ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জুবায়ের বারি

বংশগত রোগ দূর করবে জিন এডিটিং

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ১৮ আগস্ট ২০১৭

বংশগত রোগ দূর করবে জিন এডিটিং

প্রথমবারের মতো মানব ভ্রƒণ থেকে একটি ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএ সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই ডিএনএটির কারণে প্রাণঘাতী একটি হৃদরোগ পরিবারের একজনের কাছ থেকে আরেকজনের শরীরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রবাহিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির ফলে এরকম বংশ পরম্পরায় চলে আসা ১০ হাজারেরও বেশি ত্রুটি বা স্বাস্থ্য সমস্যা সংশোধন করার দরজা খুলে গেল। বলা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ওষুধের ভবিষ্যৎ যেমন বদলে যেতে পারে, তেমনি প্রশ্ন উঠতে পারে এর নৈতিকতা নিয়েও। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীদের একটি দল মানব ভ্রƒণের ওপর এই গবেষণাটি চালায়। যে প্রক্রিয়ায় ভ্রƒণ থেকে ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএটি দূর করা হয়েছে এই এডিটিংয়ের প্রযুক্তিকে বলা হয় ক্রিসপার। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক এবং এর মাধ্যমে জেনেটিক ত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে সিসটিক ফিব্রোসিস থেকে শুরু করে স্তন ক্যান্সারের মতো রোগও প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা হাইপারট্রফিক কার্ডিওমাইওপ্যাথি নিয়ে কাজ করেছেন। এই হৃদরোগটি খুবই কমন, বহুলোকের শরীরে এটি দেখা যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রত্যেক পাঁচশো জনের মধ্যে একজন এই হৃদরোগে আক্রান্ত। এই রোগে হৃদযন্ত্র হঠাৎ করেই অচল হয়ে যেতে পারে। ডিএনএতে থাকা একক একটি জিনের ত্রুটির কারণে এই রোগ হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে তার সন্তানের শরীরে এই রোগটি যাওয়ার সম্ভাবনাও ৫০ শতাংশ। হাইপারট্রফিক কার্ডিওমাইওপ্যাথি রোগে আক্রান্ত একজন পুরুষের শুক্রাণু প্রথমে একজন নারীর সুস্থ ডিম্বাণুর ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। তারপর যখন ভ্রূণে পরিণত হতে থাকে তখনই ক্রিসপার প্রযুক্তির সাহায্যে সেখানকার জেনেটিক ত্রুটি সংশোধন করা হয়। দেখা গেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি সফল না হলেও ৭২ শতাংশ ভ্রূণকে এই ত্রুটি থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এই গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বিজ্ঞানী সুখরাত মিতালিপভ। তিনি বলেছেন, জিনের এই ত্রুটি একবার সংশোধন করার পর ত্রুটিমুক্ত সেই জিনটি পরবর্তী প্রজন্মের পর প্রজন্মের শরীরেও প্রবাহিত হবে। তিনি আরও বলেন, এই কৌশল ব্যবহার করে এখন পরিবারের এবং মানবদেহের বংশগত বহু রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। এখন বিজ্ঞানের এই অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখে পড়তে হবে সেটা হলো নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্ন। কথা হলো- ল্যাবরেটরিতে তৈরি একটি ভ্রূণের এরকম পরিবর্তন মানুষের করা উচিত কীনা। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর খুব একটা সোজাসাপ্টা নয়। কারণ শেষ পর্যন্ত যদি জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়, তাহলে জিনের এই পরিবর্তন নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না কেনো? ইতোমধ্যে অনেকেই এই গবেষণার সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, এর ফলে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে শিশু জন্ম দেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, যে ধনী ব্যক্তিরাই এই চিকিৎসা নিতে পারবেন। ফলে তারাই বংশগতভাবে একের পর এক নিরোগ ও সুস্থ প্রজন্ম জন্ম দিতে পারবে। অন্যদিকে, শুধু দরিদ্র মানুষেরাই বংশগত এসব অসুখে ভুগতে থাকবে। সূত্র : বিবিসি, লাইফ সায়েন্স
×