ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্ণমালা গাছ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৯ আগস্ট ২০১৭

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্ণমালা গাছ

জেলার সদর উপজেলার ৭১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর প্রায় ১২ হাজার ২৫১ শিক্ষার্থীর খেলার ছলে সাবলীলভাবে পড়তে শেখার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ২০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় তাদের স্লিপ ফান্ডের মাধ্যমে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বর্ণের গাছ স্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে বিদ্যালয়গুলোতে নতুনভাবে পড়া বান্ধব একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রারম্ভিক শ্রেণীর শিক্ষকবৃন্দ তাদের শিক্ষার্থীদের বর্ণজ্ঞান বৃদ্ধি করতে ক্লাসের বাইরে স্থাপিত বর্ণগাছের সহায়তায় বর্ণজ্ঞান চর্চা করাচ্ছে। খেলার ছলে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে, শুদ্ধ উচ্চারণে বর্ণ চর্চা করছে। এর ফল হিসেবে দেখা যায় এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিশু এলোমেলো বর্ণ চিনতে ও বলতে পারছে। এটি একটি অভিনব কৌশল হিসেবে বিদ্যালয়গুলো গ্রহণ করে কার্যকর ফল পাচ্ছেন। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলায় ৭টি বিদ্যালয়ও তাদের বিদ্যালয়ে বর্ণগাছ স্থাপন করে শিশু ও প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বর্ণমালা চর্চা করাচ্ছে। বর্ণগাছের সফলতা কুড়িগ্রামে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এর সত্যতা ও যৌক্তিকতা জানতে সেনেরখামার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় প্রথম শ্রেণীর সহকারী শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা তার শিক্ষার্থীদের ক্লাসের বাইরে বর্ণগাছের কাছে নিয়ে গিয়ে শেখানো বর্ণ তারা চিনতে পারছে কিনা তা মূল্যায়ন করছেন। নির্দেশিকা কাঠি যে কোন একটি বর্ণের ওপর রেখে শিক্ষক বর্ণের নামটি শিক্ষার্থীদের নিকট জানতে চাচ্ছেন, আর শিক্ষার্থীরা সবাই হাত উঁচু করে তাদের উত্তরটি জানা আছে সেটি প্রকাশ করছেন। শিক্ষক হাত উঁচু করে তুলে ধরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে একজনকে বর্ণটি কী জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দিচ্ছে। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর এবার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বললেন কে কে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত গাছের প্রতিটি পাতায় লিখিত বাংলা বর্ণগুলো পড়তে পারবে? সকল শিক্ষার্থী একসঙ্গে হাত তুলে তাদের সামর্থ্য জানান দিল। শিক্ষক তাদের মধ্য থেকে একজন শিক্ষার্থীকে বলতে বলল, সে তৎক্ষণাৎ নির্দেশিকা কাঠি দিয়ে একে একে সব বর্ণ পড়ে শোনাল, সঙ্গে সঙ্গে অন্য শিক্ষার্থীরাও সমস্বরে বর্ণগুলো বলতে লাগল। বর্ণমালা চর্চার এই অভিনব কৌশল এবং শিক্ষার্থীদের সামর্থ্যরে প্রকাশভঙ্গি দেখে সবার ধারণা প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সেনেরখামার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুফিয়া বেগম বলেন ‘আমরা যদিও আমাদের স্লিপ ফান্ড থেকে বর্ণেরগাছটি তৈরি করেছি, তবে বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস এর রিড প্রকল্পের কর্মীবৃন্দের উদ্বুদ্ধকরণ, ডিজাইন এবং এটির যথাযথ ব্যবহারের দিক নির্দেশনার কারণে এর সুফল পাওয়া গেছে। এছাড়া এটি আমার বিদ্যালয়ের বাইরের পরিবেশকে দিয়েছে একটি নতুন মাত্রা, যার মাধ্যমে বিদ্যালয়ে একটি পড়াবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।’ সদর উপজেলায় প্রায় ২০টি বিদ্যালয়ে এই বর্ণগাছ স্থাপন করা হয়েছে এবং এটি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের বর্ণমালা চর্চা করা হচ্ছে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে বর্ণমালা চর্চা করছে এবং তাদের শিখনও স্থায়ী হচ্ছে। আমরা আশাবাদী আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যায়ে আমরা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সকল বিদ্যালয়েই একটি করে বর্ণগাছ স্থাপনে সক্ষম হব। স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে
×