ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে চাই

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৭ আগস্ট ২০১৭

চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে চাই

একটা সময় ছিল যখন বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল পরিবারের অনেক শিক্ষিত ছেলে মেয়ে অভিনয় করতে আসতেন। এর কয়েক দশক পরই বাংলা চলচ্চিত্র অশ্লীলতায় ডুবে যায়। সে সময় আগ্রহ থাকলেও অনেক পরিবারই চায়নি সন্তানরা সিনেমায় অভিনয় করুক। কিন্তু সময় বদলেছে। অভিনয় এখন আর শখের জায়গা নয়। বরং অভিনয়কে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা আবারও তাঁদের পেশা হিসেবে নিচ্ছেন। তাঁরা এর জন্য কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা ছাড়ছেন, কেউ আবার সাংবাদিকতা। ঠিক সেভাবেই এ পথে পা বাড়িয়ে ছিলেন বেসরকারী টিভি চ্যানেল বাংলা ভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা শবনম বুবলি। ক্যারিয়ার জীবনে প্রথমবারের মতো অভিনয় করা বুবলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর পড়াশোনা শেষ করেছেন। উপস্থাপনা ছেড়ে কেন ও কীভাবে নায়িকা হিসেবে অভিষেক বুবলীর, এমন কথা জানার আগ্রহ হাজার হাজার দর্শকের। আর এ প্রশ্নের উত্তরে বুবলী বলেন, ‘কয়েক বছর থেকেই অভিনয় করার বহু প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু কোনা কিছুর জন্য রাজি হইনি। একদিন আমার সঙ্গে ‘বসগিরি’ ছবির পরিচালক শামীম আহমেদ রনির দেখা হয়। উনি আমাকে শাকিব খানের প্রযোজনায় ‘প্রিয়ারে’ সিনেমায় অভিনয় করার প্রস্তাব দেন। গল্প পড়ে রাজি হয়ে যাই। এরপর ছবির জন্য প্রস্তুতিও শুরু“করি। কিন্তু কয়েকদিন পর রনি ভাই বলেন, ‘প্রিয়ারে’র আগে ‘বসগিরি’ ছবিটি নির্মাণ করতে চান তিনি। ‘বসগিরি’ ছবিটির গল্পও অনেক সুন্দর। এ্যাকশন ঘরানার এ ছবিটিতে আমি একজন চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। বাবা-মা প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সাপোর্ট করেছেন। এভাবেই যাত্রা।’ ফের দর্শক কি আপনাকে ছোটপর্দায় (সংবাদ পাঠিকা হিসেবে) পাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত আর ছোটপর্দায় দেখা যাবে না তাঁকে। শবনম বুবলী। গত বছর চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়েই সবাইকে চমকে দিয়েছেন। কারণ জীবনের প্রথম দুই ছবিতেই শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি। রাজু চৌধুরীর ‘শ্যুটার’ ও শামীম আহমেদ রনীর ‘বসগিরি’ নামের এ ছবি দুটি মুক্তির পরই বেশ প্রশংসা পান এই অভিনেত্রী। ছবি দুটি ভাল ব্যবসাও করে। এরপর আর পেছন ফেরা নয়। আবারও কোরবানির ঈদে নতুন দুটি ছবি নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হচ্ছেন তিনি। আবারও বুবলী, আবারও শাকিব খান। নতুন এই ছবি দুটি হচ্ছে শাহাদৎ হোসেন লিটন পরিচালিত ‘অহঙ্কার’ ও আবদুল মান্নানের ‘রংবাজ’। এরই মধ্যে ছবি দুটি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। কি নিয়ে ব্যস্ত এখন? জানতে চাইলে বুবলী আনন্দ কণ্ঠকে বলেন, আসন্ন ঈদে আমার দুটি ছবি রিলিজ হবে রংবাজ ও অহঙ্কার ছবি দুটির