ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার থেকে বিদ্যুত

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৮ আগস্ট ২০১৭

মিয়ানমার থেকে বিদ্যুত

ভারতের পর এবার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে বিদ্যুত আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর জন্য আন্তঃদেশীয় বিদ্যুত গ্রিড নির্মাণের প্রস্তাবও করা হয়েছে। দেশটির সঙ্গে সরাসরি গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনেরও সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, উদ্বৃত্ত গ্যাস-বিদ্যুতসহ সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং আহরণের ক্ষেত্রেও মিয়ানমার এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে। তদুপরি দেশটির সঙ্গে রয়েছে চীনের সরাসরি সংযোগ ও সহযোগিতা। উল্লেখ্য, সম্প্রতি চীনও বাংলাদেশে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। যা আসতে পারে নেপাল ও ভারতের ওপর দিয়ে স্থাপিত আন্তঃদেশীয় বিদ্যুত গ্রিডের মাধ্যমে। অন্যদিকে বাংলাদেশ আপাতত ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ক্রয় করছে ভারত থেকে। যে কোন দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত ও দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশ বর্তমানে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২৩ সাল নাগাদ মধ্যম এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তবে এর জন্য চাই দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, অবকাঠামোসহ শিল্প-কারখানা নির্মাণ, কর্মসংস্থান ও বহুমুখী শিল্পোৎপাদন। এ সবের জন্যই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতসহ জ্বালানি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। সরকার বঙ্গোপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি চট্টগ্রামের মহেশখালীতে নির্মাণ করতে যাচ্ছে বৃহত্তম এলএনজি টার্মিনাল, মূলত কাতার থেকে যা আমদানি করা হবে। তদুপরি গ্যাসের সঙ্কট মেটাতে প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে আমদানিসহ ইরান-তুর্কমেনিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ভারতের সঙ্গে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আপাতত একাধিক কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যা হবে পায়রা, রামপাল ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে। এর পাশাপাশি ২০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণেও হাত দিয়েছে সরকার। মূলত জ্বালানি খাত ও বিদ্যুত উৎপাদনে আগামী এক শ’ বছরকে সামনে রেখে দেশের এই দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার ২০২৪ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে এবং এর সুফল পাচ্ছে ৭০ শতাংশ মানুষ। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। এর পাশাপাশি সরকার দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে শিল্পোৎপাদনেও নতুন বিদ্যুত সংযোগ দিতে সমধিক আগ্রহী। এর জন্য নতুন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিনিয়োগ ও শিল্পে উৎপাদন বাড়ানোর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা। সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুত বিভাগ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে অনেকটাই সফল হবে বলে আশা করা যায়। সঙ্গত কারণেই সরকার যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের ওপর সবিশেষ জোর দিয়েছে, এটিও প্রশংসার যোগ্য। বর্তমান বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেশ কমলেও আমদানি করতে হয় বিধায় এটি নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল। সে তুলনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র ব্যয়সাশ্রয়ী, সহজলভ্য ও সুলভ। আপাতত আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে চাহিদা মেটানো হলেও বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ির কয়লা উত্তোলন করে ব্যবহার করা হলে উৎপাদন খরচ আরও কমে আসবে। পরিবেশের ওপর কিছু বিরূপ প্রভাব পড়লেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে কার্বন নিঃসরণও অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। এর পাশাপাশি গ্রীষ্মম-লীয় দেশ বিধায় পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য সৌরবিদ্যুত এবং বায়ুবিদ্যুতের একাধিক প্রকল্প ও পরিকল্পনা নিয়েও অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। এ সবই দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রভূত সহায়ক হবে।
×