ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নগদ অর্থ সঙ্কটে বেসরকারী খাতের ১৫ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৬ আগস্ট ২০১৭

নগদ অর্থ সঙ্কটে বেসরকারী খাতের ১৫ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির নিচে নামিয়ে আনায় ব্যাংকবিমুখ হয়ে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে ঝুঁকছে সাধারণ মানুষ। শুধু ২০১৬-১৭ অর্থবছরই সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার। ফলে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকিং খাতে আমানতপ্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। নগদ টাকার সঙ্কটে পড়েছে বেসরকারী খাতের অন্তত ১৫টি ব্যাংক। এদিকে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর আয় বেড়েছে ৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ১০ কোটি টাকাই এসেছে গ্রাহকদের আমানতের সুদ কমিয়ে। মূলত আমানতের সুদহার সর্বনিম্নে নামিয়ে এনেই গত বছর মুনাফা প্রবৃদ্ধি করেছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট-২০১৬ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ব্যাংকিং খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে ৮ লাখ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার আমানত থাকলেও গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৬ হাজার ১৯০ কোটি টাকায়। এক বছরে ব্যাংক আমানত ১ লাখ কোটি টাকার বেশি বাড়লেও এ বাবদ সুদ ব্যয় বাড়েনি ব্যাংকগুলোর। উল্টো ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি কমেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের মধ্যে চলতি আমানত ছিল ১ লাখ ৭৯ হাজার ১০০ কোটি, সঞ্চয়ী আমানত ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬০ কোটি ও মেয়াদী আমানত ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া আন্তঃব্যাংক আমানতের পরিমাণ ১৬ হাজার ৯৯০ কোটি ও অন্যান্য আমানত রয়েছে ৫৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এসব আমানত থেকে গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে সুদ বাবদ গতবছর ৬৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা আয় করেছে ব্যাংকগুলো। এর আগে ২০১৫ সালে ৬৩ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা সুদ আদায় করেছিল ব্যাংকগুলো। সে হিসেবে গত বছর ঋণের সুদ বাবদ ব্যাংকগুলোর আয় বেড়েছে ২৯০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৫ সালে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ বাবদ গ্রাহকদের পরিশোধ করেছিল ৪৯ হাজার ৭০ কোটি টাকা। আর গত বছর এ বাবদ পরিশোধ করেছে ৪৬ হাজার ৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৬ সালে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা কম দিয়েছে। সবমিলে গত বছর সুদ বাবদ ব্যাংকগুলোর নিট আয় বেড়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এদিকে আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির নিচে নামিয়ে আনায় ব্যাংকবিমুখ হয়ে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে ঝুঁকছে সাধারণ মানুষ। শুধু ২০১৬-১৭ অর্থবছরই সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার। ফলে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। নগদ টাকার সঙ্কটে পড়েছে বেসরকারী খাতের অন্তত ১৫টি ব্যাংক। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে মানবিক ব্যাংকিং করার আহ্বান জানিয়ে একটি বেসরকারী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংক কোন মহাজনী প্রতিষ্ঠান নয়। আমানতের সুদহার কমিয়ে কিছু ব্যাংক সাধারণ আমানতকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটি কখনও কোন ব্যাংকের নীতি হতে পারে না। জানা গেছে, গত বছর দেশের ব্যাংকগুলো মোট আয় করেছে ৪৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। একই সময়ে ২৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয় করেছে। এ হিসাবে গত বছর ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা দাঁড়ায় ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যদিও এর আগের বছর ব্যাংকগুলো ২১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফায় ছিল। পরিচালন মুনাফা থেকে ব্যাংকগুলো ২০১৬ সালে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ ও ৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা কর পরিশোধ করেছে। ফলে বছর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে নিট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৫ সালে ৭ হাজার ৯২০ কোটি টাকার নিট মুনাফায় ছিল দেশের ব্যাংকিং খাত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমানতের সুদ কমিয়ে মুনাফা বাড়ানোর মধ্যে ব্যাংকারদের কোন কৃতিত্ব নেই। ব্যাংকগুলো এখন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি না করে মুনাফা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। ফলে ঋণপ্রবাহ বাড়লেও দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ব্যাংকগুলোকে এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
×