ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রায় পুনর্বিবেচনা ও পর্যবেক্ষণ বাতিল দাবি চৌদ্দ দলের

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৪ আগস্ট ২০১৭

রায় পুনর্বিবেচনা ও পর্যবেক্ষণ বাতিল দাবি চৌদ্দ দলের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের যে রায় দেয়া হয়েছে তা পুনর্বিবেচনা এবং রায়ের পর্যবেক্ষণ বাতিলের দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। রবিবার বিকেলে ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের নেতারা সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে তা অপ্রাসঙ্গিক, অগ্রহণযোগ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। একই সঙ্গে তা আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার ঘোষণা দিয়েছেন জোটের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সংসদ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে রায়ে যে পর্যবেক্ষণ রয়েছে তা ১৪ দল প্রত্যাখ্যান করেছে। এ রায় বাতিলের দাবি জানিয়েছে ১৪ দল। বাতিল করতে হবে। আমরা এটা আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে দেশের মানুষ জানে এবং এটা মীমাংসিত বিষয়। বঙ্গবন্ধু যে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তা চন্দ্র-সূর্যের মতোই সত্যি। এটা নিয়ে রায়ে যা বলা হয়েছে তা জনগণ মেনে নেবে না, ক্ষমা করবে না। সুতরাং এ রায়ের পুনর্বিবেচনা জরুরী। তিনি আরও বলেন, এই রায়ের পর বিএনপি যে সব বক্তব্য দিচ্ছে তাতে গণতন্ত্রকে অবমাননা করা হয়েছে। এই রায়কে কেন্দ্র করে তারা চক্রান্ত শুরু করেছে। আগামী নির্বাচন ভ-ুল করতে তারা চক্রান্ত করছে। অবশ্যই এই রায় পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং পর্যবেক্ষণ বাতিল করতে হবে। তা না হলে জনগণ কাউকে ক্ষমা করবে না। জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের রায় হয়ে যাওয়ার পর তা জনগণের সম্পদ হয়ে যায়। সে সম্পদ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতে পারে। তা কোনভাবেই আদালত অবমাননা নয়, অন্যায় নয়। যারা এটা বলেন তারা বালখিল্য আচরণ করেন। এই রায়ের পর্যবেক্ষণ বিচার বহির্র্ভূত, অপ্রাসঙ্গিক, উদ্দেশ্যমূলক ও পক্ষপাতমূলক। এটা আমরা আশা করি না। এতে মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ ও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে খাটো করা হয়েছে। এ রায় নিয়ে যারা উল্লাস প্রকাশ করছেন তারা দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও জনগণের শক্তিকে ম্লান করার জন্যই এ রায় দেয়া হয়েছে। এই রায় গ্রহণযোগ্য নয়। এই রায় পুনর্বিবেচনা এবং পর্যবেক্ষণ বাতিল করা উচিত।’ ওয়ার্কার্স পার্র্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন এ রায় নিয়ে রাজনীতি করা অনুচিত। কিন্তু দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে যে কথা বলা হয়েছে সেটা প্রযোজ্য ছিল না। এটা নিয়ে কথা না বলে উপেক্ষা করে থাকা অনুচিত কি না। আমরা মনে করি এবং দৃঢ়ভাবে বলি আমাদের ইতিহাসের প্রকৃত ধারায় ফিরে আসতে হবে, রায়কে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এই রায়ে জনগণের অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। এই রায় প্রত্যাখ্যান করছি। সংবিধানে আছে সব কিছুর মালিক জনগণ সুতরাং জনগণের প্রতিনিধিদের হাতেই ক্ষমতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বলা যায় এ রায় সংবিধান পরিপন্থী। এই রায় বিএনপিকে অপরাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। আর ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে এতে করে স্বাধীনতা বিরোধীদের উস্কানি দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু অমীমাংসিত অবস্থানে নিতে চাইছে। যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না এই রায়ে তারা উৎসাহিত হয়েছে। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমি জানি না মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বর্তমান প্রধান বিচারপতি কোথায় ছিলেন। আসলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তিনি জানেন না বলেই পর্যবেক্ষণে নানা কথা বলেছেন। এই রায়ের পর্যবেক্ষণ অপ্রাসঙ্গিক। এটা প্রত্যাহার করা উচিত। জাতীয় পার্টি জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, এই রায়ে শুধু চৌদ্দ দল নয়, সারাদেশ সংক্ষুব্ধ। সুতরাং এই রায় বাতিল হোক। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
×