ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জ্যাকি ওয়াটিস সিএনএন টেক

গুগল অফিসে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৯ আগস্ট ২০১৭

গুগল অফিসে তোলপাড়

গুগলের এক পুরুষ প্রকৌশলীর লেখা ৩ হাজার ৩০০ শব্দের এক ইশতেহার নিয়ে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে ঝড় উঠেছে। ওতে যুক্তিসহকারে বলা হয়েছে যে জীবতাত্ত্বি¡ক বা জৈবিক কারণে মহিলারা প্রযুক্তিগত কাজের জন্য উপযুক্ত নয়। ইশতেহারটি গত কিছু দিন ধরে গুগলের (গুগ) অভ্যন্তরেই চালু ছিল। তবে ক’দিন আগে মাদারবোর্ড সেটি প্রকাশ করে দেয়। রিকোড ও গিজমোডো দলিলটি পুরোপুরি প্রকাশ করে। শেষে গুগল ডাইভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ব্রাউন ও ইঞ্জিনিয়ারিং ভাইস প্রেসিডেন্ট আরি বালোগ পৃথক পৃথক বার্তায় গুগল কর্মচারীদের উদ্দেশে এই বিতর্কিত দলিলের ওপর বক্তব্য দেন। ব্রাউন ও বালোগ দলিলের বক্তব্য বিষয়ের নিন্দা করেন এবং গুগলের ডাইভার্সিটির উদ্যোগকে সমর্থন করেন। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তীব্র বিতর্কের জন্ম হয়। দলিলটির রচয়িতার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিনি গুগলের (গুগ) একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বলে জানা গেছে। তিনি বলেছেন, গুগলের অধিকসংখ্যক নারী প্রকৌশলী নেই কারণ পুরুষের বেশি। তিনি আরও বলেন, তরুণীদের সাঙ্কেতিক লিপি রপ্ত করার দক্ষতা শেখানোর সেমিনারসহ কোম্পানির ডাইভার্সিটি প্রোগ্রামগুলো অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণ করা তার বক্তব্য হলো এই ডাইভার্সিটি প্রোগ্রাম অপ্রগতিশীলদের একঘরে করে ফেলে। তিনি মনে করেন গুগলের অধিকসংখ্যক মহিলা কর্মী নিয়োগের অঙ্গীকার কোম্পানিকে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার পথে একটা বাধা এবং লিঙ্গভিত্তিক মজুরি ব্যবধানের কথাটা নেহায়েত অলীক বিষয়। লেখক উল্লেখ করেন যে, মহিলাদের মধ্যে উদ্বেগ ঘটিত সমস্যাবলীর এত উঁচু হার থেকেই বোঝা যায় যে সব কাজে স্ট্রেস বেশি থাকে সে সব ক্ষেত্রে মহিলার সংখ্যা কেন এত কম। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মকর্তা বালোগ বলেন, এ ধরনের গৎবাধা বক্তব্য অত্যন্ত বিরক্তিকর ও ক্ষতিকর। ডাইভার্সিটি বিভাগের ভিপি ব্রাউন এতে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি আরও দীর্ঘ জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে এক উন্মুক্ত ও সবাইকে নিয়ে কাজ করার পরিবেশ গড়ে তোলার অর্থ হলো এমন এক সংস্কৃতি লালন করা যেখানে ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তাধারাসহ বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন নারী-পুরুষরা তাদের মতামত আদান-প্রদানে নিরাপদবোধ করতে পারেন। ব্রাউন বলেন, দলিলে লিঙ্গ সম্পর্কে এক বেঠিক ধারণা তুলে ধরা হয়েছে যা আমি বা এই কোম্পানি অনুমোদন, সমর্থন বা উৎসাহিত করতে পারে না। গুগল ছেড়ে চলে যাওয়া সাবেক সিনিয়র প্রকৌশলী ইয়োনাতান জুঙ্গার মিডিয়ামে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘বেশ জোর দিয়ে বললেও লেখক মনে হয় জেন্ডার কি জিনিস তা বোঝেন না। সম্ভবত আরও কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো প্রকৌশল বলতে কি বোঝায় তাই তিনি জানেন না।’ গুগলের এক প্রকৌশল ডিরেক্টর পারিসা তাব্রিজ দলিলটিকে ক্ষতিকর আখ্যায়িত করেছেন। নিজেকে প্রোগ্রামার পরিচয় দেয়া আরেক টুইটার ব্যবহারকারী বলেছেন যে গুগলের মানব সম্পদ বিভাগ এ ব্যাপারে কিছুই না করলে তিনি কোম্পানি ছেড়ে দেবেন বলে ভাবছেন। গুগলের সাবেক প্রকৌশলী এরিকা বেকার এই বিতর্কের জবাবে বলেন, তিনি হতাশ হয়েছেন তবে অবাক হননি। এমন আচরণ একেবারে নতুন কিছু নয়। যা নতুন তা হলো এই কর্মচারী ৮ পৃষ্ঠার এমন একটা বিষয় লিখতে এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে শেয়ার করতে নিরাপদবোধ করেছেন। সিলিকন ভ্যালির অধিকাংশ বড় বড় ফার্মের মতো গুগলও দীর্ঘদিন ধরে একগুঁয়েমিভাবে কমসংখ্যক অশ্বেতাঙ্গ ও মহিলা কর্মচারী নিয়োগ করে আসছে। গত জুন মাসে কোম্পানির এক রিপোর্টে দেখা গেছে যে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের প্রায় ৬৯ শতাংশই পুরুষ এবং ৫৬ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ। অনুবাদ ॥ এনামুল হক
×