সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা থেকে ॥ জেলার কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়কের ৯টি বেইলি সেতুর প্রত্যেকটিই নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এক বা দু’টি নয়, হাজারও জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখা হচ্ছে এ সেতুগুলো। আর বিকল্প সড়কের অভাবে এসব ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়েই প্রতিদিন শত শত বাস-ট্রাকসহ ভারি যানবাহন চলাচল করছে। ফলে যে কোন সময় এসব সেতুতে মারাত্মক দুর্ঘটনা বা প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়কে মোট ৯টি স্টিলের বেইলি সেতু রয়েছে। বাউসী, উড়াদিঘী, নিশ্চিন্তপুর, তেগুরিয়া, হিরাকান্দা, গোমাই, আশারানী, বাবনী, ও বাহাদুরকান্দা নামক স্থানে এ সেতুগুলো অবস্থিত। আশির দশকের প্রথম দিকে সওজ বিভাগ এসব সেতু নির্মাণ করে। পরবর্তীতে জোড়াতালি দেয়া ছাড়া আর এ গুলোর তেমন সংস্কার করা হয়নি। এ কারণে প্রত্যেকটি সেতুই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী ঝুঁকির মধ্যে আছে কংস নদের ওপর নির্মিত বাউসী সেতু ও গোমাই নদীর ওপর নির্মিত গোমাই সেতু। সেতু দু’টির বিভিন্ন অংশের পাটাতন সরে গেছে। যানবাহনের ঘর্ষণে পাটাতনের বিভিন্ন অংশ ক্ষয় হয়ে মাত্রাতিরিক্ত পাতলা ও ফুটো হয়ে গেছে। নাটবল্টুও নড়বড়ে হয়ে গেছে অনেক জায়গায়। বিভিন্ন সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্বল এবং ক্ষয় হয়ে যাওয়া স্থানগুলোতে পুরাতন বেইলির টুকরো কেটে জোড়া দিয়ে সেতুগুলো সচল রাখার চেষ্টা করছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাউসী সেতুর অন্তত ৮শ ৬২টি স্থানে এবং গোমাই সেতুর অন্তত ৫শ ৮৬টি স্থানে জোড়াতালি দেয়া হয়েছে। প্রায় একই রকম চিত্র দেখা গেছে অন্য ছয়টি সেতুতেও। স্থানীয়রা জানান, ভারী যানবাহন চলার সময় সেতুগুলো কাঁপতে থাকে। তখন ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাউসী ও আশারানী সেতু এরই মধ্যে কয়েকবার ট্রাকসহ ভেঙ্গে পড়েছে। সূত্র জানায়, এসব সেতুর জোড়াতালি দিতে গিয়ে সওজ বিভাগের (সওজ) প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা করে ব্যয় হচ্ছে।
এদিকে সওজ বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর ওপর দিয়ে সাত টনের বেশী মালামাল পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও চালকরা তা মানছে না। দেখা গেছে, ৩০-৩৫ টনের বেশী পণ্যও পরিবহন করা হচ্ছে। বিশেষ করে দুর্গাপুর-শ্যামগঞ্জ সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ার পর থেকে কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন শত শত ট্রাকের সাহায্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সোমেশ্বরী নদীর বালু পরিবহন করা হচ্ছে। সেতুগুলো ঝুঁকি বেড়ে যাবার এটিও একটি বড় কারণ। শুধু সেতু নয়, গোটা রাস্তাটিই এ কারণে খানাখন্দে ভরে গেছে। এদিকে সেতুগুলো অত্যন্ত সরু (ওয়ান ওয়ে) হওয়ার কারণে এক সঙ্গে দু’টি বাস ও ট্রাক চলাচল করতে পারে না। এ কারণে প্রায় সময় দুই পাশে অনেক যানবাহনের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
জানা গেছে, জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার কিছু এলাকার মানুষ প্রতিনিয়নত এ সড়ক দিয়ে নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সেতুগুলো ঝুঁিকপূর্ণ অবস্থার মধ্যে পড়ে থাকলেও এগুলোর স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা জানান, এসব স্থানে বেইলির পরিবর্তে পাকা সেতু নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নেত্রকোনা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়ক প্রশস্তকরণ এবং পুরানো ৯টিসহ মোট ১১টি সেতু ও ৯টি কালভার্ট নির্মাণের জন্য ২শ ৫৪ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরে একটি ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে।
শীঘ্র এটি প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হবে। আশা করা যায়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ডিপিপি অনুমোদিত হবে। তিনি আরও জানান, ডিপিপিতে বেইলির বদলে পাকা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: