ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলডুগি আনারসের চাহিদা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৫ আগস্ট ২০১৭

জলডুগি আনারসের  চাহিদা বাড়ছে

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলের মধুপুর পাহাড়ী অঞ্চলে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে জলডুগি আনারস। অত্যন্ত সুস্বাদু ও সকল প্রকার মেডিসিনমুক্ত এ আনারসের চাহিদা ব্যাপক। আকারে ছোট ও অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। পরীক্ষামূলক এ আনারসের আবাদ শুরু করেছিলেন স্থানীয় কৃষক ছানোয়ার হোসেন। টাঙ্গাইলের মধুপুরের আনারস নিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে নানা ধরনের ক্ষতিকর মেডিসিন প্রয়োগের কারণে বিরূপ ধারণা ছিল। অনেকে আনারস খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। মধুপুরের মহিষমারা গ্রামের কৃষক ছানোয়ার হোসেন এই প্রথম আবাদ করেছেন প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত জলডুগি আনারস। জলডুগি আনারস রসালো, সুস্বাদু ও সুঘ্রাণযুক্ত। কোন প্রকার কেমিক্যাল ও মেডিসিন প্রয়োগ না করায় এ আনারসের চাহিদা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। টাঙ্গাইল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন ফলের দোকানে বিক্রি হচ্ছে এ আনারস। আকারে ছোট হলেও কড়া মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় অন্যান্য আনারসের থেকে এটির দাম ও চাহিদা অনেক বেশি। আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। আনারসে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। এটি একটি আঁশযুক্ত ফল, যা থেকে প্রয়োজনীয় ফাইবার বা আঁশ ও ক্যালরি পাওয়া যায়। আনারসে ফ্যাট ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম। সুস্বাদের জন্য অধিকাংশ মানুষের কাছে প্রিয় আনারস। জলডুগি আনারস এ এলাকায় নতুন। তবে এ আনারস চাষে সাফল্য এসেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সফল আনারসচাষী ছানোয়ার বলেন, ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার করে এই খাদ্য (আনারস) নষ্ট করার অধিকার আমার নেই। আমার সন্তানকে যা খাওয়াবো না, অন্য মানুষের সন্তানকে তা খাওয়াবো কি করে। তাহলে বিবেকের কাছে হেরে যাব। রাসায়নিকযুক্ত আনারস খেতে খেতে আসল আনারসের স্বাদ আমরা ভুলেই গেছি। যদি কোনভাবে মানুষকে রাসায়নিকমুক্ত আনারসের স্বাদ দেয়া যায়, তাহলে রাসায়নিকযুক্ত আনারস কেউ আর মুখেই নেবে না। তখন বাধ্য হয়ে সবাই রাসায়নিকমুক্ত আনারস উৎপাদন করবে। এই আনারস চাষী বলেন, রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে আনারসের আকার বড় এবং রং আকর্ষণীয় হয়। ক্রেতারা সেটি বেশি দামে কেনে। আর অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত আনারস সাইজে ছোট হয় দেখতে আকর্ষণীয় নয়। তাই ক্রেতাও কম এই আনারসের। অপর আনারস চাষী সাঈদ জানান, আষাঢ় মাসের শেষদিক থেকে শ্রাবণ মাস হলো আনারসের ভরা মৌসুম। এই সময় আনারস পাকা শুরু হয়। তবে এ সময়টা বর্ষা মৌসুম হওয়ার কারণে আনারস পরিবহনে ঝামেলা থাকে। বিধায় কেমিক্যাল ব্যবহার করে আগেই আনারস পাকিয়ে বিক্রি করে ফেলেন চাষীরা। আমাকে দেখে এর আগে দুই একজন চাষী অর্গানিক পদ্ধতিতে আনারস চাষ শুরু করে। ঠিকমতো বাজারজাত করতে না পারায় তাদেরও ক্ষতি হয়েছে। রাসায়নিকমুক্ত আনারস বাজারজাতের জন্য সরকারী অথবা বেসরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে চাষীরাও আনারসে রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ করে দেবে। মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, দুই একজন কৃষক কেমিক্যাল ব্যবহার না করে অর্গানিক উপায়ে আনারস চাষ করছে। আগামী জুলাই মাস থেকে একটি প্রকল্প শুরু হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মধুপুরে যারা আনারস চাষ করে তাদের একত্র করে অর্গানিক পদ্ধতিতে আনারস উৎপাদনের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সুষম সার ব্যবহার করলে এমনিতেই আনারস ভাল হয়। চাষীদের বিভিন্ন গ্রুপে একত্র করে তাদের কাছ থেকে আনারস সংগ্রহ করতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে যার যতগুলো আনারস পাকবে সেগুলো একত্র করে বাজারজাত করতে পারলে কৃষক লাভবান হবে এবং তারা উৎসাহিত হবে। টাঙ্গাইল জেলা উপ-পরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আবু আদনান বলেন, সুস্বাদু জলডুগি আনারসের আবাদ মধুপুরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক।
×