ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৬ আগস্ট ২০১৭

যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই/তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা/আমরা পেতাম এক জাতির পিতা’। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি মরেননি। তিনি বেঁচে আছেন কোটি কোটি বাঙালীর হৃদয়ে। মঙ্গলবার দেশব্যাপী পালিত হলো জাতীয় শোক দিবস। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বর্তমান প্রজন্মের জন্য ইতিহাস। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের মনে ‘জাতির পিতার আসন’টা একান্তই বঙ্গবন্ধুর। জাতীয় শোক দিবস প্রসঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে, এমন অভিব্যক্তি পাওয়া যায়। ‘মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতা মেয়েদের বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও, আর ঠিকানা দিয়ে দাও ধানম-ি ৩২ নম্বর’- এমন কথা বলতে পারে সে হচ্ছে মহাপুরুষ। এরকম মহাপুরুষ পৃথিবীতে আর জন্ম নেবে কি না আমার জানা নেই- এ কথা জনকণ্ঠকে বলেন ঢাকা কমার্স কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আদিবা চৌধুরী। আদিবা বলেন, ‘আমরা তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতা দেখিনি। তবে যুদ্ধে আহত কোন মুক্তিযোদ্ধা বা কোন বই অথবা স্বাধীনতার কোন চলচ্চিত্র দেখে অনুভব করেছি স্বাধীনতা কি জিনিস। কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে সে সময়কার মানুষকে। পৃথিবীর ইতিহাসে যে সমস্ত দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর এই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সেদিন যার নির্দেশে লাখো বাঙালী চব্বিশ বছর পাক হায়েনাদের নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় মৃত্যুকে অনিবার্য জেনেও নেতার আদেশকে শিরোধার্য মনে করে মুক্তির নেশায় মৃত্যুকে আপন করে নিয়েছিল। তিনি হলেন বাঙালী জাতির অহঙ্কার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি ছিলেন স্বাধীনতাকামী মানুষের এক জীবন্ত আদর্শ। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চাঁদনী হায়দার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনিই এই দেশের জন্মদাতা। তার জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। আর বাংলাদেশের জন্ম না হলে আমি আজ তাকে নিয়ে কথা বলতে পারতাম না।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সব বিতর্কের উর্ধে। কিন্তু তাকে নিয়েই যখন বিতর্ক হয়, তখন আমাদের তরুণ প্রজন্মের লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে। যার জন্য এই দেশ স্বাধীন হয়েছে তাকে নিয়ে কোন সমালোচনা আমরা তরুণরা মেনে নিতে পারব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র চার বছরের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকদের হাতেই স্বাধীনতার নায়ক নিহত হলেন। আমি সরকারের কাছে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে দাবি রাখছি বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের সবার বিচার হোক।’ একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না হক বলেন, ‘১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। সেই ডাকে প্রাণ বাজি রেখেছিল বাংলার সাধারণ মানুষ। যার ফল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছে আমাদের কাছে শুধু শোনা গল্প মাত্র। আমাদের নানা, নানি, দাদা, মামা বা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে সোনা কাহিনী। সেদিন আমাদের জন্ম হয়নি। দেখিনি স্বাধীনতা শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো। ‘ভাবতেও পারি না, মাত্র একজন লোক কী করে কোটি কোটি বাঙালীকে মোহিত করেছিলেন। হোক না তা আমাদের কাছে অন্যের মুখে শোনা গল্প। তবু তো বাস্তব। তাই উপলব্ধি করি কেবল একজন শেখ মুজিব কীভাবে সারাদেশের তরুণ-যুবাদের নাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন। নাড়া দিয়েছিলেন পুরো বাংলাকে। কিন্তু কতটুকু জানি আমরা তার কথা, কিংবা তার ভূমিকাকে কতটা স্মরণ করি?’
×