ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পশুসম্পদ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৭ আগস্ট ২০১৭

পশুসম্পদ বাড়ছে

ঈদ-উল-আযহা আসন্ন। উৎসবটিকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে গবাদিপশুর হাট-বাজার শুরু হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে দেশের গবাদিপশুর চল্লিশ শতাংশের বেশি কোরবানি করা হয় ঈদ-উল-আযহায়। সেই কারণে এই উৎসবে গরুর চাহিদা বেড়ে যায় সর্বোচ্চ পরমাণে। এর পাশাপাশি ভেড়া-দুম্বা-খাসি-এমনকি উটও বাদ যায় না। গৌণ হলেও হাঁস-মুরগির চাহিদাও বেড়ে যায় বহুলাংশে। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দেশে হাঁস-মুরগি-গবাদিপশুর সঙ্কট রয়েছে অনেকাংশে। দেশে মাথাপিছু দুধ-ডিম মাংস-মাছ তথা প্রোটিনের ঘাটতি সর্বজনবিদিত। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বিশেষ করে গবাদিপশু, ডিম ও মুরগির বাচ্চা আমদানি করে মেটাতে হয় স্থানীয় চাহিদা। দুধের চাহিদা মেটাতে বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে গুঁড়া দুধ আমদানি করতে হয়। জাতীয়ভাবে তরল দুধের প্রাপ্যতাও সীমিত, দামও বেশি। আর দৈনন্দিন মাংসের চাহিদা মেটাতে প্রধানত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি ততোধিক চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আসে গবাদিপশু। পশুখাদ্যের দামও অত্যধিক। তবে বর্তমানে দেশটি থেকে গরু আমদানি প্রায় বন্ধ তথা সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে দেশীয় বাজারে মাংসের দাম বেড়েছে হু-হু করে। এমতাবস্থায় ভারত থেকে আইনী পথে মাংস আমদানির দাবি উঠেছে। আলাপ-আলোচনাও চলছে। মাংস ব্যবসায়ীরা ধর্মঘটও ডেকেছে বার বার। তবে দেশেও ছোট-বড় খামারিদের মাধ্যমে গবাদিপশুর উৎপাদন বেড়েছে। অন্তত কোরবানি গরুর অধিকাংশ স্থানীয়ভাবেই মেটানো সম্ভব বলে দাবি করেন স্থানীয় উৎপাদকরা। এরপরও ভারত ও মিয়ানমার থেকে কিছু গবাদিপশু আনার প্রক্রিয়া চলছে। এর প্রধান লক্ষ্য হলো কোরবানির সময় পশুর দাম যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। এর পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে প্রাপ্ত চামড়ার জন্য ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ এবং লবণের সরবরাহ অক্ষুণœ রাখা জরুরী ও অপরিহার্য, তদুপরি দুধ-ডিম-মাংসের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সুষ্ঠু ও সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি পরকল্পনা নিয়ে আমাদের আরও বহুদূর অগ্রসর হতে হবে। দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়; বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যে ভরপুর। সাড়ে ১২ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে জনসাধারণের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মিটিয়েও। জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে এই তথ্য প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনে এই সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেও। এসবই আধুনিক কৃষির অবদান। তবে বর্তমানে অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বেড়েছে চালের দাম। বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, ফল উৎপাদনে সপ্তম। আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে এই উৎপাদন আরও বাড়ানো যায়। এখন নজর দেয়া উচিত বিভিন্ন ও বহুমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং সংরক্ষণে। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। গমের ঘাটতি এখনও আছে। এর পাশাপাশি ডাল, তেলবীজ, ডিম, মাংস, দুধ, মাছ, মসলা উৎপাদনেও ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, শুধু ভাতে পেট ভরে বটে, তবে পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না। গত কয়েক বছরে শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদন বাড়লেও মাছ, দুধ-মাংস জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ প্রোটিনে বিপুল ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে। এদিকে সবিশেষ ও সমন্বিত দৃষ্টি দিতে হবে কৃষি, খাদ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে। সরকারের ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পটি অত্যন্ত বাস্তবধর্মী ও গণমুখী। মূলত, এর মাধ্যমেই সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা ও সুষম খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হতে পারে। এজন্য ব্যয়ও খুব বেশি হবে না। বরং চাই সুষ্ঠু, সমন্বিত ও বহুমুখী পরিকল্পনা। প্রয়োজনে আধুনিক সমবায় প্রথাও সংযুক্ত হতে পারে। সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক চাহিদা ও যোগাননির্ভর ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থাপনা ও বাজার ব্যবস্থা অপরিহার্য। সরকার সম্প্রতি দেশের সব খাদ্যগুদামকে অনলাইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রশংসনীয়। এর পাশাপাশি অত্যাবশ্যক অত্যাধুনিক খাদ্যগুদাম নির্মাণের পাশাপাশি মানসম্মত খাদ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাও জরুরী। তা হলেই বহুমুখী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নিশ্চিত হবে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা।
×