ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কীর্তনখোলার ভাঙনে হুমকির মুখে জাহাজ নির্মাণ শিল্প

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৬ আগস্ট ২০১৭

কীর্তনখোলার ভাঙনে হুমকির মুখে জাহাজ নির্মাণ শিল্প

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ কীর্তনখোলা নদীর অব্যাহত ভাঙনে এবার হুমকির মুখে পড়েছে নগরীসংলগ্ন বেলতলা এলাকায় জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এ জন্য বেশ কয়েকটি শিপইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। একাধিক শিপইয়ার্ডে বিশ্বমানের জাহাজ নির্মাণ হলেও নদীর অব্যাহত ভাঙনে এসব শিপইয়ার্ড বিলীন হওয়ার হুমকিতে রয়েছে। এ শিল্পকে ঘিরে জীবিকানির্বাহ করছেন সহস্রাধিক শ্রমিক। শিপইয়ার্ডের মালিকরা বলেন, অব্যাহত নদী ভাঙনরোধ করা না গেলে বিলীন হয়ে যেতে পারে এখানকার শিপইয়ার্ডগুলো। যাতে বেশ প্রভাব পড়বে বরিশালের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ওপর। বেলতলায় সুরভী, সুন্দরবন, কীর্তনখোলা ও কে-কাদের শিপইয়ার্ডে একাধিক জাহাজ নির্মিত হলেও বর্তমানে সুরভী, সুন্দরবন ও কে-কাদের শিপইয়ার্ড অব্যাহত ভাঙনে বন্ধ রয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা থেকে শিপইয়ার্ড রক্ষায় ইতোমধ্যে কে-কাদের শিপ ইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী মাসুদ হাওলাদারের উদ্যোগে নদীতে ব্লকও ফেলা হয়েছে। শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, ভাঙন দূর করা গেলে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বরিশালের জাহাজ নির্মাণ শিল্প আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যেভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে এ শিল্প হুমকির মুখে রয়েছে। কে-কাদের শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপক দুলাল মিয়া জানান, চলতি বছর শিপইয়ার্ড রক্ষায় তারা আট লাখ টাকার ব্লক ফেলেছেন। তারপরেও ভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। বর্তমানে তাদের এ শিপইয়ার্ড জাহাজ নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন। এতে তাদের প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পরেছে। সূত্রমতে, কীর্তনখোলার তীরে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিশ্বমানের জাহাজ তৈরির এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল নৌযান মালিকদের নিজস্ব উদ্যোগে তা এখন ভাঙনের মুখে থমকে রয়েছে। সুরভী নেভিগেশন কোম্পানির পরিচালক রিয়াজুল কবির জানান, নিজ নিজ উদ্যোগে একাধিকবার ভাঙন প্রতিরোধে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। প্রচুর টাকা ব্যয় করে তারা ভাঙন প্রতিরোধে প্রচেষ্টা চালিয়েও কোন সুফল পাননি। তিনি আরও জানান, শিল্প সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর উদাসীনতা ও কালক্ষেপণের কারণেই তারা তীব্র ভাঙনের শিকার হচ্ছেন। যথাসময়ে বাঁধ নির্মাণ করা হলে শিপইয়ার্ডগুলো বিলীন হতো না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কীর্তনখোলা শিপইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস জানান, বরিশালে এখন অনেক দক্ষ কারিগর তৈরি হয়েছে। তাদের হাতে বিশ্বমানের জাহাজ তৈরি করা সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে নদীভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হলে এ শিল্পে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কীর্তনখোলা শিপইয়ার্ড ভূমির স্বত্বাধিকারী মোঃ শাজাহান জানান, জমি রক্ষায় চলতি বছর তিনি ১৫ লাখ টাকার ব্লক ও জিও ব্যাগ ব্যক্তিগতভাবে নদীতে ফেলেছেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। রাক্ষুসী কীর্তনখোলার অব্যাহত ভাঙনে সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চারটি শিপইয়ার্ডের মাত্র একটিতে জাহাজ নির্মাণকাজ চলছে। এসব শিপইয়ার্ডের মধ্যে কেবলমাত্র কীর্তনখোলা শিপইয়ার্ডের একটি জাহাজ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু সাইদ জানান, কীর্তনখোলার ভাঙন রক্ষায় ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেলাতলার সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকা ভাঙনরোধ প্রকল্প প্লানিং কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। কমিশন অনুমোদন করলেই প্রকল্পটি একনেকে যাবে। একনেকে ওই প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধান হবে। এ প্রকল্পে ওই এলাকার নদীশাসন ও ড্রেজিংয়ের বিষয়টিও রাখা হয়েছে।
×