ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে জাতিসংঘে প্রশংসিত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:১১, ১৫ আগস্ট ২০১৭

নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে জাতিসংঘে প্রশংসিত বাংলাদেশ

সমুদ্র হক ॥ বাংলাদেশের অনেক কিছুই এখন বিশ্বে রোল মডেল হয়েছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন এখন জাতিসংঘে প্রশংসিত। বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই নারী ও পুরুষের অনুপাত ৫০:৫০। কোন দেশে এই অনুপাত পুরুষের চেয়ে নারী বেশি ৪৯:৫১। উন্নয়নে বিশ্বের ১শ’ ৪৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অনেক উপরে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক অবস্থানে বাংলাদেশ ৮ম স্থানে। প্রতিটি সেক্টরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, যা উন্নত বিশ্বের নেতৃবৃন্দ ও জনগণের কাছে ভাল অনুভূতি এনে দিয়েছে। বগুড়ায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) এইচআরপির জেন্ডার এক্সপার্ট বিথীকা হাসান বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন, যা বাংলাদেশকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা দ্রুত পূরণে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইউএনডিপির প্রতিবেদনের অংশ তুলে ধরে তিনি বলেন, বছর কয়েক আগেও বাংলাদেশে এ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে যায়। এ্যাসিড ভায়োলেন্স নিয়ন্ত্রণে দেশ কঠিন আইন প্রণয়ন করায় এবং অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে সাজা দেয়ায় তা অনেক কমেছে। বিদেশের অনেক দেশই তা পারেনি। দেশে যখনই কোন সহিংসতা ঘটছে তখনই আইন প্রণয়ন করে তা দমন করা হচ্ছে। পাঁচ বছরে নারী নির্যাতনের শিকার ৭ শতাংশ কমেছে। নারী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতা এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে তা আরও কমে আসবে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ২০১০ সালে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কন্ট্রোল এ্যাক্ট করা হয়েছে, যা ঘরে নারীর প্রতি মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন বন্ধে বড় ভূমিকা রাখছে। ২০১২ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে পর্নোগ্রাফি কন্ট্রোল এ্যাক্ট। এ ছাড়াও ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, সেফ হোম, ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার, ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টার গঠিত হয়েছে। সহিংসতায় নারীর মানসিক ক্ষতি (সাইকোলজিক্যাল ট্রমা), শারীরিক ক্ষতি এবং হতাশায় জীবন চলার পথে যে বিঘœতা ঘটায় তা নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে। বর্তমানে ঢাকাসহ বিভাগীয় নগরীতে এ ধরনের কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বড় নগরী ও শহরও হবে। নারী উন্নয়নে ২০১১ সালে উইমেন ডেভেলপমেন্ট পলিসি প্রণয়ন করা হয়েছে, যা নারী উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। একই সঙ্গে নারীর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধে আইনের বিধি ও ধারাকে সময়োপযোগী করা হচ্ছে। রাষ্ট্র মনে করে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আলাদা আইন থাকা বাঞ্ছনীয়। সূত্র জানায়, ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে যে সংবিধান তুলে দেন তাতে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। এই ধারার একটি আর্টিক্যালে যোগ করা আছে, নারী ও শিশু এবং সমাজের পশ্চাৎপদ মানুষের জন্য সময়ের প্রয়োজনে আইন করা যাবে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার নারী শিশু সুরক্ষায় নতুন আইন করছে। আইনগুলো নারীবান্ধব ও শিশুবান্ধব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ অপরাধের ধরন বুঝে এসব আইন প্রয়োগ করছে। এতে অপরাধী সাজাও পাচ্ছে। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার ধারা সূচিত হয়েছে। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানান, তিনি মাঠ পর্যায়ে লক্ষ্য করেছেন নারী নির্যাতন ও সহিংসতার অন্যতম একটি কারণ হলো বালিকাবধূ হওয়া। বাল্যবিয়ে যত রোধ করা যাবে নারী নির্যাতনের মাত্রা তত কমে আসবে। তিনি মনে করেন, বালিকা বিয়ে রোধ করা গেল তার নিরাপত্তার জন্য সেফ হোম থাকা দরকার, যাতে সে নিরাপত্তা পেয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে। গ্রামে এমনও দেখা গেছে বাল্যবিয়ে রোধ করার কিছুদিন পর সেই বালিকাকে অন্যস্থানে কোন আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে বিয়ে দেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের চিত্র বলে দেয় : বালক-বালিকারা বেশিরভাগ সময়ই অতি আবেগপ্রবণ হয়ে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়ে। তখন তারা বাস্তবতা ভুলে গিয়ে বিপথে পা বাড়ায়। গোপনে বিয়ের পিড়িতে বসে। পরবর্তী সময়ে অভিভাবকগণ বিয়ে মেনে নেয় ঠিকই তবে দম্পতির জীবনের কোন অধ্যায়ে ফাটল ধরে; যেখান থেকে শুরু হয় নির্যাতনের ধারা। আবার অনেক অভিভাবক বালিকা যাতে প্রণয়ে না পড়ে সে জন্য এবং মেয়ে বড় হয়েছে বিদায় করতে পারলেই হয় এমন কথিত ধারণায় বিয়ের আয়োজন করে। এভাবে বালিকাকে অতল জলে ভাসিয়ে দেয়া হয়। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কেস স্টাডি- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে দারিদ্র্যতা দূর করছে নারী। এটা যেমন ঠিক পাশাপাশি পুরুষের কারণে নারী বিপাকেও পড়ছে। যেমন বেশিরভাগ বেসরকারী সংস্থা যে ঋণ দেয় তার ৯০ থেকে ৯৮ শতাংশ গ্রহীতা নারী। এই নারীর ঋণের অর্থের একটি অংশ নিয়ে নেয় স্বামী। নানা কারণে ঋণ শোধ দিতে না পারলে খ—গ নেমে আসে নারীর ওপর। যা নারী উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
×