ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দশ বছরে গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়েছে ৪১ লাখ ৩৫ হাজার

প্রকাশিত: ০৪:১১, ১৫ আগস্ট ২০১৭

দশ বছরে গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়েছে ৪১ লাখ ৩৫ হাজার

এমদাদুল হক তুহিন ॥ দেশে ১০ বছরের ব্যবধানে গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়েছে ৪১ লাখ ৩৫ হাজার। একই সময়ে বেড়েছে গরু, ছাগল ও মহিষের সংখ্যা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে ২ কোটি ৩০ লাখ ৫১ হাজার গরু থাকলেও বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৮৫ হাজারে। এক্ষেত্রে ১০ বছরের ব্যবধানে গরুর সংখ্যা বেড়েছে ৭ লাখ ৬৪ হাজার। আর সব মিলিয়ে বর্তমানে মহিষের সংখ্যা ১৪ লাখ ৭৬ হাজার। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে দেশের গো-সম্পদ খাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেলেও বিশ্লেষকদের দাবি প্রাণিসম্পদ খাতই দেশের সবচেয়ে অনগ্রসর খাত। তবে এ দাবির সঙ্গে একমত নন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা, খামারী ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। তারা বলছেন, পশু সম্পদ খাতে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে দেশ। ক্রমাগত বেড়ে চলছে খামারীর সংখ্যা। বাড়ছে মাংস ও দুধের উৎপাদন। এমন পরিস্থিতিতে কোরবানির ঈদ নিয়ে আবারও আলোচনায় পশু খাত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয় পশুতেই এবারের কোরবানি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে কোরবানি উপযোগী পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৪ লাখ। গত বছরের চেয়ে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার বেড়ে বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজারে। দেশে বর্তমানে কোরবানি উপযোগী গরু ও মহিষ রয়েছে সাড়ে ৪৪ লাখ। আর ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ। সাধারণত প্রতিবছর কোরবানির ঈদে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ গরু জবাই হয়। চাহিদার ৮০ শতাংশ দেশীয় যোগানে সম্পন্ন হলেও ২০ শতাংশ আসত ভারত ও মিয়ানমার থেকে। তবে গত কয়েকবছর ধরেই ভারত থেকে গরু আসা প্রায় বন্ধ। এতে মাংসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেমন কোন সঙ্কট তৈরি হয়নি। বরং আমদানি বন্ধ থাকাকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে এ খাতে এগিয়ে এসেছে ছোট ছোট খামারীরা। তারা বিনিয়োগ করেছেন কষ্টে জমানো পুঁজি। খামারীরা বলছেন, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকায় গত ৩ বছরে দেশে গো-সম্পদ খাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। তাদের দাবি, উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চোরাইপথে আসা গরুর আমদানি বন্ধ করতে হবে। নতুবা পথে বসবে ছোট খামারীরা। স্বপ্ন ভঙ্গ হবে আশার আলোর। এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক আইনুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। চাহিদা বিবেচনায় দেশীয় পশুতেই এবারের কোরবানি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। আর ভারত থেকে গরু এলে বিগত কয়েক বছরে গো-সম্পদে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তা বিপর্যস্ত হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ এমরান। এক প্রশ্নের জবাবে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, এবারের কোরবানিতে পশুর যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, দেশে তারচেয়ে অধিক কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। সরকারী-বেসরকারী হিসেব মতে, বছরটিতে চাহিদার তুলনায় ১০ লাখের বেশি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এরপরেও যদি গরু আমদানি হয়, ভারত থেকে গরু নিয়ে আসা হয়; তাহলে সেটি হবে দেশের জন্য আত্মঘাতী। তাই যে কোন ক্রমেই চোরাইপথে গরু আসা বন্ধ করতে হবে। তথ্য পর্যালোচনায় গো-সম্পদের দৃশ্যমান অগ্রগতি ২০১৭ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে গরুর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ৫১ হাজার। