ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দাস প্রথার স্মারক নিয়ে বিতর্ক শেষ হচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৯ আগস্ট ২০১৭

দাস প্রথার স্মারক নিয়ে বিতর্ক শেষ হচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রে

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে দাস প্রথার সমর্থক কনফেডারেশনপন্থীদের ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধ সরিয়ে নেয়ার আন্দোলন তীব্রতর হচ্ছে। এএফপি। সাউদার্ন পোভার্টি ল’ সেন্টার এসপিএলসি নামের একটি মানবাধিকার গ্রুপের তথ্যানুযায়ী এ ধরনের দেড় হাজারের বেশি স্মারক স্তম্ভ সরকারী জমিতে স্থাপন করা হয়েছেÑযার অধিকাংশই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। কনফেডারেটদের এসব স্মারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ, ভাস্কর্য, সরকারী স্কুল, মহাসড়ক, কাউন্টি ও শহরের নাম। যুক্তরাষ্ট্রে-কনফেডারেটদের স্মৃতিসৌধ ও স্থাপনা সরিয়ে ফেলার দাবি কেন দিনে দিনে এমন জোরদার হচ্ছে তার কারণ খুঁজতে গেলে অতীতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। আমেরিকাকে অভিবাসীদের দেশ বলা হয়। কলম্বাস আবিষ্কৃত দেশটিতে বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি যুদ্ধবিগ্রহে জড়িয়ে পড়ে এর আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের প্রায় নির্মূল করে দিয়ে এখানে তাদের ঠাঁই করে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসীরা তাদের মূল ভূখ- যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। নব স্বাধীনতাপ্রাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি ও সমৃদ্ধির পেছনে আফ্রিকা থেকে দাস হিসেবে আনা কালো মানুষদের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আব্রাহাম লিঙ্কন নির্বাচিত হওয়ার পর সে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টে যায়। তিনি দাস প্রথা বিলুপ্তির পক্ষে কংগ্রেসে প্রস্তাব পাস করলে দক্ষিণাঞ্চলের দাস শ্রমভিত্তিক খামার ও রেঞ্চ মালিকরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। পরিণতিতে ১৮৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এই গৃহযুদ্ধে ইউনিয়নিস্ট বা কেন্দ্রীয় ক্ষমতা পরিচালিত হতো দেশের উত্তরাংশ থেকে এবং বিদ্রোহীদের ঘাঁটি ছিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ পর্যন্ত চার বছরের এই গৃহযুদ্ধে নয় লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। শেষ পর্যন্ত কনফেডারেট বাহিনী বিভিন্ন স্থানে পরাজিত হয় আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু কনফেডারেট বাহিনীর পক্ষে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ও চৌকস যোদ্ধা ছিলেন-যারা তাদের সাহসিকতা ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের দক্ষিণাঞ্চলীয় মানুষের মনে আসন গড়ে নিয়েছেন। তাদের স্মরণে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে যেসব স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে- তাদের পুঁজি করে সে দেশের উগ্র শ্বেতাঙ্গ এবং ক্লু ক্লাক্স ক্ল্যান (কে.কে.কে) গোষ্ঠী নব্য নাৎসি তৎপরতা চালাচ্ছে। গত সপ্তাহে ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলের এক পার্ক থেকে কনফেডারেট জেনারেল রবার্ট লির এক ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলার কাজে বাধা সৃষ্টি করতে গিয়ে মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে উগ্র শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়। এতে একজনের মৃত্যু এবং বহু লোক আহত হয়। রবার্ট লী ছাড়াও মার্কিন গৃহযুদ্ধে দাস প্রথা সমর্থক আরও সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের মধ্যে টমাস জোনাথন জ্যাকসন ও জেফারসন ডেভিসের নাম প্রণিধানযোগ্য। এসব জেনারেলদের স্মরণে সারাদেশে দেড় হাজারের বেশি স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মারক প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে- এবং উগ্র শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠী ও নব্য নাৎসিরা তাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে ঘৃণার আগুন উস্কে দিচ্ছে। তাই কনফেডারেট প্রতীক সরিয়ে ফেলার দাবি দিনে দিনে জোরদার হচ্ছে।
×