ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল

বৃষ্টিতে বেহাল মাঠ, খেলা বাতিল

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১৭ আগস্ট ২০১৭

বৃষ্টিতে বেহাল মাঠ, খেলা বাতিল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ভাল খেলার জন্য চাই ভাল মাঠ। আর সেই মাঠই যদি খেলার উপযোগী না হয় তাহলে খেলোয়াড়দের মানের কোন উন্নতি হবে না। আর খেলা যদি বাতিলই হয়ে যায় তাহলে অবস্থা হবে আরও খারাপ। এমন খারাপ অবস্থাই চলছে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। বুধবার সাইফ পাওয়ার ব্যাটারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে চতুর্থ রাউন্ডের শেষ দুটি খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। যাতে বিকেল ৫টায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব এবং সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেডের। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে মাঠ খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ম্যাচ দুটি বাতিল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পেশাদার লীগ কমিটি। এই চার দলের ম্যাচ দুটি আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। যদিও বৃহস্পতিবার এমনিতেই সময়সূচী কোন খেলা ছিল না। চতুর্থ ও পঞ্চম রাউন্ডের মাঝের বিরতি ছিল ওইদিন। সোমবার পর্যন্ত লীগের ২২টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৮টি দল শেষ করেছে চার রাউন্ড। চট্টগ্রাম আবাহনী ৪ ম্যাচ জিতে ১২ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে। ১০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড। এছাড়া তৃতীয় থেকে দ্বাদশ অবস্থানে আছে যথাক্রমে রহমতগঞ্জ (৭), ঢাকা আবাহনী (৭), সাইফ স্পোর্টিং (৬), মুক্তিযোদ্ধা (৬), শেখ রাসেল (৪), মোহামেডান (৩), ফরাশগঞ্জ (৩), ব্রাদার্স (২), টিম বিজেএমসি (২) এবং আরামবাগ (০)। এবারের লীগ শুরুর পর থেকেই বৃষ্টির বাগড়া চলছিল। কাদা হয়ে এমন অবস্থা দাঁড়াতো মনে হতো এটা যেন মাঠ নয়, ধানক্ষেত। কখনও কখনও কোন ম্যাচে মনে হয়েছেÑ এটা ফুটবল হচ্ছে না, হচ্ছে ওয়াটার পোলো। বৃষ্টি না হলে বা রোদ উঠলেও শান্তি নেই। মাঠজুড়ে কাদাগুলো শুকিয়ে শক্ত এবং এবড়ো-থেবড়ো হয়ে যায়। ফলে বল লাফিয়ে ওঠায় ফুটবলারদের সমস্যা হয় বল নিয়ন্ত্রণে। খেলা শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে আকাশের ‘কান্না’ শুরু হলে যে ঢাকার অনেক রাস্তাঘাটই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। দুইঘণ্টার অমন ভারিবর্ষণে নিম্নমানের ড্রেনেজ সিস্টেমের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না এ নিয়ে সংশয় আগেও ছিল, আছে এখনও। অথচ কমলাপুরে আরেকটি স্টেডিয়াম থাকলেও সেখানে টার্ফে বাফুফে লীগের খেলাগুলো চালিয়ে নিতে পারছে না। কারণ স্পন্সরদের অনীহা। ফলে এক বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ওপর দিয়েই বয়ে যায় যত ঝড়। এখানে প্রিমিয়ার লীগ, ফেডারেশন কাপ, সুপার কাপ, স্বাধীনতা কাপ, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবলের ফাইনাল, অনুর্ধ-১৮ টুর্নামেন্ট হয়ে থাকে। তাছাড়া খেলা ছাড়াও এখানে হয়ে থাকে কনসার্টও। ফলে মাঠের বারোটা বেজে যায়। মাঠটির যে বেহাল দশা, এরজন্য অনায়াসেই দায়ী করা যায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে (এনএসসি)। কারণ মাঠটি তাদের। নিয়ম অনুযায়ী তাদেরই মাঠ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। কিন্তু সেটি তারা করে না। ফলে বাফুফেও মাঠটিকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছে না। কেননা এই স্টেডিয়ামে মাত্রাতিরিক্ত ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়া, পানি নিষ্কাশনে দুরবস্থার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই মাঠে পানি জমে যাওয়া, মাঠ অসমতল হওয়ায় বল নিয়ন্ত্রণে সমস্যা এবং শক্ত মাটিতে খেলে ফুটবলারদের ইনজুরিতে পড়া... এসব সমস্যা অনেক পুরনো। এ জন্যই বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ একবার বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, ‘এটা একটা রাবিশ ফিল্ড।’ একটা ম্যাচ শেষ হলে আরেকটা ম্যাচ শুরুর মাঝে মাঠকে যে বিশ্রাম দিতে হয় বা মাঠ খেলার উপযোগী করতে হলে যে সময় দরকার সেটা না দিয়েই এখানে টানা খেলা চলে এ মাঠে। বর্ষাকালে বৃষ্টির মধ্যে মাঠে খেলায় মাঠের অবস্থা হয়ে পড়ে শোচনীয়। মাঠের ঘাসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় চরমভাবে। নতুন ঘাস উঠতে, মাঠ খেলার উপযোগী করতে কমপক্ষে ২১ থেকে ২৮ দিন প্রয়োজন। অথচ এর আগেই এ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় একের পর এক ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট।
×