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৮৫ হাজারে। এ সময়ে দেশে গরুর সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৭ লাখ ৬৪ হাজার। অপরদিকে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মহিষের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজার। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭৬ হাজারে। এ সময়ে দেশে মহিষের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ২৭টি। গবাদি পশুর সংখ্যা ৫ কোটি ৬ লাখ ৫২ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৮৭ হাজারে। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে দেশে গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়েছে ৪১ লাখ ৩৫ হাজার। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে খামারের সংখ্যা প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ। এসব খামারসহ সারাদেশে এখন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া রয়েছে ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪৫ হাজার। এর মধ্যে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার কোরবানির উপযোগী। এসব পশুর মধ্যে সাড়ে ৪৪ লাখ গরু ও মহিষ রয়েছে। ছাগল ভেড়া রয়েছে ৭১ লাখ। ২০১৬ সালে যা ছিল ১ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার। আগের বছরের চেয়ে কোরবানির উপযোগী পশুর সংখ্যা বেড়েছে ৮৭ হাজার। এ ছাড়া গত বছর কোরবানির উপযোগী ১ কোটি ১৪ লাখ পশুর মধ্যে কোরবানি করা হয় ১ কোটি ৫ লাখ পশু। এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর কোরবানির ঈদে দেশে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ গরু জবাই হয়। এর প্রায় ৮০ শতাংশ সরবরাহ করে আসছিলেন দেশের খামারীরা। বাকি গরু ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসত। তবে গত কয়েক বছর ভারত থেকে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশে গরুর দাম কিছুটা বাড়লেও তেমন সঙ্কট হয়নি। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, দেশে দুগ্ধ ও মাংস শিল্পের প্রসার খুব বেশিদিন আগের নয়। মাত্র ২ দশক আগে শুরু হলেও বর্তমানে জিডিপিতে পশু সম্পদের অবদান ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। দেশের মোট কর্মসংস্থানের ২১ শতাংশ প্রত্যক্ষভাবে এ খাতে জড়িত। আর আমিষের ৮ শতাংশ আসে মাংস ও দুধ থেকে। সরকারী হিসেবে, দেশে দুগ্ধ খামারের সংখ্যা ১২ লাখ ১ হাজার ৪৩২টি, যা ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৭৯ হাজার ৯৪২টি। এক্ষেত্রে মাত্র ৭ বছরে দেশে দুগ্ধ খামারের সংখ্যা বেড়েছে ১১ লাখের ওপরে। একই সময়ে মোটাতাজা খামারের সংখ্যা ৩৩ হাজার থেকে উন্নীত হয়েছে ১৯ লাখে। এক্ষেত্রেও প্রবৃদ্ধি শতভাগের চেয়েও বেশি। ২০১৭ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে দুধের উৎপাদন ২৩ লাখ ৬৫ হাজার টন হলেও সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ লাখ ৩০ হাজার টনে। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে দুধের উৎপাদন বেড়েছে ২৮ লাখ ৬৫ হাজার টন। অপর এক তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১০-১১ সালে দেশে দুগ্ধ খামারের রেজিস্টার্ড সংখ্যা ছিল প্রায় ৭৯ হাজার। তবে বর্তমানে তা ১২ লাখে উন্নীত হয়েছে। ওই অর্থবছরে দেশে দুধের চাহিদা ছিল ১৩ মিলিয়ন মেট্রিকটন। আর উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩ মিলিয়ন মেট্রিকটন। তবে ১০১৫-১৬ অর্থবছরে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মেট্রিকটনে দাঁড়ালেও উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৭ মিলিয়ন মেট্রিকটন। সময়কালে দেশে দুধের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ মিলিয়ন মেট্রিকটন। