ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চার মাস পানিবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৯ আগস্ট ২০১৭

চার মাস পানিবন্দী

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ ডিএনডি বাঁধের ডেমরার পশ্চিম সানাপাড় এলাকার বাসিন্দা শহিদ মিয়ার চায়ের দোকানটি বর্ষার পানিতে ডুবে যাওয়ায় এখন পশ্চিম সানারপাড় ও লন্ডন মার্কেট এলাকার রাস্তায় নৌকা চালাচ্ছেন। শুধু শহিদ মিয়াই নন তার মতো সিরাজ মিয়া, ফরিদ মোল্লা, কাউয়ুম মিয়া ও সুমনসহ প্রায় ৩০-৩৫ জন এখন সানারপাড় এলাকার প্রধান রাস্তাসহ আশপাশের রাস্তা ডুবে যাওয়ায় নৌকা চালাচ্ছেন। পারাপার করছেন পানিবন্দী মানুষদের। ডিএনডির ডেমরার পশ্চিম সানারপাড়, কোদালদাহ, গ্রীন সিটি আবাসিক এলাকা, ডগাইর, টেংরা, সারুলিয়া, বামৈল, সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়, লন্ডন মার্কেট, আলেক সুপার মার্কেট, নিমাইকাশী, বাঘমারাসহ আশপাশে এলাকায় গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে বর্ষার পানিতে ডুবে আছে। ডিএনডির পাম্প হাউসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাম প্রসাদ বাছারের ভাষ্যমতে বর্তমানে ডিএনডির অভ্যন্তরে স্থান ভেদে ১ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। যদি আর বৃষ্টিপাত না হয় তবে জমে থাকা পানি শিমরাইলের পাম্প হাউস দিয়ে নিষ্কাশন করতে আরও ২৪ দিন সময় লাগতে পারে। এদিকে শিমরাইল পাম্প হাউসে ৫১২ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি পাম্প থাকলেও ১২৮ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পাম্প বিকল অবস্থায় রয়েছে। ফলে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে ধীরগতিতে। ১৯৬৬-৬৮ সালে রাজধানী ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লার থানা এলাকার ৮ হাজার ৩শ’ ৪০ হেক্টর জায়গা নিয়ে ডিএনডি বাঁধ নির্মাণ হয়। বর্তমানে ডিএনডিতে প্রায় ২০ লাখ লোক বসবাস করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ৬-৭ লাখ মানুষ গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে পানিবন্দী অবস্থায় দিনাতিপাত করছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানার বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন স্থাপনা এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে। ডিএনডিতে এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। বর্ষার পানির সঙ্গে বাথরুমের ময়লা-আবর্জনা মিশে একাকার হয়ে গেছে। ফলে ময়লা ও কালো কুচ কুচে পানি ভেঙ্গে লোকজনকে চলাচল করতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, কোন কোন এলাকায় স্থান ভেদে ১ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। ডিএনডি এলাকাটি ঢাকা-৪, ঢাকা-৫ ও নারায়ণগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনের এলাকায় পড়েছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১নং, ২নং, ৩নং, ৭নং, ৮নং ও ৯নং ওয়ার্ড এলাকাটিও ডিএনডির অভ্যন্তরে পড়েছে। পানিবন্দী মানুষের অভিযোগ গত দুই মাস ধরে পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটালেও ডিএনডিবাসীর খোঁজ-খবর কেউ নেননি। অনেক এলাকায় কোন জনপ্রতিনিধির দেখাও পাননি কেউ কেউ। সানারপাড়ের লন্ডন মার্কেট এলাকার বাসিন্দা সুজন (২২) জানান, শুধু লন্ডন মার্কেট ব্রিজ হতে চৌরাস্তা ব্রিজ পর্যন্ত পানি নেই। আর পুরো সানারপাড় এলাকায় এখন ঘরে ঘরে পানি। রাস্তাঘাটে নৌকায় চলছে। সানারপাড় বাসস্ট্যান্ড থেকে লিথি গার্মেন্টস পর্যন্ত জুতা পায়ে যাওয়া যায়। এরপর রাস্তাঘাটে শুধু পানি আর পানি। সানাপাড় এলাকার রড মিস্ত্রি কাউয়ুম মিয়া এখন নৌকার মাঝি হয়েছেন। কারণ রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। রাস্তায় এখন হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে আছে। সানারপাড়ের ক্যানেল রোডের কোন কোন স্থানে কোমর সমান পানিতেও ডুবে আছে। তাই নৌকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।কাউয়ুম ৩ হাজার ৬শ’ টাকা দিয়ে নৌকা কিনে রাস্তাগুলোতে নৌকা চালাচ্ছেন। কাউয়ুমের ঘরেও হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে আছে। রাস্তায় কোমর সমান পানি। পশ্চিম সানারপাড় এলাকার বাসিন্দা রবিউল হোসেন জানান, সানারপাড় এলাকার ক্যানেল রাস্তাটির কোথাও কোথাও হাঁটু কোমর সমান পানিতে তলিয়ে আছে।তাই ১০ টাকার রিক্সা ভাড়া এখন নৌকায় যেতে দিতে হচ্ছে ৩৫ টাকা। স্কুলছাত্রী সেফা আক্তার জানান, সানারপাড় এলাকার প্রধান সড়কটি পানিতে ডুবে থাকায় তিনগুণ রিক্সাভাড়া গুনতে হচ্ছে। ২০ টাকার রিক্সা ভাড়া এখন ৫০ টাকা দিতে যেতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাম্প হাউসে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চারটি পাম্পের মধ্যে ৩টি পাম্প চালু রয়েছে। একটি পাম্প বিকল অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে। এছাড়াও ৫ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ২২ পাম্প থাকলেও ১০টি পাম্প চলতে দেখা গেছে। পাম্প হাউসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাম প্রাসাদ বাছার জানান, ১২৮ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ১টি পাম্প বিকল হয়ে গেছে। ১২৮ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন আরও ৩টি ও ৫ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ১০টি পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে।তিনি আরও জানান, ৫১২ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প চারটি ৫১ বছরের পুরাতন হওয়ায় এর কার্যক্ষমতাও আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। ডিএনডির অভ্যন্তরের পানি নিষ্কাশন করতে আরও ২৪ দিন সময় লাগতে পারে। কারণ প্রতিদিন আমরা ২ ইঞ্চি করে পানি নিষ্কাশন করতে পারি।
×