার্স সুইং আশা করছি।’ উইকেট দেখে তার এমনটাই মনে হয়েছে, রিভার্স সুইং সম্ভব। স্মিথের অবশ্য এটিও মনে থাকার কথা, গত ১০ বছরে উপমহাদেশে মাত্র দুইবার জিততে পেরেছে তারা। তা মনেও আছে। এবার সেই খারাপ ফলের পরিবর্তন চান স্মিথ, ‘এখন সুযোগ তা পরিবর্তন করার। ভারতে ভাল কিছু করেছিলাম। আমাদের শুধু দরকার ধারাবাহিকতা। আমাদের স্কিল দেখানোর সময় এসেছে। আমরা কি শিখেছি তা দেখাতে হবে। আশা করছি সেরাটাই দেখাতে পারব।’ শুক্রবার রাতে বাংলাদেশে পা রাখতেই উত্তেজনা যেন শুরু হয়ে যায়। এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই দুই দলের সিরিজ নিয়েই শুধু উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিরাপত্তাও কঠোর। স্মিথ এ নিয়ে বললেন, ‘আমরা গত (শুক্রবার) রাতেই বাংলাদেশে পৌঁছেছি। আমরা এ সিরিজ নিয়ে উত্তেজনায় আছি। আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং সফর এটি। বাংলাদেশ দল গত এক বছর ও তারও আগে থেকে দুর্দান্ত খেলছে। আশা করছি আবহাওয়া ভাল থাকবে, আমরা ভাল ক্রিকেটও খেলতে পারব। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে অনেক খুশি।’ বাংলাদেশের বিপক্ষে এখন খেলা চ্যালেঞ্জিং বলেই বারবার মনে করছেন স্মিথ, ‘অবশ্যই। অনেক চ্যালেঞ্জিং সিরিজ হতে যাচ্ছে। এখানে বাংলাদেশ অনেক দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে। তারা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে। খুব বেশিদিন হয়নি। আমরা ভারতে খেলে যা শিখেছি, তা কাজে লাগাতে চাই।’ বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া দুই দলই নিজেদের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজটি খেলেছে উপমহাদেশের মাটিতেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। দুই দলই আবার এ বছর মার্চের পর আর কোন টেস্ট খেলেনি। নিজেদের সর্বশেষ টেস্টে বাংলাদেশ যেখানে জিতেছে সেখানে অস্ট্রেলিয়া হেরেছে। উপমহাদেশ মানেই অসিদের জন্য যেন আতঙ্ক। বাংলাদেশ দলটি আবার এ মুহূর্তে নিজেদের মাটিতে শক্তিশালী দল। সর্বশেষ নিজেদের মাটিতে খেলা টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব ক্রিকেটে বার্তা দিয়ে দিয়েছে। শুধু নির্ধারিত ওভারের খেলায় নয়, দীর্ঘ পরিসরের খেলাতেও শক্তিশালী হয়ে উঠছে দল। আর তাই অস্ট্রেলিয়ার ভয়টা এবার বেশি। ২০০৬ সালে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয়। এরপর দুই দলের মধ্যকার ১১ বছরে আর কোন টেস্ট ম্যাচ হয়নি। ২০০৬ সালের বাংলাদেশ দল আর এখনকার বাংলাদেশ দল যে অনেক ভিন্ন, তা সবারই জানা। ভাল পরীক্ষাই দিতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। তা জানা স্মিথেরও। তাইতো সতর্ক অসি দল। তবে সফল হওয়ার আশা থাকাটাও স্বাভাবিক। স্মিথের তা আছেও। স্মিথ বলেছেন, ‘১০ (১১ বছর) আগের ঘটনা। আমি তখন ১৮ বছরের ছিলাম। আমি তখন আমার পথ তৈরির চেষ্টায় ছিলাম। আমি তখন মনে হয় নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে খেলতাম। অনেকদিন আগের কথা। এখন অনেক বদলে গেছে সব।’ সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম ও তামিম ইকবাল বাংলাদেশ দলের নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার। এই তিন ক্রিকেটারই দলের ভাগ্যে জয় এনে দিতে পারেন। তা ভাল করেই জানেন স্মিথ। এ তিন ক্রিকেটারের বিপজ্জনকও বলেছেন স্মিথ, ‘তারা অনেক ক্রিকেট খেলেছে। তারা বিপজ্জনক।’ বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া এ পর্যন্ত মাত্র চারটি টেস্ট খেলেছে। স্মিথ এ বিষয়টিতে অবাক হচ্ছেন। বলেছেন, ‘আমি অবাক হয়েছি। ১৭ বছরের ক্রিকেটে দুই দলের মধ্যকার মাত্র চার টেস্ট খেলা হয়েছে।’ এবার ১১ বছর পর যখন স্মিথরা খেলতে নামবেন, তখন হয়তো আবারও অবাক হতে পারেন। বাংলাদেশ দল যদি নিজেদের সেরাটা দিতে পারে, স্পিন আতঙ্ক ভালভাবে অসি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ধরিয়ে দিতে পারে, তাহলেই অসিদের হার হয়ে যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে স্পিন নিয়ে আতঙ্ক আছেও। উপমহাদেশে তারা খেললে তা সবসময়ই থাকে। তবে স্পিন নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা আছে স্মিথবাহিনীরও। ডারউইনে যে প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলে এসেছে অস্ট্রেলিয়া, সেখানে বাংলাদেশের মতো উইকেটেই প্রস্তুতি নিয়েছে। স্পিনারদেরই বেশি বল করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। স্পিন নিয়েই বেশি পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর এই স্পিন ভীতির জন্যই তো নিজেদের ফেভারিট বলতে পারছেন না স্মিথ।
×