ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার আসছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১৭ আগস্ট ২০১৭

শুক্রবার আসছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে শুক্রবার অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দল আসছে বাংলাদেশে। রাত সাড়ে দশটায় বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার কথা রয়েছে অসি ক্রিকেট দলের। বাংলাদেশে এসে শনিবার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও কোচ ড্যারেন লেহম্যানের সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। একইদিন অনুশীলনও শুরু করার কথা রয়েছে স্মিথদের। তিনদিন অনুশীলন শেষে মঙ্গল ও বুধবার দুইদিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথাও রয়েছে। যদিও এ প্রস্তুতি ম্যাচটি ঠিকমতো খেলতে পারবে কিনা অসি দল তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ বৃষ্টি ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সিরিজের আগে এ একটি প্রস্তুতি ম্যাচই রয়েছে স্মিথদের। তা ব্যাঘাত ঘটলে বাংলাদেশে এসে ম্যাচ খেলার সঙ্গে অভ্যস্ত না হয়েই সিরিজে খেলতে নামতে হবে। আবার প্রস্তুতি ম্যাচটিও কোথায় হবে এখনও তার নিশ্চয়তা নেই। যদিও বলা হচ্ছে বৃষ্টি আর না হলে পূর্ব নির্ধারিত সূচী অনুযায়ীই ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে হবে প্রস্তুতি ম্যাচটি। কিন্তু বৃষ্টি হলে? সেই মাঠটিই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিকেএসপিতে খেলতে রাজি নয় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। ইউল্যাবের মাঠে চেষ্টা হচ্ছিল। তাতেও কি খেলবে অসিরা। আবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খেলানোর চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু ভ্রমণ করে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য সিলেট গিয়ে আবার ঢাকায় ফেরার জন্যও প্রস্তুত নয় অস্ট্রেলিয়া দল। তার মানে মাঠ নিয়ে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। প্রস্তুতি ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত হলে এরপর ২৭ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে নামবে অস্ট্রেলিয়া। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২৭ আগস্ট প্রথম টেস্ট শুরু হবে। এরপর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামবে অসিরা। এ সিরিজ খেলতে নামার আগে দুই মাস ধরে আর্থিক সমস্যার সমাধান করতেই ব্যস্ত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। সেই সমাধান হওয়ার পর ডারউইনে দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছেন তারা। বাংলাদেশে সেøা উইকেটকে আমলে নিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলেছেন। নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে খেলেছেন। একই রকম উইকেট বানিয়ে বাংলাদেশকে মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছেন। এখন বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামার অপেক্ষা। তারজন্য শুক্রবারই ঢাকায় পা রাখবে অসি দল। অস্ট্রেলিয়ার এই প্রস্তুতি ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্যও ভাল বার্তা দিয়েছে। অসিরা কি ভাবছে। কি আদায় করতে চাচ্ছে। কি নিয়ে তাদের পরিকল্পনা। তা বোঝা গেছে। এখন এ বার্তা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ভালভাবে বুঝে গেলেই হয়। অসিরা বুঝিয়ে দিয়েছে তারাও স্পিন মজবুত করেই খেলতে নামবে। এ্যাশটন এ্যাগার, নাথান লেয়নের মতো স্পিনাররা প্রস্তুতি ম্যাচে ৪ উইকেট করে নিয়েছেন। অধিনায়ক স্টিভ স্মিথও লেগ স্পিন করে ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন। স্পিনাররা প্রস্তুতি ম্যাচে চমক জাগিয়েছেন। বাংলাদেশের উইকেটও স্পিননির্ভরই হবে নিশ্চয়ই। ইংল্যান্ডকে গত বছর অক্টোবরে স্পিনেইতো বধ করেছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া তা ভাল করেই জানে। তাইতো স্পিন ভরসা আছে অস্ট্রেলিয়ারও। দুই দলেই স্পিনটা মজবুত থাকবে বোঝাই যাচ্ছে। স্পিনে-স্পিনে যুদ্ধ হবে। তাতে করে পেস আক্রমণ এবং ব্যাটিংয়ে যে দল ভাল করবে তাদেরই জেতার সম্ভাবনা উজ্জ্বল থাকবে। তাই বোঝা যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং নিয়ে সমস্যা থাকছে। ডেভিড ওয়ার্নার প্রস্তুতি ম্যাচে আঘাত পেয়েছেন। প্রস্তুতি ম্যাচের তৃতীয়দিন খেলতেই পারেননি। জস হ্যাজলউডের বাউন্সারে ঘাড়ে আঘাত পান ওয়ার্নার। তবে ওয়ার্নারের বাংলাদেশে আসা নিয়ে কোন সমস্যা নেই বলেই জানিয়েছেন ড্যারেন লেহম্যান, ‘সে ঠিক আছে। মাঠের চারিদিকে হেঁটেছে। সে সেরে উঠছে। আসলে এমন ব্যাপার হলে ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে আশাকরি সে ঠিক আছে।’ ওয়ার্নার আসলেও ঠিকমতো ব্যাট করতে পারবেন কিনা তা লেহম্যানের কথাতেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ওপেনিংয়ের অবস্থা দুর্দশাগ্রস্ত থাকলেও মিডলঅর্ডার অনেক শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার। প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব। স্বেচ্ছায় অবসর না নিলে অধিনায়ক স্মিথও সেঞ্চুরি পেতে পারতেন। গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল বড় স্কোর না করলেও দুই ইনিংসেই ৩০ রানের বেশি করেছেন। টেস্টে এমন চারটি ইনিংস হয়ে গেলেই তো রানের দেখা পেয়ে যাবে অসিরা। রানের দেখা পেলে তখন স্পিনাররা তো আছেনই, পেস আক্রমণও শক্তিশালী থাকায় বিপদ বাংলাদেশের সামনে আসতে পারে। ইংল্যান্ডের পেসাররাও বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছিলেন। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা মেহেদী হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলামের স্পিন ঘূর্ণির সামনেই কাত হয়েছেন। মিচেল স্টার্ক সিরিজে নেই। তবে জশ হ্যাজলউড, প্যাট কামিন্স, জ্যাকসন বার্ডরা ঠিকই আছেন। হ্যাজলউড তো ওয়ার্নারকে বাউন্সার দিয়ে যে মাঠ ছাড়তে বাধ্য করেছেন, তাতেই বোঝা যাচ্ছে পেসটা কত শক্তিশালী। কামিন্স তো আবার হুঙ্কারই দিয়ে রেখেছেন। বলেছেন, ‘ভারতে উইকেটগুলোয় একটু হলেও গতি ও বাউন্স ছিল। বাউন্সটাকে আমরা কাজে লাগাতে পেরেছি। বাংলাদেশে আমার মনে হয় আমাদের ভূমিকা হবে মূলত রান আটকানো। আর কখনও কখনও ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করা। বল যদি সুইং করে তাহলে অবশ্যই চেষ্টা করব ব্রেক থ্রু দিতে।’ বল পুরনো হলে সুইংতো পাবেই পেসাররা। আর তাই পেলে হ্যাজলউড, কামিন্সরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও প্রস্তুত। তারা অস্ট্রেলিয়াকে শুধু টেস্টে হারানোই নয়, হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্নও দেখছেন। যে স্বপ্নের কথা বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহের কণ্ঠ থেকেই বের হয়েছে। ১১ বছর পর দুই দলের মধ্যকার টেস্ট সিরিজ হবে। সেই টেস্ট সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার ভয় আছে। আতঙ্ক আছে। সেই ভয়, আতঙ্ক জয় করতে পারবে অসিরা? তা জয় করতেই শুক্রবার বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা।
×