ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাঁপাইয়ে সীমান্তপথে অবাধে আসছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৬ আগস্ট ২০১৭

চাঁপাইয়ে সীমান্তপথে অবাধে আসছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৮টি, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবাসহ সাত উপজেলার ১১টি, নওগাঁর ১৭টি সীমান্ত পথে ব্যাপক হারে আবারও অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রবেশের মাত্রা বেড়ে গেছে। এতে প্রতিরোধকারী সংস্থা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে ঈদ ও পরবর্তীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা খুবই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি বিজিবিপ্রধান চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাখের আলী সীমান্তে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, কোন অবৈধ অস্ত্র বা বিস্ফোরক বাংলাদেশে প্রবেশে করতে না পারে তার জন্য বিজিবি সদস্যদের কড়া নজরদারি বাড়াবার নির্দেশ দিয়েছেন। চাঁপাইয়ের এই সীমান্তে একাধিক করিডর থাকাসহ দেশের অন্যতম বৃহত্তর অপরাধ সংঘটিত ও মাদক এবং অস্ত্র চোরাচালানের বড় রুট হিসেবে চিহ্নিত বাখের আলী সীমান্ত। এখানকার চোরাকারবারিরা অধিকাংশ সময়ে প্রভাব বিস্তারসহ করিডরটিকে কব্জায় রেখে অস্ত্র, মাদক ও গরু চোরাচালানের নানান ধরনের কৌশল অবলম্বন করে প্রশাসনকে বিভ্রান্তির মধ্যে রাখে। এমনকি অধিকাংশ সময়ে সংলগ্ন একাধিক ইউনিয়নের প্রভাবশালীদের সঙ্গে গায়ে পড়ে ঝগড়া ফ্যাসাদ বাধিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে থাকে। এসব সীমান্ত অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকলে তাদের অপরাধমূলক কার্যকলাপ চালাতে সহায়ক শক্তির কাজ করে। অঢেল অর্থ ব্যয় করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই এরা যে কোন সমস্যা হলে কোটি টাকা ব্যয় করে তা মোকাবেলা করে। এদের সংখ্যা প্রায় ডজন খানেক। এসব প্রভাবশালীরা গ্রামের মানুষ হয়েও চোরাচালানের স্বার্থে শহর এলাকায় রিসোর্ট টাইপের বড় বড় পাকা ভবন করে রেখেছে। এদের ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশী- বিদেশী অতিথি আপ্যায়নে এসব বাসায় এনে রাখে। এমনকি চোরাচালান হয়ে আসা মাদক, অস্ত্র, বিস্ফোরক পর্যন্ত এসব বাসায় গুদামজাত করে রেখে সুবিধামতো সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে থাকে। এরা বড় ধরনের গভীর সখ্য রাখে একদিকে নানামুখী প্রশাসনের সঙ্গে পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সদস্যদের সঙ্গে। তাই এদের কাছে ঢাকা, কলকাতা, দিল্লী সব সময়ে মুঠোর মধ্যে রয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তারা ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করার একটা সুদূরপ্রসারী ছক এঁটেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এবার তারা নেপালের সঙ্গে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার আগাম অর্ডার পেয়েছে। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অর্ডারি অস্ত্র আসা শুরু হয়েছে। তার মধ্যে তিন সীমান্ত হতে ১১ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের হাঙ্গামী এলাকা থেকে বিদেশী পিস্তল ও গুলিসহ দুইজনকে আটক করেছে র‌্যাব। আটককৃতরাÑ শিবগঞ্জ উপজেলার তারাপুর গ্রামের আবদুল হকের ছেলে সাইরন আলী ও চাঁনপুর গ্রামের এরফান আলীর ছেলে আনারুল ইসলাম। একই সময়ে দুটি পিস্তল চারটি ম্যাগজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ আরজাদ আলী নামক অপর এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করে র‌্যাব। তিনটি পিস্তল, দশ রাউন্ড গুলি, চারটি ম্যাগজিন, একটি মোটরসাইকেলসহ একজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করে। ২৩ জুলাই রানীহাটির হলমোড় এলাকার একটি নির্জন আমবাগান থেকে দুটি বিদেশী পিস্তল ৪টি ম্যাগজিন, ১৪ রাউন্ড গুলিসহ একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী আটক হয়। সূত্র বলছে, এই বাগানে সপ্তাহজুড়ে অস্ত্রের ব্যবসা চলছে। এখানে অস্ত্রের হাট বসে। নয়ালাভাঙ্গা ইউপির কমলাকান্তপুর আড়াইপাড়ার কাটুর ছেলে সামায়ূনকে আটক করে র‌্যাবের সহকারী সুপার এনামুল করিম। সূত্র বলছে, এক সপ্তাহে কয়েক হাজার অস্ত্র বেচাকেনা হয়েছে এই বাগানে। সীমান্ত এলাকা আজমতপুর মোন্নাটোলা থেকে ১টি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ৭ রাউন্ড গুলিসহ ধরা পড়ে অস্ত্র ব্যবসায়ী লালচা- ও সামিম। এদের মাধ্যমে জুলাইয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে ৩১টি অস্ত্রের বড় বড় চালান গন্তব্যে পৌঁছেছে। জানা গেছে, মনাকষা ঠুটাপাড়া, মোল্লাপাড়াসহ ১১টি সীমান্তপথে বন্যার পানির মতো অস্ত্র ঢুকছে। দুর্লভপুর ইউনিয়নে রয়েছে একাধিক অস্ত্রের গুদাম। কিন্তু আইন প্রয়োগকারীদের একটি সংস্থা অস্ত্র চোরাকারবারিদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ায় তারা ধরার বদলে সহযোগিতা করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর লাগুয়া গোদাগাড়ী অঞ্চলে চিহ্নিত অস্ত্র চোরাকারবারি সংখ্যা শতাধিক। যারা সার্বক্ষণিক ভারতে অবস্থান নিয়ে বহনকারীদের মাধ্যমে অস্ত্র পাঠিয়ে থাকে। এরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। একইভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট সীমান্তে সমপরিমাণ অস্ত্র ব্যবসায়ী দারুণভাবে এ্যাকটিভ থাকলেও তারা রাতের অন্ধকারে মাঝেমধ্যে সীমান্ত অতিক্রম করে। তবে অস্ত্র চোরাচালানের প্রধান রুট এখন সোনামসজিদ স্থলবন্দর। এক শ্রেণীর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানি-রফতানিকারক অস্ত্র ও মাদকের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাদের ঘোষিত বৈধ পণ্যের আড়ালে এসব অবৈধ পণ্য প্রতিদিন প্রতি ট্রাকে ঢুকছে। এছাড়াও সোনামসজিদ বন্দরসংলগ্ন দারসবাড়ীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে একাধিক পায়ে চলা পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত অস্ত্র ঢুকছে। সেসব অস্ত্র আমদানিতে বৈধ পণ্যের আড়ালে চলে যাচ্ছে গন্তব্যে। মাঝেমধ্যে হুমকি দিয়ে থাকে ধর্মঘটের। এসব ভয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দর ছেড়ে যাওয়া ট্রাক পথিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইনফরমেশন থাকার পরেও অনেক সময়েই তল্লাশি না করে ছেড়ে দিচ্ছে। একইভাবে ছাড়ছে পশুবাহী ট্রাক।
×