ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অরক্ষিত জবি ক্যাম্পাস, ছাত্রদল-শিবিরের দখল নেয়ার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১৬ আগস্ট ২০১৭

অরক্ষিত জবি ক্যাম্পাস, ছাত্রদল-শিবিরের দখল নেয়ার আশঙ্কা

হাসান ইমাম সাগর ॥ রাজনৈতিক ক্ষেত্র, শিক্ষার মান, ছাত্রসংখ্যাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই দেশের ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে। এ বিশ্ববিদ্যালয় যে কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের দ্বিতীয় ইউনিট বলে গণ্য করা হয়। সম্প্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির পর প্রায় চার মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। নতুন কমিটি দেয়ার উদ্দেশ্যে এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে শিবির-ছাত্রদল যাতে কোন প্রকার প্রভাব বিস্তার করতে না পারে এজন্য কয়েকদিনের মধ্যে নতুন কমিটি দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়। কিন্তু ঘোষণা বাস্তবায়নে আজ পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে। এদিকে পদপ্রাপ্তির আশায় ৪-৫ জন কর্মী নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গ্রুপ, উপগ্রুপ, সঙ্গে রয়েছে অঞ্চলপ্রীতি। অধিকাংশ গ্রুপ লিডার মরিয়া হয়ে ছুটছেন বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক-বর্তমান নেতার বাসাবাড়ি এবং তার কর্মস্থলে। কেউ কেউ পদ-পদবি পেতে মন্ত্রীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানা গেছে। গত ৩০ মার্চ সম্মেলনের পর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে দেখা যায় না বললেই চলে। বর্তমান ছাত্রলীগের নড়বড়ে অবস্থান এবং নেতৃত্ব সঙ্কটে ক্যাম্পাস অনেকটা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। সূত্রমতে, সুযোগ বুঝে যে কোন মুহূর্তে ছাত্রদল-শিবিরের নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দখলে নিতে পারে বলে জানা গেছে। এজন্য নীরবে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা গোপনে মিটিং করছে বলে জানা গেছে। এর আগে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কয়েকবার সদলবলে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের ধাওয়ায় তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়। গোপন সূত্রে জানা গেছে, জবি ক্যাম্পাস দখল নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসের আশপাশে মেস নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা শুরু করেছে শিবির ও ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা। দল ভারি করতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে চালানো হচ্ছে গোপন ক্যাম্পেন। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অবস্থান না থাকার সুযোগে কর্মী সংগ্রহের কাজ চলছে পুরোদমে। বেগম খালেদার জন্মদিনে ছাত্রদলের উপহার জবি সাংবাদিক সমিতি জবিসাস নির্বাচনের পরের দিন সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বলা হয়, আমাদের নেত্রীর শুভ জন্মদিনের মাসে তার জন্য জবি ছাত্রদলের নতুন উপহার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। পৃথক একটি স্ট্যাটাসে বলা হয়, ছাত্রদলের মিডিয়া শাখার নেতাদের অভিনন্দন। নির্বাচনপূর্ববর্তী রাতে ঢাকা মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি তাহমিদ ভাইয়ের শেষ পরামর্শ কাজে লেগেছে। শোকের মাস আগস্টে আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির মনোনীত কিছু সাংবাদিক একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে জবি সাংবাদিক সমিতির (জবিসাস) কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করেছে বলে জানা গেছে। বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা জবি প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে এ কমিটি গঠন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শোকের মাস আগস্টের ১০ তারিখে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আগের দিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাবেক সভাপতি হামিদুর রহমান হামিদের বাসায় এ নির্বাচন উপলক্ষে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেই নির্ধারণ করা হয় জবিসাসের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের পদসহ বাকি পদে কোন্ কোন্ সাংবাদিক মনোনীত হবে এবং পরে তারাই লোক দেখানো একতরফা নির্বাচনে মনোনীত হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী ফল ঘোষণার পাঁচ মিনিটের মাথায় নবনির্বাচিতদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় ছাত্রদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক এবং সাধারণ সম্পাদক আসিফ রহমান বিপ্লব। আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত একটি প্রেসবার্তার মাধ্যমে এ শুভেচ্ছা জানানো হয়। এতে শোকের মাস আগস্টে জবিসাস নির্বাচনে অংশ নেয়নি ডেইলি অবজারভার, নিউ এজ, জনকণ্ঠ, ভোরের কাগজ, কালের কণ্ঠ, বর্তমান, নওরোজ পত্রিকার সাংবাদিকবৃন্দ। দীর্ঘদিন যাবত জবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি না দিতে পারা ছাত্রলীগের একটি ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করে সাবেক জবি ছাত্রলীগের সভাপতি এফএম শরিফুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকার সুযোগে ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীরা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে যে কোন ধরনের নাশকতা চালাতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা ক্যাম্পাসে মিছিল, মিটিং বা যে কোন কার্যক্রম করতে পারে।
×