ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চ্যালেঞ্জ দেখছে অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৯ আগস্ট ২০১৭

চ্যালেঞ্জ দেখছে অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘ঢাকা আমরা আসছি।’ অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে আসার বিমানে চড়ে স্পিনার নাথান লিয়নের সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করে এই ক্যাপশন দিয়েছেন অসি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। এখন পুরো অস্ট্রেলিয়া দলই আছে সেই ঢাকায়। যে ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে নামবে অস্ট্রেলিয়া। আর এ সিরিজে যে অস্ট্রেলিয়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে তা ভাল করেই বুঝে গেছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। শুক্রবার রাতে ঢাকায় পা রাখার আগে অস্ট্রেলিয়া ছাড়ার সময় স্মিথ সেই কথাই বলেন। জানান, ‘নিজেদের কন্ডিশনে তারা (বাংলাদেশ) ভীষণ শক্তিশালী দল। চ্যালেঞ্জিং সিরিজ হতে যাচ্ছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ওই কন্ডিশনে খেলতে পারাটা আমাদের জন্য দারুণ হবে। ভারতে কি শিখেছি সেটা বোঝা যাবে। খেলোয়াড়রা অনেক কিছু শিখেছে। আশাকরি সেগুলো কাজে লাগাতে পারব এবং সফল একটা সফরই হবে।’ বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া দুইদলই নিজেদের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজটি খেলেছে উপমহাদেশের মাটিতেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। দুইদলই আবার এ বছর মার্চের পর আর কোন টেস্ট খেলেনি। নিজেদের সর্বশেষ টেস্টে বাংলাদেশ যেখানে জিতেছে সেখানে অস্ট্রেলিয়া হেরেছে। উপমহাদেশ মানেই অসিদের জন্য যেন আতঙ্ক। বাংলাদেশ দলটি আবার এ মুহূর্তে নিজেদের মাটিতে শক্তিশালী দল। সর্বশেষ নিজেদের মাটিতে খেলা টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব ক্রিকেটে বার্তা দিয়ে দিয়েছে। শুধু নির্ধারিত ওভারের খেলায় নয় দীর্ঘ পরিসরের খেলাতেও শক্তিশালী হয়ে উঠছে দল। আর তাই অস্ট্রেলিয়ার ভয়টা এবার বেশি। ২০০৬ সালে দুইদল পরস্পরের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয়। এরপর দুইদলের মধ্যকার ১১ বছরে আর কোন টেস্ট ম্যাচ হয়নি। ২০০৬ সালের বাংলাদেশ দল আর এখনকার বাংলাদেশ দল যে অনেক ভিন্ন তা সবারই জানা। ভাল পরীক্ষাই দিতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। তা জানা স্মিথেরও। তাইতো সতর্ক অসি দল। তবে সফল হওয়ার আশা থাকাটাও স্বাভাবিক। স্মিথের তা আছেও। আশাটা তার বেড়েছে এ বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলাতে। ভারতের মাটিতে খেলে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা কাজে লাগাতে চান স্মিথ। সেই অভিজ্ঞতা দিয়েই বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে চান অসি অধিনায়ক। স্মিথ বলেন, ‘আশাকরি ছেলেরা অনেক শিখেছে (ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলে) এবং আমরা সেটি এই সফরে বয়ে নিতে পারব। আশাকরি সফর সফল হবে।’ বাংলাদেশের উইকেট স্পিননির্ভর হবে তা সবারই জানা। স্মিথও তা ভাল করেই জানেন। স্পিন দিয়েই গত বছর অক্টোবরে ইংল্যান্ডকে বধ করেছিল বাংলাদেশ। এবার অস্ট্রেলিয়ার পালা বলেই মনে হচ্ছে সবার। কিন্তু স্মিথরাও স্পিন আক্রমণটা একাদশে মজবুত করেই নামবেন। এ্যাস্টন এ্যাগার ও নাথান লিয়নের ওপরই তাই নির্ভরশীলই হয়ে উঠেছেন স্মিথ। বলেছেন, ‘আবহাওয়া যদি ভাল থাকে তাহলে আমরা এমন উইকেট পেতে যাচ্ছি যা স্পিন করবে। সেই ক্ষেত্রে বলতে দ্বিধা নেই আমরা দুই স্পিনার নিয়ে নামব।’ দুই স্পিনার নিয়ে নামা মানেই হচ্ছে এ্যাগার ও লিয়নকে নিয়ে নামা। যারা ডারউইনে প্রস্তুতি ম্যাচে চারটি করে উইকেট নিয়েছেন। যেখানকার উইকেটও ছিল সেøা। অনেকটা বাংলাদেশের উইকেটের মতোই। স্মিথ সবার আগে তাই বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জই দেখছেন। বলেছেন, ‘ওখানে (বাংলাদেশে) গিয়ে দেখতে হবে কন্ডিশন কেমন। চেষ্টা করতে হবে দ্রুত মানিয়ে নিতে। টেস্টে যেমন উইকেটে খেলব, প্রস্তুতি ম্যাচেও তেমন উইকেট পেলে দারুণ হবে।’ বোঝাই যাচ্ছে, ২৭ আগস্ট মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় টেস্টের আগে মঙ্গল ও বুধবার অনুষ্ঠেয় দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন স্মিথ। স্পিন আক্রমণের সঙ্গে ব্যাটিং আক্রমণের ছকও করে ফেলেছেন অসি অধিনায়ক। উসমান খাজাকে নিয়ে ভাবছেন স্মিথ। তা বুঝিয়েও দিয়েছেন, ‘এই গ্রীষ্মে উসমান (খাজা) আমাদের জন্য বড় খেলোয়াড় হতে যাচ্ছে। গত দুই বছরে অস্ট্রেলিয়ায় সে দুর্দান্ত খেলেছে। এবার খেলাটা তারজন্য ভাল হবে। অসাধারণ কিছু করতে সে উন্মুখ। আমার মনে হয় ও সুযোগটা কাজে লাগাতে পারবে।’ খাজা একাদশে খেললে তিন নম্বর পজিশনেই খেলবেন। তখন স্মিথ খেলবেন চার নম্বরে। আর যদি খাজা না খেলেন তাহলে তিনে খেলবেন স্মিথ। এরপর পিটার হ্যান্ডসকম্ব, পাঁচে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ছয়ে নামবেন হিলটন কার্টরাইট। সিরিজ খেলতে আটদিন আগেই বাংলাদেশে এসে পড়েছে অসিরা। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চায়। এরপর সিরিজে খেলতে নামতে চায়। সিরিজে যে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংটা ভাল করলে ফল আনা সম্ভব তা বুঝে গেছেন অসি কোচ ড্যারেন লেহম্যান। তাইতো তিনি বলেছেনও, ‘স্বাভাবিকভাবেই প্রথম ইনিংসের রানই মুখ্য হতে যাচ্ছে। আর আমাদের সেখানে নিয়ে যাওয়াটা হবে ব্যাটসম্যানদের কাজ। আমরা এটা ভারতে দেখেছি। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ৩৫০ রানের জায়গায় ৪৫০ ছাড়ানো রান করতে হবে। আর লম্বা সময় ব্যাট করতে হবে। ভারত সিরিজে প্রতিটি উইকেটই ছিল ভিন্নরকমের, সেখানে ওরা (ক্রিকেটাররা) যেভাবে মানিয়ে নিয়েছে আর কন্ডিশন অনুযায়ী পরিবর্তন করেছে তা আমার দৃষ্টিকোণ থেকে সত্যিই চমৎকার।’ সিরিজে চ্যালেঞ্জ দেখছে অস্ট্রেলিয়া। চ্যালেঞ্জ জয় করার পথও তাদের জানা আছে। এখন দেখা যাক এই চ্যালেঞ্জকে জয় করতে পারে কিনা অসিরা।
×