ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ নিয়ে অভিমত ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতা সম্ভব’

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৬ আগস্ট ২০১৭

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতা সম্ভব’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হবে ২৭ আগস্ট। প্রথম টেস্ট শুরু হবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে। এ টেস্ট সিরিজে ক্রিকেটারদের চাপহীন খেলার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সেই সঙ্গে সিনিয়রদের দায়িত্ব নিয়ে খেলার পরামর্শও দিয়েছেন। তাহলেই ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতা সম্ভব’ বলে মনে করছেন মাশরাফি। সেই ২০০৯ সালের পর থেকেই নিজে টেস্ট খেলতে পারেন না। তবে এখন ভাল করেই বুঝেন, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা যদি নিজেদের কাজটা সঠিকভাবে করে যেতে পারেন তাহলে বিশ্বের যে কোন দলকে টেস্টে হারানো সম্ভব। গত বছর অক্টোবরে ইংল্যান্ডকে হারানোই তার প্রমাণ বহন করে। তবে এজন্য অস্ট্রেলিয়া দল সামনে বলে চাপ নেয়া যাবে না। চাপমুক্ত থেকে খেলতে হবে। ক্রিকেটের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মাশরাফি বলেছেন, ‘অযথা চাপ নেয়ার কোন কারণ দেখছি না। দলের প্রতিটি সদস্যকে কোন চাপ নিতে বলছি না। তবে ভাল একটা টেস্ট সিরিজ দেখার প্রত্যাশা করছি। অস্ট্রেলিয়া এ মুহূর্তে বিশ্বের সেরা দল। আর তারা নিজেদের শক্তিশালী স্কোয়াড নিয়েই বাংলাদেশে আসবে। তাদের দলে প্যাট কামিন্স, জস হ্যাজলউড আর নাথান লায়নের মতো দারুণ বোলার আছে। আমাদের জন্য মোটেই সিরিজটি সহজ হবে না। কিন্তু আমরা যদি এক লেভেল ওপরে খেলতে পারি তাহলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যা করেছি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও সেভাবে জেতা সম্ভব। তবে আবারও বলছি দলের সদস্যদের কোন চাপ নেয়ার প্রয়োজন নেই।’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর অক্টোবরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে জয়ের আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু জিততে পারেনি। তবে দ্বিতীয়টিতে ঠিকই জয় তুলে নেয়। ইংলিশদের হারানোর পর দেশের মাটিতে যে কোন দলকে টেস্টেও হারানো সম্ভব, সেই আত্মবিশ্বাস ক্রিকেটারদের মনে ভালভাবেই গড়ে ওঠে। এরপর শ্রীলঙ্কায় গিয়েও একটি টেস্ট জিতে বাংলাদেশ। এখন অস্ট্রেলিয়া দলটি যতই শক্তিশালী হোক বাংলাদেশের জয়ের মানসিকতা আছে। সেই মানসিকতা শক্ত থাকলেই জয় আসতে পারে। প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহেই যেমন অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্ন দেখছেন। ক্রিকেটাররা অসিদের টেস্টে হারানোর ভাবনা করছেন। সেইভাবেই চলছে প্রস্তুতিও। এখন মাশরাফিও জয়ের আশা করছেন। অবশ্য অসিদের মতো দলের বিপক্ষে জিততে হলে জুনিয়রদের চেয়েও সিনিয়রদের দায়িত্ব বেশি। বিশেষ করে মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েসের মতো ক্রিকেটারদের দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। তাহলে ফল নিজেদের পক্ষে আসবে। মাশরাফিও এমনটিই মনে করেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এরআগে চারটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। চারটিতেই খেলেছেন মাশরাফি। ২০০৬ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আর কোন টেস্ট খেলেনি বাংলাদেশ। এবার সব ক্রিকেটারই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলবেন। মাশরাফি টেস্ট খেলেন না বিধায় খেলতে পারবেন না। মাশরাফি বলেছেন, ‘আমাদের সেরা চার ব্যাটসম্যানের উইকেটকে মূল্যবান করে নিতে হবে। তাদের পারফর্মেন্স যেন তরুণদের জন্য অনুকরণীয় হয়। তামিম ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছে। সে আর ইমরুল ভাল শুরু এনে দিতে পারে। আমাদের দলে সাকিবের মতো স্পিনার আছে, মিরাজের মতো স্পিনার আছে। যদি একজন পেসার দুর্দান্ত একটি স্পেল করে ফেলতে পারে, পেসাররা যদি তিন-চার উইকেটের একটা ভাল স্পেল করতে পারে, আমাদের যথেষ্ট সুযোগই থাকবে। এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে অবশ্যই আমরা ভাল কিছু প্রত্যাশা করতে পারি।’ বাংলাদেশকে এখন মাশরাফি আগের চেয়ে শক্তিশালী দলও মনে করেন, ‘হার-জিতের চেয়েও বড় ব্যাপার হলো মানসিকতা। ড্রেসিংরুমে আমি যে মানসিকতার পরিবর্তন দেখছি, আগামী দুই বছরে এই দলটা অনেক ভাল কিছু অর্জন করবে।’ মাশরাফি মনে করেন, ‘এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো লড়াই করার মানসিকতা। যে কোন টেস্ট সিরিজের আগে দলের প্রতিটি সদস্য লড়াই করার কথা ভাবে। ম্যাচে ফল আনার চেষ্টা করে। যে কারণে এখন আমরা একটা ভাল ফলাফল আশা করতে পারি। আমি মনে করি, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে তাদের মানসিকতা নিয়ে। গত ১৫ বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় ছিল এই একটি জায়গাতেই। কারণ টেস্টে আমাদের ধৈর্য ছিল না। সেঞ্চুরি করার পর একজন ব্যাটসম্যানের চিন্তা করা উচিত স্কোরটাকে কিভাবে আরও বড় করা যায়, পরের দিন পর্যন্ত কিভাবে ইনিংসটাকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। সেঞ্চুরির পর কেন সেটিকে ডাবল সেঞ্চুরি করা যাবে না? এটা হয়তো প্রতিদিন হবে না। কিন্তু সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করাটাই আসল।’ মাশরাফি আরও যোগ করেন, ‘মনে করেন, কেউ ডাবল সেঞ্চুরি করলো, কিন্তু বাকিরা কেউ ভূমিকা রাখতে পারলো না। তারপরও কিন্তু ৪০০ বা ৪৫০ রানের স্কোর হয়ে যাচ্ছে। সে জন্যই সেট ব্যাটসম্যানদের নিজেদের ইনিংস বড় করা জরুরী। যে ৪০ রান করে আউট হচ্ছে তাকে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। ফিফটি করে খুশি থাকলেই হবে না।’ মাশরাফির কথায় স্পষ্ট, আত্মতুষ্টিতে কোনভাবেই ভোগা যাবে না। সবসময় আরও বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য থাকতে হবে। সঙ্গে চাপহীন খেলা খেলেই অস্ট্রেলিয়াকে হারানো সম্ভবও মনে করেন মাশরাফি।
×