ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শোক দিবসে সারাদেশে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৬ আগস্ট ২০১৭

শোক দিবসে সারাদেশে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সকল সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঙ্গলবার বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। এদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচী পালন করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সরকারী ছুটির দিনেও চিকিৎসাসেবা পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগী ও তাদের অভিভাবকরা। এদিন শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েই বিনামূল্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার রোগীকে চিকিৎসা পরামর্শ সেবা দেয়া হয়। সারাদেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন হাজার হাজার রোগী। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার সারাদেশের সকল সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালসহ জেলা, উপজেলা হাসপাতালে এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে এ আদেশ জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়, সরকারী ছুটি সত্ত্বেও সব ধরনের সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দরিদ্র ও দুস্থ মানুষকে চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসকদের উপস্থিত থাকতে হবে। গ্রাম পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা উপস্থিত থেকে সাধারণ মানুষকে সেবা প্রদান করবেন বলে আদেশে বলা হয়। সেই অনুযায়ী শনিবার প্রতিটি সরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তা বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা ও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। শনিবার ছুটির দিনেও দেশের হাজার হাজার মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পেয়েছে। এদিন কোন ফি নেয়া হয়নি। দেশের কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। জাতির জনকের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে পেরে মনে খুব শান্তি ও তৃপ্তি অনুভব করছি বলে জানান, অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে চার হাজারের বেশি রোগীকে সেবা প্রদান মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান হাসপাতালের বহির্বিভাগে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবার উদ্বোধন করেন। সকাল ৯টায় থেকে শুরু করে বেলা ২টা পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। মেডিসিন অনুষদের ২১টি বিভাগ, সার্জারি অনুষদের ১৪টি বিভাগ ও ডেন্টাল অনুষদের ৪টি বিভাগসহ মোট ৩৯টি বিভাগে ৪৬ জন অধ্যাপক, ৫৫ জন সহকারী অধ্যাপক, ২০ জন সহকারী অধ্যাপক, ৩ জন কনসালটেন্ট, ১৩ জন মেডিক্যাল অফিসার, ৫৪ জন আবাসিক চিকিৎসক, ৭৪ জন নার্স ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ পাঁচ শতাধিক জনবল ১১৭টি কক্ষে এ মহতী কার্যক্রমে সরাসরি অংশ নেন। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৭৮৮ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এর মধ্যে মেডিসিন অনুষদে ২৬৬০ জন, সার্জারি অনুষদে ১ হাজার ৯৩৮ জন এবং ডেন্টাল অনুষদে ১৯০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এসব কর্মসূচীতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডাঃ এএসএম জাকারিয়া স্বপন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডাঃ মোঃ অসাদুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আব্দুল্লাহ আল হারুন প্রমুখ। অন্য কর্মসূচীর মধ্যে ছিলÑ সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যালের সামনে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ জোহর কোরানখানি, দোয়া মাহফিল, তবারক বিতরণ ও দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে অন্য ধর্মাম্বলম্বীদের প্রার্থনা অনুষ্ঠান। এদিকে ‘রোগীর সেবায় হই আরও যতœবান ’ এ প্রতিপাদ ধারণ করে এবং নার্সিং সেবার মানোন্নয়ন ও সকল ওয়ার্ডকে মডেল ওয়ার্ডে উন্নীতকরণের দৃঢ় শপথ নিয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা ও স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ বিস্তারিত কর্মসূচীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ দিবসটি পালিত হয়েছে। ৪২তম জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকাল ৮টায় ধানম-ি ৩২ নম্বর রোডের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খানের নেতৃত্বে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীবৃন্দ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এরপর সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে সেবা প্রদান ঢাকা শিশু হাসপাতাল ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মনজুর হোসেনের ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে। এদিন সকাল ৮টা হতে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মনজুর হোসেনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং সহকারী অধ্যাপক ডাঃ রিজওয়ানুল আহসান ও রেজিস্ট্রার ডাঃ মোঃ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে সর্বস্তরের চিকিৎসক, কর্মকর্তা, সেবিকা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে সকাল ৯টা হতে বেলা ১২টা পর্যন্ত পর্যন্ত হাসপাতালে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালানো হয়। ঢাকা শিশু হাসপাতালের বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে প্রায় দুই শতাধিক শিশু ওই সেবা নেয়ার সুযোগ পায়। দেশের অন্যসব হাসপাতালের মতো রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেও মঙ্গলবার প্রায় ৬ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। এদিন বহির্বিভাগে রোগীদের আগমন ছিল বেশ লক্ষ্যণীয়। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তর কুমার বড়ুয়া জনকণ্ঠকে জানান, সকাল ৮টার আগেই দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা হাসপাতালে উপস্থিত হন। ছুটির দিনেও তাদের হাসিমুখে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। সেবা পেয়ে খুশি হয়েছেন রোগীরাও। এদিন রোগীদের মধ্যে খাবারও বিতরণ করা হয়েছে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগেও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আফজালুর রহমান। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেই এ ধরনের চিকিৎসাসেবার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। সকালে নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় সেবা প্রদান। দরিদ্র রোগীদের সংখ্যাই বেশি ছিল। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হবে এমন রোগীদের নির্ধারিত সময়ের পর হাসপাতালে আবার আসতে বলা হয়েছে। এ ধরনের সেবা পেয়ে রোগীরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক মোঃ আফজালুর রহমান। এভাবে মঙ্গলবার সারাদেশের সরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানসমূহে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
×