ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিকে গর্ত থেকে উঠে আসার সুযোগ দিতেই এই রায় ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৪ আগস্ট ২০১৭

বিএনপিকে গর্ত থেকে উঠে আসার সুযোগ দিতেই এই রায় ॥ তোফায়েল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রবীণ রাজনীতিক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণকে অবাস্তব, অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়ে বলেছেন, বিপর্যস্ত বিএনপিকে রাজনীতি করার সুযোগ দিতেই এই রায়ে অনাকাক্সিক্ষত কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই রায় প্রকাশের পর থেকেই বিএনপি গর্ত থেকে লাফ দিয়ে উঠে কথা বলা শুরু করেছে। বিএনপি বিপর্যস্ত ও জনবিচ্ছিন্ন হয়েছিল। সেখান থেকে উঠে তারা যাতে রাজনীতি করার সুযোগ পায়- এজন্যই এই পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। দেশের জনগণও অন্তত তাই মনে করে। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ড দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশের বিচার বিভাগ ও বিচারকদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি যে কথা বলেছেন তা অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সার্বভৌম। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনগণই সব ক্ষমতার মালিক। সেই সংসদকে ‘অপরিপক্ব’ বলে সংসদ ও সংবিধানের অবমাননা করা হয়েছে। আমরাও তো বলতে পারি, যারা এ ধরনের কথা বলেন, তারাও পরিপক্ব নন। ভারত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকাসহ বিশে^র প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশেই সংসদের মাধ্যমে বিচারপতিদের ইমপিচমেন্ট হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সেমিনার উপ-কমিটির আহ্বায়ক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক-গবেষক সৈয়দ বদরুল আহসান। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম মুকুল, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সাইফুল আলম এবং আজিজুল ইসলম ভূঁইয়া। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন। রায়ের পর্যবেক্ষণে জাতির পিতাকে ছোট করে প্রধান বিচারপতির ‘কারও একক নেতৃত্বে স্বাধীন হয়নি’- এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, যখন কেউ এ ধরনের কথা বলেন, তখন খারাপ ও দুঃখ লাগে। বঙ্গবন্ধু এমন এক নেতা, যিনি ধারাবাহিকভাবে তাঁর দেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করেছেন, জীবনের ১২ বছরেরও বেশি সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। নির্ভুল পরিকল্পনার মাধমে একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করে দেশ স্বাধীন করেছেন। আর আজ বলা হয় ‘কারও একক নেতৃত্ব নাকি দেশ স্বাধীন হয়নি! এটি একটি কথা হলো! রায় নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, গত সাড়ে আট বছরে আওয়ামী লীগ একনাগাড়ে দেশ পরিচালনা করে দেশকে গড়ে তুলছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। যেই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সরকার এত কাজ করল, সেই মুহূর্তে এই বিশাল অর্জনকে ম্লন এবং শেখ হাসিনাকে খাটো করতে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের আপীলে এমিকাস কিউরি হিসেবে শুনানিতে অংশ নেয়া ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এরা চতুর। এরা চালাক। এরা চতুরতার সঙ্গে কথা বলে সত্যকে আড়াল করতে চান। সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের কার্যকর বিচার হতে হলে সেই সময়ের রাজনীতিবিদ, সেনা কর্মকর্তা, আমলা, উগ্র চীনপন্থী ও জাসদের ভূমিকাও তুলে আনতে হবে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে জাতির পিতা নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের জন্য। কিন্তু বিচারকরা আজও রায় ও পর্যবেক্ষণ বাংলায় লেখেন না। তার মানে সংবিধানও তাঁরা মানেন না। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য মোজাফফ্র হোসেন পল্টু বলেন, বিচার বিভাগের রায় নিয়ে যারা উৎফুল্ল, তাদের মতলব আমরা জানি। গণতন্ত্র নস্যাৎ করার জন্য তারা আবারও চক্রান্ত শুরু করেছে। নির্বাচন কিংবা অন্য কিছু নয়, ষড়যন্ত্র করে পঁচাত্তরের মতো কিছু করে ক্ষমতায় আসার জন্য এই ষড়যন্ত্র। সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যা বলেছেন, তা অমার্জনীয় অপরাধ। এই বক্তব্য তিনি এক্সপাঞ্জ করবেন কী করবেন না, তা জানি না। কিন্তু তাঁকে এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতেই হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে পেছনে চীন-আমেরিকার ভূমিকা রয়েছে। তবে এই হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি ও পথ প্রশস্ত করেছে জাসদ। এ কথাও ভুললে চলবে না। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, একজন প্রধান বিচারপতির রায়ে স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বকে মুছে ফেলা যাবে না। ইতিহাস বিকৃত করে নতুন তথ্য উত্থাপনের চেষ্টা, সেটি প্রধান বিচারপতি কিংবা জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরী যারাই করুন না কেন, সফল হবে না। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, পঁচাত্তরের হত্যা-ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত আছে। তা না হলে প্রধান বিচারপতির রায়ে কীভাবে বলা হয় একজনের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি। বঙ্গবন্ধু এমন একজন, যাকে কেন্দ্র করে অনেকজন। তাঁকে অনেকের মধ্যে একজন করার প্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে অসম্মানিত করা হয়েছে। সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। এই ষড়যন্ত্রকারীদের জন্যই আজ আমরা ভীতসন্তস্ত্র। কে কোথায় ছিলাম, এখন কোথায় আছি, কোথায় যাচ্ছি- এই তিনটি জিনিস মনে না রাখলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু না থাকলে স্বাধীনতা আসত না ॥ সকালে ধানম-ির ৩২ নম্বরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে অনাকাক্সিক্ষত যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা সত্যিই খুব দুঃখজনক। বঙ্গবন্ধু না থাকলে বাঙালী আজও স্বাধীনতা পেত না। তিনি বলেন, এ রায় নিয়ে বিএনপি যখন আনন্দ-উৎসব করে, তখন আমাদের কিছু বক্তব্য না দিয়ে উপায় থাকে না। বিএনপি এ বিষয়ে যতবার কথা বলবে, তার জবাব আওয়ামী লীগ দেবে। তবে আমরা মনে করি এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই ভাল।
×