ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের ৭ কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৪ আগস্ট ২০১৭

বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের ৭ কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়নি

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত জ্বালানি খাতের সাত কোম্পানির পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তির জটিলতা দীর্ঘদিনেও কাটেনি। বিদ্যুত বিভাগের কোম্পানিগুলো শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলো শেয়ার না ছাড়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত কোম্পানিগুলোর বিষয়ে মতামত দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় পৃথক কমিটি গঠন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠিত হবে। ওই কমিটি কোম্পানিগুলোর অবস্থা পর্যালোচনা করে শেয়ার ছাড়া না ছাড়ার বিষয়ে মতামত দেবে। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরেই রাষ্ট্রীয় কোম্পানির পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। জ্বালানি ও বিদ্যুত খাতের কয়েকটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে রয়েছে। মনে করা হয় পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এক ধরনের দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয় কোম্পানিগুলোর। এক্ষেত্রে মুনাফা করার প্রবণতা তৈরি হয়। এর পাশাপাশি প্রকল্পের অর্থায়নের জন্যও শেয়ারবাজার থেকে অর্থ পাওয়া যায়। এতে সরকারের প্রতিও চাপ তৈরি হয় না। জ্বালানি ও বিদ্যুত খাতের কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। বিভিন্ন কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে কোম্পানিগুলো মুনাফা করে তার একটি অংশ শেয়ার মালিকদের দিয়ে দেবে এখনও এ ধরনের মানসিকতাই মেনে নিতে পারেন না অনেকে। প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও তাদের মতবিরোধ রয়েছে। কোম্পানির পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের কেউ কেউ মনে করছেন পুঁজি বাজারে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কেবল মাত্র কোম্পানির নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্রমাগতভাবে লোকসান দিতে থাকায় কোম্পানি আইন অনুযায়ী বিদ্যুত জ্বালানি খাতে নানা ধরনের কোম্পানি করা হলেও অধিকাংশ কোম্পানি এখনও সরকারের ওপর নির্ভরতা কাটাতে পারছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় সম্প্রতি বিদ্যুত জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জ্বালানি বিভাগের সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী জ্বালানি খাতের কোম্পানির এখনই পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয় বলে জানান। তিনি ওই বৈঠকে জানান, যেসব কোম্পানি নিয়ে কথা হচ্ছে তারা এফডিআর ভেঙ্গে চলছে। যেহেতু মুনাফা হচ্ছে না তাই শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, লিক্যুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল), বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এই তিন কোম্পানির কেউই পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি। জ্বালানি বিভাগে দেয়া প্রতিবেদনে এদের মধ্যে বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বলছে গ্যাসের চাহিদা অনুযায়ী যোগান না থাকার পাশাপাশি সিএনজি এবং আবাসিকে সংযোগ বন্ধ থাকায় মুনাফা কমছে। আর কোম্পানির প্রকল্প গ্রহণের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকেই ব্যয় নির্বাহ সম্ভব। তাদের অর্থের প্রয়োজন না থাকায় পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করছে তারা। প্রাকৃতিক গ্যাসের স্বল্পতায় এখন সারাদেশে ব্যাপকভাবে এলপিজির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সুযোগে বেসরকারী অনেক কোম্পানি ভাল ব্যবসা করছে। সরকার সহনীয় দামে এলপিজি সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে দীর্ঘদিন থেকেই। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। সরকার এখনও পর্যন্ত এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা মানুষকে এলপিজি সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছিল, তা বাস্তবায়নেও অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এজন্য পৃথক কোম্পানি থাকলেও তারা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি এলপি গ্যাস সরবরাহ করতে পারে না। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি এককভাবে দেশের গ্যাস সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে। আগামী বছরগুলোতে দেশের জ্বালানি খাতে যে এলএনজি যোগ হবে তারও সঞ্চালন করবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি। কাজেই গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধির সঙ্গে হুইলিং চার্জ হিসেবেও বেশি অর্থ আয় করবে কোম্পানিটি। এখন এলএনজির জন্য সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করছে জিটিসিএল। এসব সঞ্চালন লাইন নির্মাণের ব্যয় দিচ্ছে সরকার। এর বিপরীতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তোলার সুযোগ থাকলেও এর বিরোধিতা করছে কোম্পানিটি। গ্যাস সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা কোম্পানি শেয়ার ছাড়তে না চাইলেও বিদ্যুত সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা কোম্পানি পিজিসিবি অনেক দিন থেকেই শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, চারটি রাষ্ট্রীয় বিদ্যুত কোম্পানি পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার জন্য এগিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে তিনটি নতুন কোম্পানি একটি পুরনো কোম্পানি যাদের আগে থেকে পুঁজিবাজারে রয়েছে। এবার আরও ১৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়বে তারা। যে তিনটি কোম্পানি নতুন করে শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে একমত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল), ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি) এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল)। এদের মধ্যে আশুগঞ্জ পুরাতন কোম্পানি হলেও এনডব্লিউপিজিসিএল এবং ইজিসিবি অনেকটা নতুন কোম্পানি। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কোম্পানি দুটিই গঠনের পর থেকে অভাবনীয় সাফল্য দেখাচ্ছে। এর মধ্যে এনডব্লিউপিজিসিএল কয়েকটি বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করে অন্য কোম্পানিগুলোর কাছে অনুসরণীয় হয়ে উঠেছে। আগে থেকেই বাজারে রয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি)। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুত বিভগের কোম্পানিগুলো শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে ইতিবাচক। ছোটখাটো কিছু সমস্যা থাকলে তা কাটিয়ে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে চায়। এতে বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নে যে ২০ ভাগ ইক্যুইটি বা মূলধনী বিনিয়োগ করতে হয় তা সংগ্রহ সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার পর সব কিছু নির্ধারিত হবে।
×