ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমিনুল ইসলাম মিলন

আমরা একটি রাজ্য চাই

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ২০ আগস্ট ২০১৭

আমরা একটি রাজ্য চাই

সম্প্রতি বগুড়া শহরে নিম্নবিত্ত পরিবারের এক স্কুলছাত্রীকে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা তুফানের গতিতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। পরবর্তীতে তার ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে- আমরা পত্রিকায় তাদের ছবি দেখেছি, টেলিভিশনে সচিত্র সংবাদ দেখেছি। কিন্তু আর কতকাল : কতকাল আর দেখব-ধর্ষিতা-নির্যাতিতা-নিপীড়িত মানুষের এসব ছবি-চাঁদা প্রদানে রাজি না হওয়ায় রাস্তায় পড়ে থাকা নিথর মানুষের দেহ। আমরা আর ভিকটিমের ছবি দেখতে চাই না, আমরা গণমাধ্যমে ক্রিমিনালদের সচিত্র বিবরণ দেখতে চাই- চাই তাদের কঠোর শাস্তি। বাংলাদেশের কোন পত্রিকা/ম্যাগাজিন বা টেলিভিশনে আমরা এসব ধর্ষকের সচিত্র বিবরণী আর কখনও দেখতে চাই না। আমরা চাই তাদের মৃত্যুর সচিত্র বিবরণী। যত দ্রুত সম্ভব-ততই এ জাতির মঙ্গল। কতকাল আর বিচারের কথা বলে আমাদের এ সব ধর্ষক/খুনী/চাঁদাবাজ অপরাধীদের স্মৃতির পর্দা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হবে? কী হবে এ বিচারে। দীর্ঘদিন বিচার চলবে-অপরাধীরা কখনও জামিনে থাকবে, কখনও বাইরে, কখনও কারাগারে। জেল হাজতেও থাকবে রাজহালে- হাতে মোবাইল-ঠোঁটে বেনসন-সামনে সুস্বাদু কাচ্চি বিরিয়ানি- বাহ! বাংলাদেশের কয়েক কোটি মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তের ঘর-সংসার থেকেও উত্তম। ফলত কী হবে অপরাধীদের। হয়ত কিছুদিন বা কিছুকাল সাজা হবে- চলবে আপীল-রিভিউ- তার পরে কারও কারও ক্ষেত্রে হয়তো মহামান্য রাষ্ট্রপতির মার্জনা। তারপর ধরে নিলাম কারাগার-কারাগার তো কারাগার নয়-এটিও অর্থের জোরে তাদের কাছে বালাখানা। তাছাড়া আমাদের সরকারী হাসপাতালগুলো আছে না! এগুলো কার সেবার জন্য- আমাদের এসব মাননীয় অপরাধীদের জন্যই তো-পেট ব্যথা-পিঠ ব্যথা-সর্দি কাশি-জ্বর-কিডনি-লানগস্Ñ সকল উপসর্গ কেবল তাদেরই। এখানেই থাক বাছা। পিতা-মাতা-ভাই-বোন-বন্ধু-বান্ধব-ক্যাডার-ননক্যাডার-লিডার সবারই দেখা পাবে। হয়ত রাতে দেখা পাবে নববধূ বা প্রিয়তমা স্ত্রীর। থাকায় কী না হয়! সাজাপ্রাপ্ত জেলের আসামি বছর ঘুরতে নবজাতকের পিতা হলে ক্ষতি কি! জন্ম-মৃত্যুর ওপর তো মানুষের হাত নেই। এভাবেই কী চলবে বাংলাদেশ! বগুড়ায় তুফানের তুফান শেষ হতে না হতেই বাড্ডায় পিতা-মাতার একমাত্র শিশুকন্যাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে ধর্ষণকরা। এতদিন ধর্ষণের কথা শোনা যেত, এখন চালু হলো ধর্ষণ শেষে হত্যা। কিন্তু আর নয়, সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ। এবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ’৭১-এ ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে। এবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে তুফান গংয়ের বিরুদ্ধে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয়-বিত্ত পরিচয়-প্রশাসনিক পরিচয়-কোন কিছুই আমলে না নিয়ে এদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে উপযুক্ত সাজা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। আপীল-রিভিউ-মার্জনা সবশেষে ৯০ দিনের মাথায় অবশ্যই সাজা কার্যকর করতে হবে। সাজা মানে সাজা। সোজা ফায়ারিং স্কোয়াড। প্রকাশ্য দিবালোকে-লাখ লাখ মানুষের সামনে। লাইভ কাস্ট হবে সকল গণমাধ্যমে। শিশু-কিশোর অপরাধী বলে এ বাংলায় আমরা কোন বিশেষণ দেখতে চাই না। চাই না বয়সের কারণে বিশেষ কোন ছাড়। উত্তরার আদনানের হত্যাকারীদের কী সাজা হয়েছে জানি না। কিন্তু আদনানের মায়ের কোল তো কোন আইন-আদালত-সরকার-মানবাধিকার সংস্থা পূর্ণ করতে পারেনি। সন্তানহারা পিতা-মাতার হাহাকার তো মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শোনা যাবে। তাই, বাংলাদেশে খুন-ধর্ষণ-নারী নির্যাতনসহ বিবিধ অপরাধের বিচারের জন্য নতুন বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনে এসব অপরাধ দমনে পুলিশের ‘বিশেষায়িত শাখা’ সৃষ্টি করতে হবে। অপরাধ সংঘটনের ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিশেষ আদালতে-বিশেষ প্রক্রিয়ায় এর বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ৯০ দিনের মাথায় জাতিকে এর চূড়ান্ত রায় জানাতে হবে। কেরানীগঞ্জ বা কাশিমপুরের গোপন কুঠুরিতে কোন ফাঁসি নয়- ফাঁসি হতে হবে জনসম্মুখে। ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদ- কার্যকরের বিধান করতে হবে। ধষর্ণ-নারী নির্যাতন-চাঁদাবাজি এসব জঘন্য অপরাধে দ-িত অপরাধীদের বাংলাদেশের বর্তমানের কোন কারাগারে রাখা যাবে না। তাদের রাখতে হবে নোয়াখালীর নিঝুম চরে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে। এর জন্য নিঝুম চরে বিশেষ কারাগার স্থাপন করতে হবে। বর্তমানে বিরাজমান আইনে দ-প্রাপ্ত আসামিদের যেসব সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়, বিশেষ ক্ষমতাবলে প্রয়োজনে সংশোধনী এনে এসব রহিত করতে হবে। এক সময়ের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে নির্বাসনের মতো এসব দ-িত অপরাধীকে নিঝুম দ্বীপে নির্মিত কারাগারে প্রেরণ করতে হবে। কোন ফোন, কোন বিদ্যুত, কোন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তাদের দেয়া যাবে না। মারাত্মকভাবে অসুস্থ হলে কেবল চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানি, এ প্রস্তাবনা অনেকের কাছে নির্মম-নিষ্ঠুর হতে পারে, কিন্তু দু’দিন আগে বাড্ডায় যে শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়-তার বিনিময়ে এ শাস্তি কোন শাস্তিই নয়। কঠোর এবং নির্মম বিচার ব্যবস্থা ও কঠোর শাস্তি প্রদান ছাড়া এ জাতির নিস্তার নেই। হয়ত হাজারে বা লাখে দু’চার জন কম অপরাধী শাস্তি পেতে পারে-পাক না। তবুও জাতির এ মুহূর্তের বৃহত্তর স্বার্থে এর বিকল্প নেই। তথাকথিত বুদ্ধিজীবী-মানবাধিকার কর্মীর কোন কথা শুনতে চাই না। আমাদের অনুসরণ করতে হবে আড়াই হাজার বছর আগে কৌটিল্যের দেয়া অনুশাসন-‘যেখানে দ- নেই-সেখানে রাজ্য নেই’। আমরা রাজ্য চাই-ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত ‘বাংলাদেশ নামক একটি রাজ্য চাই’। লেখক : সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা
×