স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বলেছেন, মোবাইল কোর্ট সংক্রান্ত মামলাটি যত দ্রুত শুনানি করবেন ততই আপনার সরকারের জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমরা আইন মোতাবেক বিচার করব। আইন বহির্ভূত কিছু করা হবে না। ‘আমি শুনলাম, আপনি নির্বাচন করছেন, তাই তো এলাকায় যান। আপনি তো প্রশাসনের সঙ্গে আপোস করে চলছেন।’ আমরা তো ইলিশের গন্ধ পাই না। এরপর আদালত ১০ অক্টোবর পর্যন্ত আপীলের শুনানি মুলতবি করেন। এদিকে খাদ্য সহায়ক (ফুড সাপ্লিমেন্ট) হিসেবে মালয়েশিয়া থেকে দেশান (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেডের আমদানি করা স্পিরুলিনা ট্যাবলেট ওষুধ নাকি সম্পূরক ফুড সাপ্লিমেন্ট তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। বুধবার আপীল বিভাগ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। অন্যদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ সার্টিফাইড (সত্যায়িত) কপি চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
মোবাইল কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিতের মেয়াদ ফের আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধির আদেশ দিয়েছেন আপীল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বলেন, বিচারকরা তো ইলিশের গন্ধ পায় না। ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রসঙ্গে বলেন, মোবাইল কোর্ট আইন সিআরপিসির (ফৌজদারি কার্যবিধি) কয়েকটি ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা আপনাকে (এ্যাটর্নি জেনারেল) এর একটি তালিকা দেব। এগুলো ঠিক হওয়া উচিত। আমরা আইনের অধীনেই বিচার করব। আইনের বাইরে যাব না।
গত ২১ মে এক আদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রসঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ২ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছিলেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও কয়েক দফা এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ মেয়াদ ছিল মঙ্গলবার পর্যন্ত। এ অবস্থায় বুধবার এ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি রাখার আবেদন জানান। তিনি বলেন, প্রস্তুতির জন্য এ সময় দরকার। আদালতে এ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, মোবাইল কোর্ট তো বেশকিছু ভাল কাজ করেছে। কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে তাদের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এখনও কারেন্ট জাল বন্ধ হয়নি।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা তো কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ করে আদেশ দিয়েছি। জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমার বাড়ি পদ্মার পাড়ে। এখনও নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। আদালতের আদেশের পর কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ হয়েছিল। জাটকা নিধন বন্ধ হওয়ায় দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তৎপর না হয় তাহলে আমাদের কী করার আছে? তিনি আরও বলেন, আমরা বিচারকরা তো ইলিশের গন্ধ পাই না। এ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘শুনেছি, আপনি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। আপনি তো প্রশাসনের সঙ্গে আপোস করে চলছেন। মনে রাখবেন, যত তাড়াতাড়ি এটা (মোবাইল কোর্ট নিয়ে শুনানি) করবেন ততই সরকারের লাভ।’
‘স্পিরুলিনা ট্যাবলেট’ ওষুধ কিনা তদন্তের নির্দেশ
খাদ্য সহায়ক (ফুড সাপ্লিমেন্ট) হিসেবে মালয়েশিয়া থেকে দেশান (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেডের আমদানি করা স্পিরুলিনা ট্যাবলেট ওষুধ নাকি সম্পূরক ফুড সাপ্লিমেন্ট তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের করা সময় আবেদন শুনানি শেষে বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপীল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে স্পিরুলিনা ট্যাবলেট ফুড সাপ্লিমেন্ট নাকি ওষুধ, এতে এ্যালকোহল রয়েছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে ওষুধ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া মামলার শুনানির জন্য আগামী ৩ অক্টোবর পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ সার্টিফাইড (সত্যায়িত) কপি চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বুধবার দুপুরে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল। এর আগে গত ১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপীল গত ৩ জুলাই খারিজ করে দেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ।