ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজ বেষ্টনী

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৬ আগস্ট ২০১৭

সবুজ বেষ্টনী

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে সবুজ বনায়ন তৈরি করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এই সভা অনুষ্ঠিত হয় ৬ আগস্ট। ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৭’ -এর খসড়া এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ুর ওপর গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনার খসড়াও অনুমোদন করা হয়। জাতীয় পরিবেশ কমিটির এটা চতুর্থ সভা। তৃতীয় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। প্রায় আট বছর এই সভার কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রতার আবর্তে আটকে ছিল। সভার উল্লেখযোগ্য দিক ছিল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় রাখা। সভার সিদ্ধান্ত থেকে উঠে আসে মোংলা বন্দর এলাকায় পরিবেশঘনিষ্ঠ শিল্প-কারখানা নির্মাণ করা। সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবগুলো বাংলাদেশের ওপর এসে পড়ছে। এইসব নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উপকূলজুড়ে ঘন সবুজের সম্প্রসারিত বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। কৃষি জমিকে যথার্থ সংরক্ষণের আওতায় এনে তাকে উৎপাদনবান্ধব করে তোলাও অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া শিল্প এলাকায় জলাধার নির্মাণ করাও পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয়। নদীতে যাতে কলকারখানার বর্জ্য গিয়ে পানি নষ্ট করতে না পারে সেদিকেও বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এজন্য শিল্প-কারখানার কাছে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এসব ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। প্রসঙ্গক্রমে উঠে আসে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণকেন্দ্র সুন্দরবনকে আর পরিবেশবান্ধব এবং সুরক্ষা করতে বিভিন্ন রকমের পরামর্শ আর সুপারিশ। ইতোমধ্যে সুন্দরবনের ব্যাপারে নেয়া যাবতীয় সিদ্ধান্তের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপরও সভায় বক্তারা আলোচনা করেন। এছাড়া জাতীয় পরিবেশ কমিটির তৃতীয় সভা যা ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় সে ব্যাপারেও সভায় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সে সভায় ঢাকার চারপাশের নদ-নদীকে বাঁচাতে ট্যানারি স্থানান্তর, বর্জ্য শোধনাগর নির্মাণসহ ২৭টি সুপারিশ নেয়া হয়েছিল। প্রতি বছর ১টি করে সভা আয়োজন করার কথা থাকলেও নানা কারণে তা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার উপদেশও আসে সভা থেকে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পরিবেশ কমিটিতে অনেক মন্ত্রী এবং সচিব সদস্য হিসেবে আছেন। তাদের অনেকেই এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী, পানিসম্পদমন্ত্রী, নৌমন্ত্রী সভায় উপস্থিত ছিলেন। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনা এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনার বিষয়গুলো উল্লেখ করে তার বক্তব্য সভায় উপস্থাপন করেন। সভায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় বর্তমানে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং এর থেকে সুরক্ষার বিভিন্ন উপায় আর মাধ্যম নিয়ে। শ্যামল প্রকৃতির সুরম্য বেড়াজাল ছাড়া পরিবেশ কখনও সুস্থ আর নিরাপদ থাকতে পারে না। সুতরাং উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে গাছ কাটা তো যাবেই না, বরং নতুন নতুন পরিকল্পনায় সবুজ বনায়নের কর্মসূচীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীদের সুরক্ষায় সবচাইতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। ২০০৭ সালের সেই ভয়াবহ সিডরের তা-ব সুন্দরবনের শ্যামল বেষ্টনী উপকূলবাসীদের অনেকখানি রক্ষা করেছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এমনকি সাধারণ মানুষেরও। সুতরাং এই সবুজ বেষ্টনী দেশের পরিবেশ এবং মানুষের জানমাল সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেদিকে বিশেষ নজর দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে- সেই প্রত্যাশা দেশবাসীর।
×