ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ বছরই ফ্র্যাঞ্চাইজি ভলিবল লীগ

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৮ আগস্ট ২০১৭

এ বছরই ফ্র্যাঞ্চাইজি ভলিবল লীগ

রুমেল খান ॥ একটা সময় ছিল শহর এবং গ্রামে বা মফস্বলে দারুণ জনপ্রিয় ছিল ফুটবল, ভলিবলসহ আরও অনেক খেলা। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সামগ্রিকভাবে সেসব খেলাধুলার চর্চাও যেমন কমে গেছে, তেমনি কমে গেছে জনপ্রিয়তাও। তবে শহর বাদ দিলে গ্রামে-গঞ্জে বা মফস্বলে এখনও কোন খেলার আয়োজন করা হলে সেটা দেখতে যে পরিমাণ দর্শক উপস্থিত হয় তা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক এবং কৌতূহল জাগানিয়া। ভলিবলের কথাই ধরা যাক। এই খেলাটিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভলিবলে অংশ নেয়া খেলোয়াড়রা। তাদের মতে- সঠিক ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য পাবে বাংলাদেশ। এদিকে ২০১৯ সালের এসএ গেমসকে সামনে রেখে দু’বছর মেয়াদী এক পরিকল্পনা নিয়েছে ভলিবল ফেডারেশন। গত বছর ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ভলিবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এশিয়ান সিনিয়র সেন্ট্রাল জোনের এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জয়ের পর বদলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে এদেশের ভলিবল। ফেডারেশন কর্তারা বলছেন এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে পৃষ্ঠপোষকরা। এতে করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে ফেডারেশন। ফলে ভলিবলের কার্যক্রম এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। খেলোয়াড়দের চাওয়া দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করা। ফলে ক্রিকেটের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য বয়ে আনতে পারবে বাংলাদেশের ভলিবল। খেলোয়াড়দের দাবির সঙ্গে একমত ফেডারেশনও। তাই খুব দ্রুত ইরানী কোচের অধীনে দুই বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু করার কথা জানিয়েছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। লম্বা এই ক্যাম্প পরিচালনার জন্য আর্থিক কোন সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি আতাউর রহমান। ক্যাম্প ছাড়াও বিদেশে প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজনের কথাও জানান তিনি। এদিকে পুরুষ দলের মতো দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চায় বাংলাদেশ মহিলা ভলিবল দল। ফলে এসএ গেমসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য আসবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় মহিলা ভলিবল দলের খেলোয়াড়রা। এদিকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে মহিলা জাতীয় দলের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালুর কথা জানান ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু। ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ মহিলা ভলিবলের কার্যক্রমও। তবে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে মাঠে খেলার সুযোগ সবকিছুতেই পিছিয়ে মহিলা ভলিবল দল। তার ওপর ঘরোয়া লীগগুলো হয় না নিয়মিত। তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মহিলা ভলিবল দলের সাফল্য নেই বললেই চলে। এই অবস্থা পাল্টাতে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চান মহিলা ভলিবল দলের খেলোয়াড়রা। তবে গত বছর আলাদাভাবে মহিলা উইং চালু করেছে ভলিবল ফেডারেশন। ফলে গত এক বছরে বেড়েছে মহিলা ভলিবলের কার্যক্রম। উঠে আসছে নতুন নতুন খেলোয়াড়। মহিলা ভলিবলের দুরবস্থার কথা স্বীকার করেছে ফেডারেশন। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের ভলিবল এগিয়ে নিতে নানামুখী পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে তারা। ২০১৯ সালের এসএ গেমসকে সামনে রেখে নতুন ইরানী কোচ ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও দেখভাল করা হবে বলে জানিয়েছে ফেডারেশন। গত বছরের ডিসেম্বরে ভলিবল ফেডারেশন ঘোষণা দিয়েছিল ২০১৭ সালের মার্চে এক স্মরণীয় অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছে তারা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ক্রিকেটের আদলে তারা দেশের ভলিবলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আয়োজন করবে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বাংলাদেশ ভলিবল লীগ। এতে অংশ নেবে আটটি বিভাগীয় দল। দেশের সেরা ও তারকা ভলিবল খেলোয়াড়রা অংশ নেবেন এতে। শুধু তাই নয় লীগের আকর্ষণ বাড়াতে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিদেশী ভলিবল খেলোয়াড়দেরও এই লীগে খেলার সুযোগ করে দেয়া হবে। দেশী-বিদেশী সব খেলোয়াড়ই পাবেন ঈর্ষণীয় অঙ্কের পারিশ্রমিক। এই আলোচিত ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ভলিবল লীগের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে ভারত তথা বলিউডের কিংবদন্তি-জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাহরুখ খানের। এই লীগ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের ভলিবলকে জনপ্রিয় করা, খেলোয়াড়ী দক্ষতা বৃদ্ধি করা, পর্যাপ্ত খেলোয়াড় তৈরি করা, খেলোয়াড়দের বাড়তি উপার্জনের ক্ষেত্র তৈরি করা। তবে মার্চ পেরিয়ে আরও মাস পাঁচেক চলে গেছে। সেই ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ভলিবল লীগের কোন খবরই নেই। এর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু বলেন, ‘অবশ্যই আমরা এই ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ভলিবল লীগের আয়োজন করব। তবে একটু দেরি হবে। আমাদের ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আজিমুল ইসলাম এই বিষয়টি দেখছেন। তিনি আবার আলিফ গ্রুপের চেয়ারম্যানও। আমাদের জাতীয় ভলিবল দলের ইরানী কোচের সহায়তায় তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভালমানের ভলিবল খেলোয়াড়দের খুঁজছেন এবং তাদের এই লীগে সম্পৃক্ত করানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আশাকরি এ বছরের মধ্যেই আমরা লীগটি আয়োজন করতে পারব।’ স্কুল ভলিবল চালুর ঘোষণাও দিয়েছিল ফেডারেশন। এ প্রসঙ্গে মিকুর ভাষ্য, ‘ইতোমধ্যে আমরা স্পন্সর পেয়ে গেছি। আশাকরি নবেম্বরেই স্কুল ভলিবল শুরু করতে পারব। দেশজুড়ে এই লীগ হবে কয়েকটি জোনে।’ মিকু আরও যোগ করেন মহানগরী ভলিবল এবং প্রথম থেকে তৃতীয় বিভাগ ভলিবলের খেলাও শুরু হবে অচিরেই। জেলা ভলিবল লীগ? ‘এর জন্যও আমরা স্পন্সর জোগাড় করে ফেলেছি। শীঘ্রই দিনক্ষণ জানিয়ে ঘোষণা দেয়া হবে। এছাড়া হ্যান্ডবল যেভাবে তৃণমূল পর্যায়ে দক্ষ খেলোয়াড় তৈরি করেছে, আমরাও সেটা করতে চাই।’ ভলিবল খেলা খেলতে খরচ খুবই কম। সরঞ্জাম এবং জায়গাও কম লাগে। অথচ অনেক সম্ভাবনাময় এই খেলাটি আজ সেভাবে আগের মতো জনপ্রিয় নয়। ফেডারেশন এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে বদ্ধপরিকর। এজন্য যা যা করতে হয় তাই করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এটা তাদের দায়িত্ব এবং চ্যালেঞ্জ। এখন দেখার বিষয় সেই দায়িত্ব কতটা পালন করতে পারে তারা।
×