ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সম্পদ

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ২০ আগস্ট ২০১৭

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সম্পদ

ফাঁসির দড়ি থেকে পালিয়ে বেড়ানো বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফেরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে এ খবর আমাদের আশ্বস্ত করেছে। সরকারের এই আশ্বাসের ভেতর কিছুটা স্বস্তি ও সান্ত¡না বয়ে আনবে ওই পলাতক খুনীদের কয়েকজনের সম্পদ বাজেয়াফতের উদ্যোগের তথ্যটি। দেশের সবচেয়ে পুরনো জুবিলী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর তিন খুনীর শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী কর্নেল (অব) ফারুক ও কর্নেল (অব) রশীদের নামে ৮৫ হাজার শেয়ার ছাড়াও মেজর (অব) বজলুল হুদার নামেও বেশ কিছু শেয়ার থাকতে পারে। এসব শেয়ার বাজেয়াফত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করণীয় রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শেয়ার বাজেয়াফত সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব। সেটির অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে খুনীদের শেয়ার বাজেয়াফত করার প্রক্রিয়া আরেক ধাপ এগোলো। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে ছয় খুনী এখনও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা হলো লে. কর্নেল (বরখাস্ত) আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব) রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব) নূর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব) আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আইনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে উভয় দেশে ল ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে। লে. কর্নেল রশিদ অবস্থান করছে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে ও পাকিস্তানে। মেজর ডালিম ব্যবসাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে কেনিয়া, লিবিয়া ও পাকিস্তানে আসা-যাওয়া করে। ক্যাপ্টেন মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম বর্তমানে পাকিস্তান ও লিবিয়ায় রয়েছে। লে. কর্নেল রাশেদ যুক্তরাষ্ট্রে এবং মেজর নূর চৌধুরী পালিয়ে আছে কানাডায়। নিজেদের রক্ষা করতে বারবার এরা বিভিন্ন দেশ বদল করছে। ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে পলাতক খুনীদের ধরতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খুনীদের ছবি সংবলিত তথ্য প্রেরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে আইনমন্ত্রীকে সভাপতি করে একটি টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করা হয়। টাস্কফোর্স দণ্ডপ্রাপ্ত খুনীদের অবস্থান চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি সংসদে বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুনের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের স্থাবর সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জুবিলী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর দুই খুনীর যে বিপুল পরিমাণ শেয়ার রয়েছে তা থেকে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের মুনাফা পাচ্ছে তাদের পরিবার, যা দেশবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে এবং জঙ্গী অর্থায়নে ব্যহার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জাতির প্রত্যাশা ইতিহাসকে যারা কলঙ্কিত করেছে জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে, ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত সেসব কুলাঙ্গারকে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। পলাতক অবস্থায় বিদেশে খুনীরা সম্পদের যে পাহাড় গড়ে তুলেছে সেটিও কিভাবে দেশে ফেরত আনা যায় সেসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার। খুনীদের সম্পদ ও সম্পত্তি বাজেয়াফতের উদ্যোগ আরও আগে গ্রহণ করা সমীচীন ছিল। অন্তত খুনীদের কয়েকজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পরপরই এ উদ্যোগ গৃহীত হলে ভাল হতো। খুনীদের যাবতীয় সম্পদ ও সম্পত্তি বাজেয়াফত করার কাজটি গতি পাক-এটাই চাওয়া।
×