ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২০ আগস্ট ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু

যুক্তরাষ্ট্র মেধাসম্পদ নিয়ে চীনের অনুসৃত নীতি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে। এ বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে এক প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রি স্মারকেও স্বাক্ষর করেছেন। খবর বিবিসিও ওয়েবসাইটের। এ প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ মার্কিন বাণিজ্য কর্মকর্তা রবার্ট লাইথাইজার বলেন, তদন্তের মাধ্যমে তার দফতর গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ের সমাধানে পৌঁছতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, তদন্তের মাধ্যমে যদি জানা যায় চীন, যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসম্পদ চুরির সঙ্গে ব্যাপকভাবে জড়িত, তবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও বেজিংয়ের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। এদিকে নিজ দেশের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার খবরে বেজিং গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার এই মর্মে সতর্ক করে দিয়েছে যে, সত্যকে উপেক্ষা করার মাধ্যমে বহুপাক্ষিক বাণিজ্যের নিয়ম-নীতির প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে যুক্তরাষ্ট্র যদি পারস্পরিক বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে চীনও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। মেধাভিত্তিক সম্পদ পাচারের বিষয়ে পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই পাচারের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই ক্ষতির পরিমাণ কোটি বা লক্ষ ডলারে নয়, বরং কয়েক শ’ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। ওয়াশিংটনের পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের কর্মকর্তা গ্যারিহাফ বাউয়ার বলেন, পাইরেটেড সফটওয়্যার নকল পণ্য ও গোপন বাণিজ্য তথ্য চুরির মাধ্যমে পাচারকৃত এই সম্পদের বাজার মূল্য আনুমানিক ছয় শ’ বিলিয়ন ডলার। এই চাঞ্চল্যকর তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেবে এবং সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রযুক্তি তথ্য হস্তগত করার লক্ষ্যে চীন-মার্কিন বাণিজ্যিক কোম্পানি ও প্রধান প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠানে কী ধরনের বিনিয়োগ করছে সে বিষয়েও অনুসন্ধান করবে। এ প্রসঙ্গে চীনা বিনিয়োগ আইন অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট ও পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা সম্বলিত। সেখানে উল্লেখ করা আছে, কোন চীনা অংশীদারকে ব্যবসায় অন্তর্ভুক্ত করলে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা সেদেশে ব্যবসা করতে পারবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে চীন সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোতে তাদের মেধাসম্পদ হস্তান্তরের অনুরোধ করতে পারে। যেহেতু হস্তান্তরের বিষয়টি উভয়পক্ষের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতেই সম্পাদিত হয়-তাই এটিকে দোষের মধ্যে ফেলা যায় না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে এ্যাপলের মতো কোম্পানিগুলো চীনা বাজারে প্রবেশের জন্য তাদের সংগ্রহ করা সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত হস্তান্তরের সম্মতি জানিয়েছে। কিন্তু চীনের গৃহীত এই বাণিজ্যিক পদ্ধতিকে হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা অবৈধ ব্যবসা ও শিল্পনীতি হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। কেননা, এর মাধ্যমে মার্কিন প্রযুক্তি ও মেধাসম্পদ সুকৌশলে চীনে পাচার হয়ে যাচ্ছে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে তাদের দেশ থেকে চীনে মেধাসম্পদ পাচারের দীর্ঘ ইতিহাস ও সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে। চলতি বছরে কমিশন অন দ্য থেফ্ট অব আমেরিকান ইন্টেলেকচুয়েল প্রপার্টি নামের এক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন অভ্যাসগতভাবেই মার্কিন মেধাসম্পদ চুরিতে সক্রিয়। এই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে চীন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মার্কিন উদ্ভাবনী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফার্ম ও সফ্্টওয়্যার কোম্পানিগুলোর তথ্য-উপাত্ত চুরির দিকে তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে থাকে। চীনের এসব তৎপরতা প্রতিরোধ করতে কমিশন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে। কমিশনের সুপারিশের আলোকে সংশ্লিষ্ট দফতর এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পর ৩০১ তদন্ত ধারা বলে আগামী অক্টোবর মাসে এক শুনানির আয়োজন করবে।
×