ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিন্দানাওয়ে আরেক মসুল

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৬ আগস্ট ২০১৭

 মিন্দানাওয়ে আরেক মসুল

ফিলিপিন্সের সেনাবাহিনী জিহাদী সংগঠনগুলোর একটি হিংসাশ্রয়ী কোয়ালিশনের কবল থেকে দক্ষিণের মারাবি নগরীর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে বিগত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ২ লাখ লোক অধ্যুষিত মুসলিম প্রধান এই নগরী পুনরুদ্ধারের লড়াই শুরু হয়। যখন সরকার জানতে পারে যে, কুখ্যাত অপহরণকারী চক্রের নেতা ইসনিলন হ্যাপিলন সেখানে আত্মগোপন করে আছে। অপহরণকারী চক্রটির নাম আবু সায়াফ। তিন বছর আগে হ্যাপিলন ইসলামিক স্টেট বা আইএসের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। বিনিময়ে আইএস তাকে তাদের খিলাফতের অধীন এই ফিলিপিনো প্রদেশে মিন্দানাওয়ের আমির বলে ঘোষণা করে। সেনাবাহিনী তাকে ধরতে গেলে হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই কোথা থেকে ৭শ’ যোদ্ধা বেবিয়ে এসে আইএসের নামে নগরীটি দখল করে নেয়। এই যোদ্ধাদের মধ্যে বিদেশীরাও আছে। এমনকি মসুলের লড়াইয়ে অংশ নেয়া লোকজনও আছে। শোনা যায় বিদেশী যোদ্ধারা হলো চেচনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের। সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে চার শতাধিক যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকিরা এক বর্গকিলোমিটারের মতো একটা বাণিজ্যিক জেলায় ঘাপটি মেরে আছে এবং সিভিলিয়ানদের মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে। ইতোমধ্যে কয়েক ডজন সিভিলিয়ান প্রাণ হারিয়েছে এবং এখনও ৩শ’র মতো সিভিলিয়ান আটকা পড়ে আছে যার জন্য সেনাবাহিনী খুব বেশি কিছু করতে পারছে না। সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির যে কম হয়েছে তা নয়। অভিযানে অংশ নেয়া ৩ হাজার সৈন্যের এই বাহিনীর মধ্যে প্রায় এক শ’ সৈন্য নিহত ও সাড়ে ৮শ’ আহত হয়েছে। নতুন নতুন সেনা ইউনিট শহরে আসছে। হেলিকপ্টার গানশিপের আনাগোনা, মেশিনগান ও স্নাইপারের গুলির আওয়াজ মাঝে মধ্যেই শোনা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট দুতার্তে সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে লড়াইয়ে দ্রুত বিজয় হবে। মোটেও তা হয়নি। ইতোমধ্যে হাজার হাজার লোক যুদ্ধ এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছে। তারা নোংড়া, অস্বাস্থ্যকর আশ্রয় শিবিরে ধুঁকছে। নগরীর বেশিরভাগ ইতোমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় এদের অনেকেরই আর ঘরে ফেরা হবে না। ফিলিপিন্সের দক্ষিণের মিন্দানাও দ্বীপটি ইসলামী সন্ত্রাসীদের আখড়া হিসেবে পরিচিত। দরিদ্র ও অশান্ত এই দ্বীপে অধিকাংশ ফিলপিনো মুসলিমের বাস। কিন্তু মারাবির এই লড়াই এমন প্রচ- যে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর শ[হর অঞ্চলে এমন লড়াই আর দেখা যায়নি। মারাবি হলো লানাও দেল সুর প্রদেশের রাজধানী। সেখানে মাউতে গ্রুপটি এক শক্তিশালী জঙ্গী সংগঠন। মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত মারাবির প্রাক্তন মেয়র সলিটারিও আলীর সঙ্গে এদের যোগাযোগ আছে। মাউতে গ্রুপের নেতা ওমর মাউতে ও তার ভাই আবদুল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যে পড়াশোনা করেছে। ইন্দোনেশিয়ার জিহাদীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল। গ্রুপটি মারাবি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রদের রিক্রুট করেছে। মারাবির লড়াইয়ে যত যোদ্ধা অংশ নিয়েছে তার অর্ধেকই এই গ্রুপের। হ্যাপিলন আহত হয়ে মারাবির বৃহত্তম মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে। ওমর মাউতে আগেই মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়। তবে আবদুল্লাহ মাউতে এখনও মারাবিতেই আছেন। সেনাবাহিনীর যেভাবে মারাবিকে ঘিরে রেখেছে তাতে এই লড়াই অচিরেই শেষ হবে। তবে যেটা আশঙ্কার কথা তা হলো নিহত জিহাদীরা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য রেখে যাবে তাদের এতিম সন্তানদের। এরাই এক সময় আরেক মারাবির জন্ম দেবে। মধ্যপ্রাচ্যে আইএস নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে এমন মনে করার কারণ নেই। তারা কৌশলগতভাবে এখন ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে। মারাবির ঘটনা তারই প্রমাণ। মাউতে গ্রুপ, আবু সায়াফ গ্রুপ এবং ছোটখাটো আরও দু’একটি ইসলামী জঙ্গী সংগঠন মিলে মাঝারি আকারের একটি নগরী কিভাবে দখল করতে এবং মাসের পর মাস নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে মারাবির ঘটনা তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×