ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উনারা সোজা পথে হাঁটলে, আমরাও সোজা পথে হাঁটব ॥ মোজাম্মেল হক

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৫ আগস্ট ২০১৭

উনারা সোজা পথে হাঁটলে, আমরাও সোজা পথে হাঁটব ॥ মোজাম্মেল হক

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, প্রধান বিচারপতি তার রচিত ‘মহাকাব্যে’ গোটা জাতি ও জাতীয় রাজনীতিকে যেভাবে কলঙ্কিত করেছেন, বঙ্গবন্ধুকে অসম্মানিত করেছেন এবং সংসদকে অসম্মানিত করেছেনÑ এটা হয় না, হতে পারে না। আমরা একটু অপেক্ষায় আছি, দেখি উনারা পরবর্তীতে কী করেন, কোন্ পথে হাঁটেন। উনারা সোজা পথে হাঁটলে আমরাও সোজা পথে হাঁটব, বাঁকা পথে হাঁটলে আমরাও বাঁকা পথে হাঁটব। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে। এমনটা আমরা চাই না, আমরাও দেশে ভাল অবস্থা কামনা করি। তিনি সোমবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাসন সড়ক মালেকের বাড়ি এলাকায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এ্যাডভোকেট ওয়াজউদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেনÑ মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, এ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম বাবুল, আতাউল্লাহ ম-ল, মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রউফ নয়ন, মজিবুর রহমান, এ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন মহি প্রমুখ। এ সময় তিনি শোক দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও থানায় গরু বিতরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক মানুষেরই ভুল হতে পারে, মানুষের ভুল হলে বিচার হয়। তাহলে বিচারকের ভুল হলে বিচার হবে না কেন? বিচারকরাও তো মানুষ। তিনি শয়তানও না, ফেরেস্তাও না। তাদের ভুল হলে বিচার পার্লমেন্টে হবে। তারা যদি মনে করেন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংদের হাতে রাখবেন না, জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে রাখবেন, সেটা তারা করতে পারেন। সেই এখতিয়ার বা ক্ষমতা তাদের আছে। কিন্তু সেই দিন রায়ে প্রধান বিচারপতি বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করে যে কথাগুলো বললেন, সেটা খুবই দুঃখজনক, বেদনাদায়ক এবং নিন্দনীয়। মন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ রাজনৈতিক কারণে তারা একটা হস্তক্ষেপ করুক, মন্তব্য করুক, আমরা মুখোমুখি হই এটা একটা জাতির জন্য সুখকর নয়। তাই যারা এ অবস্থাটার সৃষ্টি করেছেন তাদের দায়িত্ব এর অবসান ঘটানো। আর সেটা প্রত্যাহার করে নিলে এই সঙ্কট আর থাকবে না। আমি অনুরোধ করব যিনি অবাঞ্চিতভাবে, অনাকাক্সিক্ষতভাবে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এই মিথ্যাচার করেছেন, তিনি যেন অনুগ্রহ করে নিজের উদ্যোগে তার সেই সমস্ত কথা এক্সপাঞ্জ করেন। সেই রায় থেকে সেগুলো প্রত্যাহার করে নেন। তা যদি না করেন, যদি আপনি মনে করেন, বিচার বিভাগকে জাতির প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাবেন, তা হলে আমাদের বুঝতে হবে বিশেষ কোন এজেন্ডা নিয়ে আপনি এ কাজ করেছেন। আর যদি প্রকৃতই কোন এজেন্ডা না নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার দায়িত্ব আপনার রায় আপনি সংশোধন করবেন। বক্তব্য শেষে মন্ত্রী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম কর্তৃক গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও থানায় ১১৯টি গরু বিতরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা যাতে কোন ধরনের চাঁদাবাজি না করে সে লক্ষ্যে তৃতীয়বারের মতো মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরু বিতরণ করা হয়। পরে মন্ত্রী গাজীপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে জেলা পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন। গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মোজাম্মেল হক, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, গাজীপুর আদালতের পিপি হারিছ উদ্দিন আহমেদ, জিপি আমজাদ হোসেন বাবুল, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, এ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান প্রমুখ। এ উপলক্ষে পুলিশ সদস্যদের রক্তদান কর্মসূচী এবং গণভোজের আয়োজন করা হয়। মন্ত্রী গাজীপুর জেলা পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, বিচারকদের অপসারণে জুডিসিয়াল কাউন্সিল-সংক্রান্ত রায়কে ঘিরে প্রধান বিচারপতি যেসব কথা বলেছেন, তা অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত। আমরা দেশের মানুষকে ওয়াদা দিয়েছিলাম ক্ষমতায় গেলে দেশে ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন করব, ’৭২-এর সংবিধানে দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব। এটা আমাদের নির্বাচনী মেনুফেস্টোতেও ছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানে লেখাছিল রাষ্ট্রপতি যদি ভুল করে মহান জাতীয় সংসদ তার বিচার করবে, অভিশংসন (ইমপিচমেন্ট) করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীও যদি ভুল করে তার বিচারের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের আছে। প্রধানমন্ত্রী হলেন রাষ্ট্রের দ্বিতীয় ব্যক্তি। রাষ্ট্রের তিন নম্বর ব্যক্তি হলেন স্পীকার। তার বিচারও জাতীয় সংসদ করবে। চার নম্বর ব্যক্তি হলেন প্রধান বিচারপতি। সুতরাং প্রধান বিচারপতি ভুল করলে তার বিচার জাতীয় সংসদ করবে। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে, রায় হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টে এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আইনী লড়াই করব।
×