ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইনজীবীদের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচীতে ফজলে নূর তাপস

ষোড়শ সংশোধনী রায়ে প্রজাতন্ত্রকে বাদ দেয়া হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৭ আগস্ট ২০১৭

ষোড়শ সংশোধনী রায়ে প্রজাতন্ত্রকে বাদ দেয়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দ্বিতীয় দিনেও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করছে। দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচীকে ঘিরে সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গন ছিল উত্তপ্ত। জাতীয় সংসদের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের প্রেক্ষিতে সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে বুধবারও পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছে। আজও দুই সংগঠনের কর্মসূচী রয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের পাশাপাশি সারাদেশের বারগুলোতেও পালিত হচ্ছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী। কর্মসূচীতে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী পরিষদের সদস্য সচিব শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রজাতন্ত্রকে বাদ দেয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহার করার দাবিও জানান তিনি। একই দাবিতে আজও বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা দেন। বুধবার দুপুরে এ কর্মসূচী পালন করেন আইনজীবী নেতৃবৃন্দ। এ সময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবীর নেতৃবৃন্দ ষোড়শ সংশোধনীর বাতিলের রায় নিয়ে আইনজীবী সমিতির ব্যানারে বিএনপিকে সুপ্রীমকোর্টে কোন রাজনীতি করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। একই সঙ্গে দেশে বিচারিক নৈরাজ্যের চেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে তারা ষোড়শ সংশোধনীর বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে অপ্রাসঙ্গিক ও অসাংবিধানিক বক্তব্যগুলোকে বাদ দিতে আবারও দাবি জানান। অন্যদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বলেন, আওয়ামী লীগ চাপ প্রয়োগ করে রায় পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। বিএনপির আইনজীবীরা বলেন, আন্দোলন করে রায় পাল্টানো সম্ভব নয়। সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে ওবায়দুল কাদের কোন এখতিয়ার বলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত করলেন তা জাতি জানতে চায় বলে উল্লেখ করেন তারা। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে বিএনপির নেতারা সুপ্রীমকোর্টে রাজনীতি করছে। তিনি বলেন, সমিতির ব্যানারে বিএনপিকে সুপ্রীমকোর্টে কোন রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। একই দাবিতে আজ আবারও সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা করেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, এই রায় প্রকাশ করা হয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। যিনি আমাদের জাতির পিতা তাকে এই রায়ে ছোট করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক। আর এটিই হলো সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার (মৌলিক কাঠামো)। আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, আমরা আইনজীবী জনতা একত্রিত হয়ে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করব এই রায় বাতিল করুন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, যে রায় হয়েছে তা আইনের শাসন, আইনের নীতি এবং সংবিধানবিরোধী। কোনভাবেই এই রায় কার্যকর রায় নয়। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যে একটি প্রজাতন্ত্র সেটাকে দূরে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা করা হয়েছে এই রায়ে। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের একটি নীল নক্সা আমরা উপলব্ধি করছি। একটি বিচারিক নৈরাজ্যের অপচেষ্টা হচ্ছে। সুতরাং আমাদের এই আন্দোলন চলবে। এ সময় আরও বক্তব্য দেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, সমিতির বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ ওজি উল্লাহ, বারের সাবেক সম্পাদক এসএম মুনির, বারের সাবেক সম্পাদক এমপি মাহবুব আলী, মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, এ্যাডভোকেট সানজিদা খানম এমপি। এদিকে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে একই সময়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। প্রতিবাদ সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই রায়ের ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন ফিরে এসেছে। যারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, আন্দোলন করে এই রায় পাল্টানো সম্ভব নয়। আপনারা (আওয়ামী লীগ পন্থী আইনজীবীরা) সুপ্রীমকোর্টের সম্মান ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হিসেবে যেসব রায় দিয়েছেন তা বেআইনী ঘোষণার দাবি জানান তিনি। সভাপতির বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা আইনজীবীদের ঐক্য চেয়েছিলাম। কিন্তু আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা তাদের এজেন্ডা থেকে বের হতে পারেনি। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছেন। এজন্য তিনি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বিতর্কিত করছেন। সুপ্রীমকোর্ট বারের সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, সরকার সব কিছু একাকার হয়ে গেছে। মন্ত্রীদের লাগামহীন বক্তব্য বিচার বিভাগকে হেয় প্রতিপন্ন করছে। এই সরকারের এমন সব মন্ত্রী আছেন যারা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের পার্থক্য বোঝেন না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কোন এখতিয়ার বলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করলেন, জাতি তা জানতে চায়। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, তৈমুর আলম খন্দকার, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, কায়সার কামাল প্রমুখ।
×