প্রচার প্রচারণা নিয়েই সকল ব্যস্ততা চলছে। ছবি দুটিতে কি চরিত্রে দেখা যাবে আপনাকে? দুটি ছবি দুই ধরনের। ছবি দুটি তে যে চরিত্রে দেখা যাবে তা জানার জন্য কষ্ট করে হলে গিয়ে সবাইকে ছবিটি দেখতে হবে। এ ব্যাপারে এখন কিছু বলতে চাই না। ছবিটি দেখলেই দর্শক বুঝতে পারবে। অনেক সুন্দর কিছু মনোরম লোকেশনে ছবিটির শূটিং হয়েছে। ছবির গল্পও সুন্দর। ইউনিটের সবাই দেশে ও দেশের বাইরে বেশ আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। বিশেষ করে সুইজারল্যান্ডের বরফের পাহাড়ে রোমান্টিক গান করেছি। ইতালির মিলানে একটি ও ভারতের সুন্দর কিছু লোকেশনে দুটি গান করেছি। এটা ১০০ ভাগ দেশীয় ছবি। শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের প্রথম লোকাল বাংলাদেশী প্রোডাকশন। তাদের সঙ্গে সহপ্রযোজনা করছে রূপরঙ চলচ্চিত্র। এ ছবিতে আরও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নতুন, সাদেক বাচ্চু, জাহিদ প্রমুখ। কোন ভারতের অভিনয়শিল্পী এখানে অভিনয় করেনি। শুধু গানের কোরিওগ্রাফি করেছে একটা ভারতীয় টিম। আর ‘অহঙ্কার’ ছবিটি নিয়ে কি বলবেন? জানতে চাইলে বুবলী আনন্দ কণ্ঠকে বলেন, এ ছবির গল্পটিও চমৎকার। এতে আমার চরিত্রটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। এমন রূপে দর্শক আমাকে প্রথম দেখবে। এজন্য ছবির পরিচালক ও প্রযোজককে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ তাদের কাস্টিংয়ের জন্যই আমি এমন চরিত্রে অভিনয় করতে পেরেছি। ‘অহঙ্কার’ ছবিতে নতুন বুবলীকে দেখবে দর্শক। আর ছবির শূটিং সেটে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেকের প্রশংসাও পেয়েছি। এমনকি সেন্সর বোর্ডের সিনিয়র সদস্যরাও ছবিটি দেখে প্রশংসা করেছেন। এ ছবিতে নতুন আপা, মিজু আহমেদ, সাদেক বাচ্চুসহ বেশ ক’জন সিনিয়রের সঙ্গে অভিনয় করেছি। সবাই খুব সহযোগিতা করেছেন। তাই এক কথায় বলতে গেলে দুটি ছবি নিয়েই আমি বেশ আশাবাদী। ‘রংবাজ’ ও ‘অহঙ্কারের’ ব্যাপারে কতটা আশাবাদী? আমি যেহেতু দুটি ছবিতেই কাজ করেছি দুটি ছবিতেই আমাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছি। নিঃসন্ধে অনেক আশাবাদী ছবি দুটি নিয়ে। আর হয়েছে কি যেহেতু ছবি দুটি একসঙ্গে আসছে অনেকেই হয়ত মনে করছে ছবি দুটি মিল থাকবে। কিন্তু একদমই না কোন মিল নেই। দর্শক দেখলেই বুঝতে পারবে। ছবির গল্পও যেমন ভিন্ন তেমন উপস্থাপনার ব্যাপারটা ও ভিন্ন। দুটি ছবির পরিচালক প্রযোজক শিল্পী সব কিছুতেই ভিন্নতা পাবে। ‘অহঙ্কার’ ছবির পরিচালক শাহাদৎ হোসেন লিটন ভাই অনেক অভিজ্ঞ একজন পরিচালক। সব কিছুই অনেক সুন্দর করে শেষ হয়েছে। ডাবিং থেকে শুরু করে সবকিছু। সবাই আমাকে খুব সাহায্য করেছে। যেমন আমাদের সুপারস্টার তার কথা বলাই লাগে না নিঃসন্ধে একজন বড় মাপের অভিনেতা উনি। তিনিও আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তেমনিই নতুন আপা, বাচ্চু ভাই অন্য যারা আছেন সবাই মিলে এত সুন্দর করে কাজটা শেষ হয়েছে। তারা অনেক অনেক বেশি আমাকে সহযোগিতা করেছেন। ছবিটির ট্রেলার গান দেখে সবাই আমাকে ফোন করে প্রশংসা করছেন যে অনেক ভাল কাজ করেছো বুবলী কাজটি অনেক ভাল হয়েছে। তেমনি ‘রংবাজের’ ক্ষেত্রেও। ‘রংবাজে’ পুরো টিমটি বসগিরি ছবির টিম। শামীম আহমেদ রনি ভাল একজন নির্মাতা ছবিটি তিনি শুরু করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে রনি ভাই বাদ পরে আবদুল মান্নান ভাই যোগ হয়েছেন আমাদের এই ছবিতে। তো রংবাজের কাহিনী রংবাজের উপস্থাপন পুরোই অহঙ্কারের চেয়ে অন্যরকম। শূটিংয়ে এমন কোন গঠনা হয়েছে যে এখন মনে পড়তেছে? হুম! সুইজারল্যান্ডে শূটিং করার সময় আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। যখন একটি রোমান্টিক গানের শূটিং করছিলাম একটা বরফের পাহাড়ে ওই পাহাড়ে দুইদিন গানটির শূটিং হয়। তো এত উঁচু বড় পাহাড় আবার এত বাতাস ভীষণ ঠা-া। সবকিছু মিলিয়ে এত ঠা-ার মধ্যে আমরা অনেক কষ্ট করে কাজটি করেছি। আসলে ওখানে না গেলে বোঝা যায় না। কষ্ট হলেও গানটি ভীষণ ভাল হয়েছে। পুরো টিমটা অনেক কষ্ট করেছে। আমাদের দেশীয়ও পোশাকে নিজস্ব মিউজিকে যখন গান হচ্ছে বিদেশীরা যখন দেখছে আমাদের দেশীয় পোশাকে শূটিং হচ্ছে মিউজিকে পাথক্য সব মিলিয়ে খুব উপভোগ করছে তারা। আমাদের সঙ্গে ছবি তুলছে আবার বার বার জানতে চেয়েছে এটা কোন দেশীও ছবি তোমরা কোথা থেকে এসেছো যখন আমরা বলছিলাম বাংলাদেশ থেকে এসেছি তখন আমরা নিজেদের কাছে গর্ববোধ করছি যে নিজেদের দেশকে উপস্থাপন করতে পেরেছি। ইন্ডিয়ায় একটা বৃষ্টির গানের শুট হয় সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজে শুট হয়েছে। ঠা-া লেগে খুব খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। গানটা ভীষণ ভাল হয়েছে। অনেক রোমান্টিক একটি গান দর্শক দেখতে পাবে। তো আশা করছি সবকিছু মিলিয়ে দুটি ছবিই আপনাদের খুব ভাল লাগবে। কোনটা এগিয়ে রাখবেন? (নিজের দুটি ছবির মধ্যে গত বছর বসগিরিকে এগিয়ে রেখেছিলেন। এ বছর কোনটাকে রাখবেন?) আসলে গতবার বসগিরি এগিয়ে রাখার কারণ ছিল বসগিরি ও শ্যুটার দুইটি দুই রকমের ছবি ছিল। আর বসগিরি এগিয়ে রাখার একটি কারণ এটা আমার জীবনের সাইনিং করা প্রথম ছবি। তাছাড়াও আরও কিছু কারণ ছিল এগিয়ে রাখার। ট্রেলার গান প্রকাশের পর দর্শক সাড়া কেমন পাচ্ছেন? দর্শক সাড়া তো ভীষণ ভাল পাচ্ছি। অহঙ্কারের ট্রেলার গান অনেক আগেই বের হয়েছে সবাই ভাল প্রশংসা করছে। অনেকে বলছে ছবি দেখার জন্য অপেক্ষায় আছি। তো আমি বলব আপনারা ছবিটি দেখেন আরও বেশি বেশি মন্তব্য করুন কেমন লাগলো আপনাদের। আর রংবাজ তো আরও বেশি বেশি সবার মুখে প্রথম থেকেই। আর একটা জিনিস বলতে চাই যে আমাদের দেশীও ছবিগুলো অনেক কষ্ট করে করতে হয়। খুব কষ্ট করে কাজগুলো করি। সবাই অনেক কষ্ট করে। প্রযোজক অনেক টাকা লগ্নি করে কিন্তু সেখানে যদি ছবি ট্রেলার পাইরেসি হয় তখন আর কষ্টের সীমা থাকে না। তখন এই জিনিসগুলো খুব খারাপ লাগে। আমাদের দেশের প্রতি কিছু কিছু মানুষের কিছুটা হলেও ভালবাসা থাকে তাহলে আমাদের সংস্কৃতি কে ভালবাসা উচিত। কোন দেশেই কিন্তু এ ধরনের পাইরেসির ব্যাপারটা নেই। দেখবেন তারা সবাই তাদের ছবিটি সাপোর্ট দিচ্ছেন হলে গিয়ে ছবিটি দেখছেন। দর্শকরা কিন্তু উৎসাহিত করছে নিজেদের সংস্কৃতিকে ভালবেসে। আমি বলতে চাই ছবি পাইরেসি কখানও সুখোকার না আমাদের জন্য শুভ না। তাই চাই হলে গিয়ে সবাই ছবি দেখুন।
×