ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বোতলে বাতাস ভালই জমেছে ব্যবসা!

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ১৮ আগস্ট ২০১৭

বোতলে বাতাস  ভালই জমেছে ব্যবসা!

বায়ু দূষণ বাড়ছে, আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশুদ্ধ বাতাস বোতলে ভরে বিক্রির ধান্দা শুরু করেছেন কিছু চতুর ব্যবসায়ী। বড় বড় শহরে, স্যুভেনির হিসেবে বা হাসপাতালে বিক্রি হচ্ছে এই বাতাস। কেউ কেউ নিজেদের সাফল্যের নিজেরাই স্তম্ভিত! জার্মানির অন্যতম গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাক্স প্লাঙ্কের একটি পরিসংখ্যান বলছে, চীনে বায়ু দূষণের কারণে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। ফসলের ক্ষতি, বিমান ও গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মতো আরও কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে। বেজিং এবং সাংহাইয়ের মতো শহরে ধোঁয়াশা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, শহরের বাসিন্দারা এখন ২০ ডলার করে অক্সিজেন বোতল আমদানি করা শুরু করেছেন। ক্যানাডিয়ান উৎপাদনকারীরা বলছে এক লিটার অক্সিজেন দিয়ে কম-বেশি ১৫০ বার নিশ্বাস নেয়া যায়। নিজের সাফল্যে চমৎকৃত ক্যানাডার এডমন্টনের ভাইটালিটি এয়ারের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোজেস লাম। টেলিভিশন চ্যানেল সিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেন, পুরোটাই শুরু হয়েছিল একটা রসিকতার অংশ হিসেবে। কিন্তু প্রথম উৎপাদনের ১০০ বোতল যখন চার দিনেই শেষ হয়ে যায়, তখন তিনি বিষয়টাকে পেশাগত রূপ দেয়া শুরু করেন। ভাইটালিটি এয়ার এখন শুধু চীন না, ভারত, কোরীয়া এবং ভিয়েতনামেও ব্যবসা চালাচ্ছে। দুই সপ্তাহ পরপর ২০ জন কর্মী ক্যানাডার রকি মাউন্টেইন থেকে কয়েক লাখ লিটার বাতাস সংগ্রহ করেন। ‘‘বানফ ন্যাশনাল পার্ক থেকে সংগ্রহ করা বাতাস এখন বিক্রির শীর্ষে”, বলেন মোজেস লাম। বিশুদ্ধ বাতাস উৎপাদন বেশ জটিল। সংগৃহীত বাতাসের মাত্র ২০ ভাগ থাকে বিশুদ্ধ অক্সিজেন। ফলে বাতাসকে শোধন ও সঙ্কুচিত করে বোতলে ঢোকাতে হয়। মূল্যবান এই পণ্যের স্থায়িত্বও খুব কম। লাম বলছেন, এক থেকে দু’বছরের মধ্যে এই বোতল ব্যবহার করে ফেলা উচিত। সিডনির গ্রিন এ্যান্ড ক্লিন ২০১৫ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার বাতাস সরবরাহ করছে। ব্লু মাউন্টেন, গোল্ড কোস্ট, এমনকি গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের বাতাসও বিক্রি করে এই কোম্পানি। তবে অর্ডার করতে হবে ন্যূনতম চার হাজার বোতল। প্রতিবছরই লাখ লাখ ডলার আয় করছে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানির ক্রেতারা বেশিরভাগই আসছেন এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে। বায়ু দূষণ রোধে গাড়ি উৎপাদক এবং বিভিন্ন শহর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ কোন কাজে না আসায় জার্মানিকেও ভবিষ্যত বাজার হিসেবে দেখছে গ্রিন এ্যান্ড ক্লিন। ডিজেল সম্মেলন তেমনই এক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। মারক হিসেবে বোতল বায়ু কেউ কেউ স্মারক হিসেবে বাড়িতে সাজিয়ে রাখছেন এই বোতলজাত বায়ু। এখন পর্যন্ত ব্ল্যাক ফরেস্ট এবং কাক্কু ক্লকস আছে পছন্দের শীর্ষে। ঐতিহ্যের বিপরীতে গিয়ে এলকে ওট এ্যালুমিনিয়ামে ক্যানে করে বিক্রি করছেন ব্ল্যাক ফরেস্টের বাতাস। ২০০৬ সালে একই ধরনের বিষয় একবার চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন ‘বার্লিনের আসল বাতাস কিনতে পাওয়া যেত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্ক করে দিয়েছিল যে, এই বাতাসে ৩০ শতাংশ ভাসমান বস্তুকণা থাকতে পারে। কিন্তু তাও বন্ধ হয়নি উৎপাদন ও বিপণন। তবে এ নিয়ে যতই হাসিঠাট্টা হোক না কেন, পরিবেশ উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে এই বোতলজাত বাতাস। বাতাস বিশুদ্ধ করতে না পেরে বিজ্ঞানীরা এখন মানুষের অক্সিজেনের চাহিদা কিভাবে কমিয়ে ফেলা যায়, সে গবেষণা করছেন। বার্লিনের মাক্স ডেলব্র্যুক সেন্টার ফর মলিকিউলার মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন নেকেড মোল ইঁদুর তাদের মাটির তলার গর্তে খুব অল্প অক্সিজেন নিয়ে দিনের পর দিন বাঁচতে পারে। পরীক্ষাগারে এরা শেকড় থেকে ফ্রুকটোজ শুষে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা টিকে ছিল। যেখানে স্বাভাবিক নাড়ির স্বাভাবিক গতি মিনিটে ২০০ বার, সেখানে এই ইঁদুর নাড়ি মিনিটে ৫০-এ নামিয়ে আনতে পারে। এই আবিষ্কার কিভাবে মানুষের জীবনে কাজে লাগানো যায়, তা বের করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। এবং তারা সবাইকে আশ্বস্ত করছেন, গাড়ি শিল্পের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। সূত্র : ডয়েচে ভেলে
×