ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আবির শাফী বিন্দু;###;কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ;###;বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বপ্ন যখন বুয়েট ॥ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৬ আগস্ট ২০১৭

স্বপ্ন যখন বুয়েট ॥ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

ছোটবেলায় এদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই স্বপ্ন দেখে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। আর বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্ন যারা দেখে, তাদের প্রায় শতভাগেরই স্বপ্ন থাকে বুয়েট। শিক্ষার্থীরা তাদের এই স্বপ্ন পূরণের জন্য সুযোগ পায় বুয়েট এর ভর্তি পরীক্ষায়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে অন্যতম কঠিন ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার এ বছরের তারিখ ১৪ অক্টোবর। যারা বুয়েট ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছ, তাদের হাতে এখন সময় ২ মাসেরও কম। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় মূলত তোমার গত ২ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনার মূল্যায়ন করা হবে। তাই এই দুই মাসে নিজের প্রস্তুতির খুব বেশী কিছু পরিবর্তনের সুযোগ খুবই কম। তবে যে বিষয়টি এই পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল পরীক্ষার হলে নির্ধারিত ৩ ঘন্টার জন্য তোমার ঊীধস ংঃৎধঃবমু। মূলত সেই বিষয়টাতেই কিছু দিকনির্দেশনা নিয়ে আমার আজকের এই লেখা। ® বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় সব মিলিয়ে ৬০০ মার্কের পরীক্ষা হয়। উচ্চমাধ্যমিক এর সিলেবাস এর উপর ভিত্তি করে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত এই তিন বিষয়ে ২০০ মার্ক করে বরাদ্দ থাকে। প্রতি বিষয়ে ২০ টি করে মোট ৬০ টি লিখিত প্রশ্ন থাকে। সময় ৩ ঘন্টা। প্রতি প্রশ্নের উত্তর উত্তরপত্রের নির্ধারিত স্থানে দিতে হয়। রাফ করার জন্য উত্তরপত্রের শেষে আলাদা জায়গা থাকে। তবে ঐখানে রাফ এর মূল্যায়ণ করা হয় না। ® বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার জন্য সিলেবাস তোমার উচ্চমাধ্যমিক এর সিলেবাসই। বাড়তি অনার্স বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর বই ঘাটার পরামর্শ অনেকে দিয়ে থাকে। তবে সেটায় সময় নষ্ট না করাই উত্তম। তবে কলেজ পর্যায়ে দেখা যায় সিলেবাস এর সব অংশ পড়ানো হয় না। সাজেশন ভিত্তিক কিছু অংশ পড়ে, অনেক টপিক বাদ দিয়েই এইচএসসি তে শীর্ষ ফলাফল করা সম্ভব। কিন্তু কলেজে বাদ দেওয়া অংশগুলোও বুয়েট পরীক্ষার সিলেবাস এর অংশ। আর এগুলো থেকে একটা ভাল পরিমানের প্রশ্ন থাকে। তাই আগে নিজের সিলেবাস এর প্রত্যেকটি অংশ সম্পর্কে ধারনা রাখা টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে তুমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কী কী বাড়তি পড়া লাগবে। ® আগেই বলেছি বুয়েট পরীক্ষায় তোমার