ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাশে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শেয়ার বাজেয়াফত করার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৭ আগস্ট ২০১৭

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শেয়ার বাজেয়াফত করার উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী কর্নেল (অব) সৈয়দ ফারুক রহমান ও কর্নেল (অব) আবদুর রশীদের নামে বেসরকারী জুবিলী ব্যাংকে থাকা ৮৫ হাজার শেয়ার বাজেয়াপ্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাশে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সম্প্রতি পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘জুবিলী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের কী পরিমাণ শেয়ার আছে, সেটা আমরা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করতে হলে কী উদ্যোগ নিতে হবে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেয়ার বাজেয়াপ্ত করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, সে ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সরেজমিন জুবিলী ব্যাংক পরিদর্শন শেষে এই সুপারিশ করেন। এতে বলা হয়, ‘জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড ব্যাংক কোম্পানিজ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬২-এর ২৭(২) ধারায় প্রতিষ্ঠিত একটি তফসিলী ব্যাংক। ফলে তফসিলী ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রদত্ত অনুমতিপত্রে বর্ণিত অব্যাহতিগুলো ব্যতিরেকে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর সব ধারা তাদের জন্য প্রযোজ্য।’ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান। সেটিরও অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে খুনীদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া আরেক ধাপ এগোলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবসা করে যাচ্ছে জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়েই তাদের কার্যক্রম চলছে। তবে ব্যাংকটি রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি (আরজেএসসি) নিবন্ধিত একটি কোম্পানি। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুরে একটি মাত্র কার্যালয়ে কার্যক্রম চলছে এ ব্যাংকের। দেশের সবচেয়ে পুরনো এই ব্যাংকটিতে বঙ্গবন্ধুর তিন খুনীর শেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী কর্নেল (অব) ফারুক ও কর্নেল (অব) রশীদের নামে ৮৫ হাজার শেয়ার ছাড়াও মেজর (অব) বজলুল হুদার নামেও বেশ কিছু শেয়ার থাকতে পারে। বর্তমানে ৪ লাখ শেয়ার নিয়ে সীমিত পরিসরে ব্যাংকটির কার্যক্রম চলছে। এর আগে ব্যাংকটিতে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শেয়ার থাকার বিষয়টি সরকারের যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদফতরও (আরজেএসসি) তদন্ত করেছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে খুনীদের শেয়ার বাজেয়াপ্তকরণের আইনগত মতামত চাওয়া হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে সাজা ঘোষণার পাশাপাশি খুনীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে জুবিলী ব্যাংকে থাকা দুই খুনী ফারুক ও রশীদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার জন্য ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার বাবুল হোসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরকে চিঠি দেন। পরে অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করা হলে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরকে দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, জুবিলী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর দুই খুনীর বিপুল পরিমাণ শেয়ার রয়েছে। এ থেকে প্রতি মাসে বড় অংকের মুনাফা পাচ্ছে তাদের পরিবার। যা দেশবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে এবং জঙ্গী অর্থায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে। জানা গেছে, ১৯৯১ সালের বার্ষিক মূলধনের বিপরীতে মেজর (অব) বজলুল হুদাকে জুবিলী ব্যাংকের পরিচালক দেখানো হয়। কিন্তু সে সময় তার কী পরিমাণ শেয়ার ছিল তা উল্লেখ নেই। ১৯৯১ সালের ২৩ জানুয়ারি জুবিলী ব্যাংকের দাখিল করা ১৯৯০ সালের বার্ষিক মূলধন বিবরণী অনুযায়ী, ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ছিল ১০ কোটি টাকা। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই খুনী কর্নেল (অব) ফারুক ও কর্নেল (অব) আব্দুর রশিদ পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিল। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নেয় জুবিলী ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি সমবায় ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হতো। এটি ১৯১৩ সালের ১৫ এপ্রিল ‘খোকসা জানিপুর জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ নামে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধ বা আরজেএসসিতে নিবন্ধিত হয়। নিবন্ধন নম্বর সি-২৩৭৩। ১৯৮৭ সালের ২৬ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে এটি ‘জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ নামে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে লাইসেন্স নেয়ার সময় মিয়া আবদুর রশীদ নামে এক ব্যক্তি এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় তার হাতে ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৫১ শতাংশ। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনিই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে ব্যারিস্টার এমবিআই মুন্সী ২০০২ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে তিনি আবারও এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান পুনর্নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনিই ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
×