ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

থাই-ভূমিতে এএফসি কাপে কৃষ্ণাদের জয়ের তৃষ্ণা

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৬ আগস্ট ২০১৭

থাই-ভূমিতে এএফসি কাপে কৃষ্ণাদের জয়ের তৃষ্ণা

রুমেল খান ॥ সবচেয়ে নির্দোষ বিনোদন কী? মানুষের দেহ-মনকে চাঙ্গা রাখে কোনটি? কিসের মাধ্যমে একটি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা যায় কিংবা একটি প্রায় অপরিচিত দেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তোলা যায়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কিন্তু একটাই। সেটি হচ্ছে খেলাধুলা। অনেকেই বলেন, যারা খেলাধুলা পছন্দ করে না তারা সম্পূর্ণ মানুষই নয়। এই খেলাধুলা যদি কেবল পুরুষরাই করে তাহলে এটা কি যৌক্তিক হবে? শুধু পুরুষরাই খেলবে, আর মহিলারা ঘরে বসে থাকবে কিংবা খেলাধুলা মেয়েদের জন্য নয়- এমনসব উদ্ভট ধ্যান-ধারণা পোষণ করার দিন আজ আর নেই। বলা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের কথা। মেয়েদের খেলাধুলারও দিন দিন প্রসার ঘটছে। তারা আজ ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে তাদের চেয়েও আশাতীত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে দেশের জন্য সাফল্য ও সম্মান বয়ে আনছে। ক্রিকেটের চেয়ে জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে পড়লেও এদেশে এখনও জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটি ফুটবল, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে। কয়েক বছর আগেও পুরুষ ফুটবলের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল মহিলা ফুটবল। কিন্তু এখন তার উল্টোটাই সত্য। পারিবারিক ও সামাজিক বাধা, উদ্যোগ ও অর্থের অভাব, পেশা হিসেবে ফুটবলকে বেছে নেয়ার অনিশ্চয়তাÑ সবমিলিয়ে মেয়েদের ফুটবল এতদিন সাঁতার কেটেছে স্রোতের প্রতিকূলেই। প্রগাঢ় অমানিশার পর আসে ঝলমলে আলোকিত দিবস। তেমনি এবার পুরুষ ফুটবলের পুনর্জাগরণের পাশাপাশি মহিলা ফুটবলেরও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সেই সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। সঠিক পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও ধারাবাহিতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। থাইল্যান্ডে এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্তপর্ব শুরু হচ্ছে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে। যেখানে ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দলগুলো। কৃষ্ণাদের মিশনটা শুরু হচ্ছে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে। টুর্নামেন্টে ভাল করার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তবে সেখানে যাওয়ার আগে নিজেদের দলকে আরও শাণিত-পরিণত করে নিতে চান ছোটন। থাইল্যান্ডে যাবার আগে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে তার দল। গত বছর সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে টুর্নামেন্টের চূড়ান্তপর্বে নাম লেখায় বাংলাদেশের মেয়েরা। মূলপর্বে ভাল করার লক্ষ্যে তখন থেকেই ঘরে বাইরে প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে কৃষ্ণাবাহিনী। প্রায় একবছর ধরে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করছে বাংলাদেশ দল। ইতোমধ্যে দুইবার জাপান এবং একবার করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর সফর করেছে বাংলাদেশের অনুর্ধ-১৬ নারী ফুটবলাররা। বিদেশে প্রস্তুতি ম্যাচগুলো মেয়েদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন ছোটন। এখন শুধু থাইল্যান্ডে নিজেদের মেলে ধরার অপেক্ষা। মূলপর্বে অংশ নিতে আগামী ২৭ আগস্ট ঢাকা ছাড়বে কৃষ্ণারা। তবে মেয়েরা থাইল্যান্ড পৌঁছাবে ৮ সেপ্টেম্বর। এর আগে মূলপর্বের শেষ প্রস্তুতিটা সারবে ভিয়েতনামে। মূলত থাইল্যান্ডের আবহাওয়ার সঙ্গে অনেকটা মিল আছে বলেই শেষ প্রস্তুতির জন্য ভিয়েতনামকে বেছে নিয়েছে বাফুফে। সরাসরি ২০ জনের দল চূড়ান্ত করে ভিয়েতনামে মেয়েদের পাঠাবে বাফুফে। এই ২০ জনই এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্তপর্বে খেলবে। ভিয়েতনামে ৪টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে কৃষ্ণারা। ১০ সেপ্টেম্বর লাওস ও স্বাগতিক থাইল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে চনবুড়িতে শুরু হবে মূলপর্ব। তবে লাল-সবুজদের থাইল্যান্ড মিশনটা শুরু হবে একদিন পর। অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বর থেকে। সেদিন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া। বাংলাদেশের পরের দুই ম্যাচ ১৪ সেপ্টেম্বর জাপান এবং ১৭ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। কোন সন্দেহ নেই, তিনটি দলই বাংলাদেশের চেয়ে শক্তিমত্তায় অনেক এগিয়ে। কিন্তু তাই বলে মাঠের লড়াই শুরুর আগেই মানসিকভাবে হেরে যেতে নারাজ ছোটনবাহিনী। এজন্য প্রস্তুতিতে কোন কমতি রাখার পক্ষে নয় তারা। বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবলের বেহাল দশা দেখে অনেকেই ফোড়ন কাটেন বা মজা করেন এই বলে, এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে খেলবে বাংলাদেশ। সেখানে সেরা তিনের মধ্যে থাকতে পারলেই উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিতব্য অনুর্ধ-১৭ বিশ্বকাপের দরজা খুলে যাবে। কৃষ্ণা-সানজিদা-তহুরারা মনে সেই স্বপ্ন লালন করেই তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ বাছাইপর্বের ‘সি’ গ্রুপ থেকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূলপর্বে ওঠে। বাছাইপর্বে ইরানকে ৩-০ গোলে, সিঙ্গাপুরকে ৫-০, কিরগিজস্তানকে ১০-০, চাইনিজ তাইপেকে ৪-২ এবং আরব আমিরাতকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল কৃষ্ণারা। মূলপর্বে লড়াইটা অবশ্য অনেক অগ্নিঝরা হবে বাংলাদেশের জন্য। কোচ ছোটন এই চ্যালেঞ্জ উৎরাতে এখন থেকেই পরিকল্পনা করে তার বাস্তবায়ন ঘটনোর চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন, ‘আমার বিশ্বাস আমরা ভাল করব। যারা কয়েক বছর আগে ফুটবলের মৌলিক জ্ঞানে শূন্য ছিল, তারা এখন আধুনিক ফুটবল খেলছে। কিছুদিন আগে জাপানে আমরা ভাল করেছি। সিঙ্গাপুরেও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। আশাকরি স্বপ্ন পূরণ হবে।’
×