টেক্সটবুকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আগে নিজের টেক্সটবুক শতভাগ আয়ত্তে আনার চেষ্টা করতে হবে। সিলেবাসের যে টপিকগুলোতে মনে হবে তোমার নিজের টেক্সটবুক পর্যাপ্ত না, সেক্ষেত্রে আগের সিলেবাসের বই এর সংশ্লিষ্ট টপিক গুলো দেখতে পারো। তবে তোমার সিলেবাসের বাইরের কোন টপিক দেখার দরকার নেই। তারপর বিগত বছরে বুয়েট সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নগুলো সমাধান করার চেষ্টা কর। যে গুলো নিজে পারবে না অন্য কারও কাছে সমাধান করে নাও। এর পরেও যদি তোমার হাতে বাড়তি সময় থাকে সেক্ষেত্রে বাড়তি পড়াশোনা করতে পার। ® বই এর সব টপিক অন্তত একটা লেভেল পর্যন্ত প্রস্তুতি ভাল রাখ। ৬০ টা প্রশ্নের সবগুলিই পারতে হবে এমন কথা নেই। নিকটবছর গুলোতে দেখা গেছে ৬০%+ নাম্বার পেলেই মোটামুটি ভাল পজিশন সহ বুয়েটে চান্স পাওয়া যায়। বেশ কিছু প্রশ্ন কঠিন থাকবেই। সেগুলোর সব যে তোমাকে পারতে হবে এমন কথা নেই। তবে অনেকেই একটা ভুল করে। আগে থেকেই কিছু টপিক বাদ দিয়ে যায় (ইন্টিগ্রেশন/বলবিদ্যা/ত্রিকোণমিতি)। কিন্তু এমন হতেই পারে তোমার প্রস্তুতি নেওয়ার অংশগুলো থেকেই কঠিন প্রশ্ন আসল আর বাদ দেওয়া জায়গা থেকে তুলনামূলক সহজ, সেক্ষেত্রে তোমার আফসোস এর সীমা থাকবে না। তাই বলি, শুরুতে সব টপিক এ একটা লেভেল পর্যন্ত প্রস্তুতি নাও। তারপর তোমার শক্তির জায়গা গুলোকে সমৃদ্ধ কর। ® সময় হিসাব যদি কর দেখবে প্রতি প্রশ্নের জন্য ৩ মিনিট। যেটা আসলেই কম। তোমাকে এই সময়টাকে ঠিকমত কাজে লাগাতে হবে। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকলে কিছু প্রশ্নের উত্তর ১ মিনিটেও করে ফেলা যায় আবার অনেক প্রশ্ন ৫-১০ মিনিট ও লাগতে পারে(এমন প্রশ্ন অনেক কম থাকে)। তাই শুরুর দিকে চেষ্টা কর যেগুলো অল্প সময়ে নিখুতভাবে করতে পারবে সেগুলোর সমাধান করে ফেলতে। প্রথম ১ ঘন্টায় যদি মোটামুটি নিজের দক্ষতার ২৫টি প্রশ্ন সমাধান করে ফেলতে পারো, তবুও পরের সময়টাতে একটু মাথা খাটানোর সময় পাবে। যেটা তোমাকে বাড়তি সুবিধা দেবে। তবে এজন্য বাড়তি তাড়াহুড়া করার কোন প্রয়োজন নেই। আর হ্যা, কোন প্রশ্ন না পারলে ওটা বাদ দিয়ে সরাসরি পরের প্রশ্নে চলে যাবে। ১ টা প্রশ্ন সমাধানের জন্যও যদি শুরুতে ১০ মিনিট বাড়তি সময় নষ্ট কর, তাহলে পরের পুরো সময় জুড়ে সেটা তোমার জন্য মানসিক চাপ হয়ে থাকবে। ® বুয়েট এ পার্সিয়াল মার্ক পাওয়া নিয়ে অনেক রকম কথা প্রচলিত আছে। পুরো প্রসেস ঠিক রেখে যদি ক্যালকুলেশন এর ভুলে উত্তর ভুল আসে। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১-২ নাম্বার কাটা যেতে পারে। কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক উত্তর লিখে খাতা ভরিয়ে এসে কিছু করুনার নাম্বার পাবে মনে করে থাকলে সেটা ভুল। একটা প্রশ্ন সমাধানের জন্য তুমি সঠিক নিয়মে যতটুকু পর্যন্ত করতে পারবে, সেটার জন্য ঠিকই আংশিক নম্বর পাবে। ® বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর নির্ধারিত স্থানে লিখতে হয়। কিছু কিছু প্রশ্নের জন্য তোমার কাছে নির্ধারিত