ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিক্ষোভে উত্তাল ভেনিজুয়েলা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৬ আগস্ট ২০১৭

বিক্ষোভে উত্তাল ভেনিজুয়েলা

ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো নিরঙ্কুশ ক্ষমতাসম্পন্ন গণপরিষদ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। তার এই উদ্যোগকে একনায়কত্ব আরোপের চেষ্টা হিসেবে দেখছে দেশের বিরোধী দলগুলো। তারা ডেমোক্র্যাটিক ইউনিটি নামে একটি কোয়ালিশন গঠন করে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করছে। মিটিং-মিছিল-ধর্মঘট করছে। ফলে মাদুরোর উদ্যোগে রক্তপাতের মধ্য দিয়ে শেষ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাদুরো জোর দিয়ে বলেছেন যে এই গণপরিষদই হচ্ছে শান্তি অর্জন, দেশবাসীর সামাজিক কল্যাণের ব্যবস্থা করা এবং দেশকে আমেরিকার পরিচালিত অর্থনৈতিক যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করার একমাত্র পথ। অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে যে মাদুরো কিউবান মডেল এ দেশে চাপিয়ে দিতে চান। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হিগো শ্যাভেজ ২০০৭ সালের পর ভেনিজুয়েলাকে রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রের পথে ঠেলে দেন। ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগে তিনি সহকর্মী ও প্রাক্তন বাসচালক মাদুরোকে তার উত্তরসূরি মনোনীত করেন। তবে শ্যাভেজের মতো জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক কুশলীপনা মাদুরোর নেই। মাদুরোর আমলে তেলের দর পড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আয়ে সঙ্কট দেখা দেয়। দেড় হাজারেরও বেশি ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ত হওয়ায় সেগুলো এখন সরকারের ঘাড়ে বোঝা হয়ে চেপে বসেছে। ভেনিজুয়েলায় এখন তেল ছাড়া তেমন কিছুই উৎপাদিত হয় না এবং বলতে গেলে সব কিছুই আমদানি করে। ঋণ পরিশোধে নাভিশ্বাস উঠছে ভেনিজুয়েলার। অর্থনীতি সংস্কার করার পরিবর্তে মাদুরো সেটাকে সঙ্কুচিত করেছেন। অর্থ যোগানোর জন্য স্রেফ নোট ছাপিয়ে চলেছেন। সঙ্গে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না বরং ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে। ২০১৩ সাল থেকে এ বছরের শেষ পর্যন্ত জিডিপি ৩৫ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পাবে। তার অর্থ দেশের বেশিরভাগ মানুষের জীবনে নেমে আসবে অভাব ও দৈন্য। পণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণের ফলে পণ্যের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। দোকানে পড়ে যাচ্ছে লম্বা লাইন। ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যে বিতরণের ব্যবস্থাটির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। কিউবার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে খাদ্যের রেশনিং করা হচ্ছে। ভেনিজুয়েলায় গত বছর প্রতি পাঁচ পরিবারের এক পরিবার ছিল দরিদ্র। তাদের আয় দিয়ে মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানো যেত না। ওষুধপত্র দুষ্প্রাপ্যই রয়ে গেছে। কারকাসের অনেক রাস্তায় নামলেই ভিক্ষুক এসে হাত বাড়িয়ে দেয়। এসব কিছুর কারণে সরকারের জনসমর্থন দারুণ হ্রাস পেয়েছে। ২০১৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাদুরো মাত্র ৫০.৬% ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিরোধী দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যগারিষ্ঠতা পায় যা সংবিধান পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট ছিল। নয়া পার্লামেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে সরকার পুরনো পার্লামেন্টকে কাজে লাগিয়ে সুপ্রীম কোর্টকে দিয়ে তিনজন নতুন পার্লামেন্ট সদস্যকে অপসারণ করে বিরোধী দলের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ক্ষুণœœ করে ফেলে। গত মার্চ মাসে সুপ্রীম কোর্ট এক ডিক্রি বলে পার্লামেন্টের সকল ক্ষমতা হরণ করে নেয়। পরে আংশিকভাবে প্রত্যাহার করা হলেও সেই ডিক্রিই সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিরোধী দলগুলো মাদুরোর গণতন্ত্রের নামে সংখ্যালঘুর একনায়কত্ব কায়েমের উদ্যোগের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করে তুলেছে। এবার পরিস্থিতি সামাল দেয়া মাদুরোর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। জনৈক পর্যবেক্ষকের মন্তব্য হলো দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ যেখানে মাদুরোর বিরুদ্ধে সেখানে তিনি দেশ চালাবেন কেমন করে? গত চার মাস ধরে বিরোধী দল প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছে। নগরীর কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভকারীরা যাতে না আসতে পারে তার জন্য কারাকাসের প্রধান মোটর পথগুলো আটকে দেয়া হয়েছে। ন্যাশনাল গার্ড কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে। মাঝে মাঝে গুলিও ছুড়ছে। কিন্তু তরুণ র‌্যাডিকেলরা সেগুলো অগ্রাহ্য করে এগোনোর চেষ্টা করছে। তারা এক ধরনের বর্ম তৈরি করে আড়াল থেকে পাথর ছুড়ছে। এমন দৃশ্য সারা দেশেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত এক শ’রও বেশি লোক নিহত হয়েছে। বেশকিছু বিরোধী রাজনীতিকসহ ৪শ’রও বেশি বিক্ষোভকারী এখন কারাগারে রয়েছে। তবে ভেনিজুয়েলার মানুষ এবার মাদুরোর শাসনের বিরুদ্ধে যেভাবে ফুঁসে উঠেছে তাতে তিনি শেষ রক্ষা পাবেন কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×