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গো-সম্পদ খাতে দেশে দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্যণীয়। কোরবানির চাহিদা ও যোগান প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বর্তমানে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার। এরমধ্যে গরু মহিষের সংখ্যা ৪০ লাখ। আর ছাগলের সংখ্যা ৭৫ লাখ ৫৫ হাজার। চাহিদার দিক থেকে প্রতি কোরবানি ঈদে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ গরু জবাই হয়ে থাকে। সংগঠনের নেতারা বলছেন, দেশে থাকা কোরবানি উপযোগী পশু দিয়েই এবারের কোরবানি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। খামারীদের কথা চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে ডিগ্রীতে পড়েন শাতিল রহমান। এসএসসির পর থেকেই জড়িয়ে পড়েন পশুসম্পদ খাতে। বর্তমানে তার অধীনে রয়েছে দুটি এগ্রো ফার্ম। চট্টগ্রাম শহর ও ফটিকছড়ি উপজেলায় অবস্থিত ওই দুটি খামারে বর্তমানে কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে ২০টি। পশুসম্পদ খাতের বর্তমান অবস্থা ও কোরবানি ঈদের প্রত্যাশা জানতে চাইলে এই তরুণ বলেন, ‘গরু আমদানি বন্ধ থাকায় গত বছরের অভিজ্ঞতা বেশ ভাল। বছরটিতে গো-খাদ্যের দাম কম থাকায় কোরবানিযোগ্য পশুর দাম ছিল সাধ্যের মধ্যেই। অর্থাৎ সবাই কিনতে পেরেছে। তবে চলতি বছর গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বিপরীতে বাজারে মাংসের দাম কমতে শুরু করেছে। আবার ভারত থেকে গরু আসার খবরও শুনতে পাচ্ছি। সব মিলিয়ে শঙ্কায় আছি।’ একই ধরনের কথা বলেন অপর খামারী সোহরাব হোসাইন রোকনও। নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় আস্থা এগ্রো ভিলেজ নামে তার একটি খামার রয়েছে। আর সেখানে ১৮টি কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে সোহরাব হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছর সীমান্ত দিয়ে আমদানি বন্ধ থাকায় বেশ দাম পেয়েছি। তবে বর্তমানে সিন্ডিকেটের কারণে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। পশু সম্পদে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও চোরাইপথে গরু আমদানির খবর পাচ্ছি। এটা যে কোনক্রমে বন্ধ করা উচিত।’ অন্যান্য খামারীর সঙ্গে কথা বলেও একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ খামারে গরু পালনে সাধারণত গমের ভুসি, সয়ামিল ও রাইসব্রানই প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গো-খাদ্য হিসেবে খড় ব্যবহৃত হলেও এর দাম মুখ্য নয়। খামারীদের তথ্যমতে, প্রধানতম ওই তিনটি খাদ্যের দামই বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মাত্র ৪ মাস আগে ৮৫০ টাকা বস্তায় গমের ভুসি বিক্রি হলেও বর্তমানে ওই বস্তারই দাম পড়ছে ১৩৫০ টাকা। আর গত বছর এক বস্তা গমের ভুসি বিক্রি হয়েছে মাত্র ১১০০ টাকায়। বর্তমানে প্রতিকেজি সয়ামিল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। অথচ ৪ মাস আগে একই সয়ামিলের দাম ছিল কেজি প্রতি ৩২ টাকা। রাইসব্রান বর্তমানে ২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও ৪ মাস আগে এর দাম ছিল ১৫ টাকা। গবাদি প্রাণির কৃত্রিম প্রজনন ও প্রতিবন্ধকতা বর্তমানে সাভারে কেন্দ্রীয় কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার ও জেলা কেন্দ্রে রক্ষিত উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহ করে তরল ও হিমায়িত উপায়ে সমগ্র দেশব্যাপী কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দেশের ৩ হাজার ৭৫০টি কৃত্রিম প্রজনন উপ-কেন্দ্র ও পয়েন্টের মাধ্যমে হিমায়িত ও তরল সিমেন ব্যবহার করে কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ কাজ চলছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত কৃত্রিম প্রজননকৃত গাভীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ১৯ হাজার। তবে অর্থমন্ত্রী একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশের সবচেয়ে অনগ্রসর খাত পশু সম্পদ। স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হলেও গাভি পালনে এগিয়ে আসছে না কেউ। তেমনভাবে বাড়ছে না গরুর সংখ্যা। চাহিদার তুলনায় যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না গরুর মাংসের। এমন পরিস্থিতিতে দেশে গো-সম্পদের অনুন্নয়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তরুণ পশু চিকিৎসক সুলভ ফরাজী জনকণ্ঠকে বলেন, যে কোন দেশের তুলনায় দেশে গরুর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে দেশীয় গরু থেকে দুধ ও মাংসের উৎপাদন খুবই কম। সবচেয়ে উন্নত জাতের গরু সর্বোচ্চ এক মণ দুধ দিলেও দেশীয় জাতে দুধের উৎপাদন মাত্র ১ থেকে ২ লিটার। একইভাবে মাংসের উৎপাদনও কম। মূলত এ কারণেই গো-সম্পদের উন্নয়ন কারো চোখে পড়ে না। তবে এনিম্যাল হাজব্রেন্ডির এক শিক্ষার্থীর মতে, গো-সম্পদের ক্ষেত্রে দেশের পরিবেশ অন্যান্য দেশের মতো অনুকূলে নেই। গরুর জন্য মূলত ঠা-া পরিবেশ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশের আবহাওয়া উষ্ণ। তাই দেশে উন্নত জাতের গরুর প্রসার ঘটানোও সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে অন্যান্য খাতের মতো এগিয়ে যেতে পারছে না গো-সম্পদ। এদিকে সরকারীভাবে কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে কাজ করেন এই আই টেকনিশিয়ারা। চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে কাজ করছেন তারা। একাধিকবার চাকরি সরকারীকরণের কথা বলা হলেও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। এতেও কৃত্রিম প্রজনন ব্যহত হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে। তবে এক প্রশ্নের জবাবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক আইনুল হক বলেন, তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে। এসব স্বেচ্ছাসেবীর চাকরি স্থায়ীকরণ প্রসঙ্গে কোন উত্তর না দিলেও গো-সম্পদের অনুন্নয়নের পেছনে জনবল সঙ্কটের কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ এমরান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথমত এখাতে বড় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করছেন না। কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা দেখেছি, সাধারণত পশু সম্পদ নিয়ে একটু অস্থিরতা দেখা দিলেই, ঈদ এলেই সরকার ভারত থেকে গরু নিয়ে আসে। এমন প্রেক্ষাপটের কারণেই বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত ৩ বছরে ভারত থেকে গরু না আসার কারণে ছোট ছোট বিনোয়োগকারীরা এ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। এখন যদি আমদানি শুরু হয় তাহলে ২ থেকে ৩ বছরে যে উন্নতি হয়েছে, সেই অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব হবে না। দেশে এই কয়েক বছরে পশুসম্পদ খাতে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। এটি ধরে রাখতে হলে কোনক্রমেই গরু আমদানি নয়, বরং দেশীয় গরুতেই সম্পন্ন করতে হবে এবারের কোরবানি। সামগ্রিক প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক আইনুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, চাহিদা বিবেচনায় দেশীয় পশুতেই এবারের কোরবানি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশের সব খামারী প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তালিকাভুক্ত। আমরা তাদের সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। কোরবানি উপলক্ষে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের করণীয় প্রসঙ্গেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নিরাপদভাবে এবারের কোরবানি সম্পন্ন করতে সারাদেশে এগারো শ’র অধিক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হবে। ঢাকা শহরেই ১৫টি টিম কাজ করবে। হাটে হাটে মেডিক্যাল বুথ থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এবার গরুর দাম অত্যাধিক কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না। শুধু মাংস নয়, গরুর দাম নির্ভর করে এর রঙের ওপরও। গরুর ফেসভ্যালু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাম নির্ভর করবে ক্রেতার মানসিকতা ও পছন্দের ওপর। প্রাণিসম্পদ খাতের প্রতিবন্ধকতা জানতে চাইলে আইনুল হক বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে একই জনবলে চলছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। ফলে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেও অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
×