জায়গাটুকু ছোট মনে হতে পারে। সেক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের কাজ হবে শুরুতেই জায়গাটাকে ২-৩ টি কলামে ভাগ করে লিখতে সেক্ষেত্রে সহজেই নির্ধারিত জায়গায় লেখা শেষ করতে পারবে। ® ক্যালকুলেটর এর সঠিক ব্যাবহার তোমাকে অনেক দূর এগিয়ে দিতে পারে। ভেক্টরের ক্রসগুণ, ম্যাট্রিক্সের যোগ বিয়োগ, গুণ , ইনভার্স ম্যাট্রিক্স বের করা, দ্বিঘাত-ত্রিঘাত-ত্রিচলক সমীকরণের সমাধান নির্নয় এসব কাজ ক্যালকুলেটরে অনেক কম সময়ে করে ফেলা যায়। সেগুলো শিখে রেখো। আর বুয়েট থেকে সার্কুলার এর সময় বৈধ ক্যালকুলেটরগুলোর একটা তালিকা দিয়ে দেয়। সেগুলো ব্যবহার করা নিয়ে পরীক্ষা হল এ কোন সমস্যা হবে না। একাধিক ক্যালকুলেটর রাখতে পার চাইলে। তবে একটা বিষয় একটু সতর্ক থেকো। অনেক সময় ডিগ্রী-রেডিয়ান এর অংক করার পর ক্যালকুলেটরের মুড চেঞ্জ না করলে, পরের সব অংকে উত্তর ভুল আসবে। সেটা সম্পর্কে যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিৎ। ® সামনের সময়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটা দিন নষ্ট হওয়া মানেও অনেক বড় ক্ষতি। তাই, এই সময় শরীরকে সুস্থ্য রাখার জন্য খুব সতর্ক থাকতে হবে। আর পড়াশুনার চাপে খাওয়া বা ঘুম এ অনিয়ম করলে চলবে না। ঢাকা শহরে যারা আছ, চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে একটু বাড়তি সতর্ক থাকবে। আর পরীক্ষার আগের রাতে ৬-৮ ঘন্টার একটা ঘুম অনেক দরকারী। আগের দিন বেশী রাত জেগে পড়ার কোন দরকার নাই। সকালে ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করে বাসা থেকে বের হবে। আর পরীক্ষা কেন্দ্রে আগেভাগে পৌছে প্রয়োজনে টয়লেট থেকে ঘুরে আসতে পারো। তাহলে পরীক্ষার মাঝের সময়টা ঠিকভাবে পার করতে পারবে। ® পরীক্ষা হলে মাথা ঠান্ডা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমন হতে পারে প্রথম পৃষ্ঠার ৩ টা প্রশ্নের একটাও তুমি পারো না, তুমি এটা নিয়ে টেনশন এ পুরা পরীক্ষায় নার্ভাস হয়ে গেলে। এমনও হতে পারে পরের ৫৭ টা প্রশ্নই তুমি পারতে। তাই সকল পরিস্থিতিতেই মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। ® আগেও বলেছি সামনের এই বাকি সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পড়া, বিশ্রাম, খাওয়া, ঘুম এর বাইরের অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট কোরোনা। মোবাইল ফোন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে একবার বসলেই টানা কয়েক ঘন্টা সময় চলে যেতে পারে। বন্ধুদের সাথে অপ্রয়োজনীয় আড্ডা সহ যে কোন বাইরের কাজেই সময় কম দেয়ার চেষ্টা কর। ® বলা হয় বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করার জন্য ৩ টি কাজ খুব দরকার। 1) Practice. 2) Practice 3) Practice. এই সময়টাতে প্র্যাকটিস এর কোন বিকল্প নেই। জানা জিনিস গুলোও বেশী বেশী প্র্যাকটিস কর। ফলে সেগুলোতে পরীক্ষার হল এ সময় কম লাগবে। সকল পরীক্ষার্থীর জন্য শুভ কামনা। প্রত্যাশা আর যোগ্যতার সমন্বয়ে নিজের সেরা ফলটি পাও এই শুভকামনা রইল।
×