ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষয়িষ্ণু ধারা উজ্জীবিত করেছিলেন তারেক মাসুদ

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১৪ আগস্ট ২০১৭

চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষয়িষ্ণু ধারা উজ্জীবিত করেছিলেন তারেক মাসুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র-সংস্কৃতিতে কার্যকর পরিবর্তন এনেছিলেন তারেক মাসুদ। দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ক্ষয়িষ্ণু ধারাকে উজ্জীবিত করেছিলেন তারেক মাসুদ। তার নির্মিত মাটির ময়না ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে অর্জন করেছিল সমালোচক পুরস্কার। চলচ্চিত্র নির্মাণে স্বতন্ত্র কৌশলের পাশাপাশি ছবি প্রদর্শনীর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রমী ছিলেন এই নির্মাতা। এভাবেই দেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনে আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়েছিলেন তারেক মাসুদ। জহির রায়হানের অন্তর্ধানের পর তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের অন্তর্ধান চলচ্চিত্র আন্দোলনের জন্য বড় ধাক্কা। মেধা, সৃষ্টি ও নির্মাণের দিক থেকে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর পরস্পরের ‘মানিকজোড়’ ছিলেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েও এই জুটির অকাল প্রয়াণ নিয়ে বিশ্ব চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের শোকার্ত হতে দেখেছি। যেন বড় এক পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। এভাবেই তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে মূল্যায়ন করলেন দেশের আরেক খ্যাতিমান চলচ্চিত্র ও নাট্য নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ। রবিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মরণে স্মৃতিতর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রবিবার ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন বাঁক সৃষ্টিকারী নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং চলচ্চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরের ষষ্ঠ প্রয়াণবার্ষিকী। সিনেমার ফেরিওয়ালা হিসেবে খ্যাত এই জুটিকে স্মরণ করা হয়েছে নানা আয়োজনে। তাঁদের স্মরণে ছবি এঁকেছেন চিত্রশিল্পীরা। প্রদর্শিত হয়েছে চলচ্চিত্র। রোপণ করা হয়েছে নবীন বৃক্ষ। আলোচনায় উঠে এসেছে চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক তাদের জীবন কথন। এদিন ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে দুর্ঘটনাস্থল মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের স্মৃতিফলকে। এছাড়াও সেখানে নিরাপদ সড়ক দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি দীপক কুমার ঘোষ, তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীর স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রিপন আনছারী প্রমুখ। এর আগে জোকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালিত হয়। এদিন বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি ও তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট যৌথভাবে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মরণে স্মৃতিতর্পণ এবং ‘তারেক মাসুদ স্মারক বক্তৃতা ২০১৭’ আয়োজন করে। চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও চলচ্চিত্র গ্রাহক মিশুক মুনীর স্মরণে স্মৃতিতর্পণ এবং তারেক মাসুদ স্মারক বক্তৃতার পাশাপাশি প্রদর্শিত হয়েছে তারেক মাসুদ নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘আদমসুরত’ এবং তারেক মাসুদের জীবনভিত্তিক প্রসূণ রহমান নির্মিত প্রামাণ্যচলচ্চিত্র ‘ফেরা’। এক মিনিটের নীরবতা পালনের মাধ্যমে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মরণে স্মৃতিতর্পণের সূচনা হয়। এতে অংশ নেন সাংস্কৃতিক নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্রকার নাসির উদ্দিন ইউসুফ, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, শিল্পী ঢালী আল মামুন, মিশুক মুনীরের ভাই আসিফ মুনীর, চলচ্চিত্রকার সাজেদুল আওয়াল, নাদির জুনাইদ।। ‘তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র ও তারেক মাসুদ পাঠ এবং পুনঃপাঠ’ শীর্ষক তারেক মাসুদ স্মারক বক্তৃতা করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রসূণ রহমান। স্মৃতিতর্পণ ও স্মারক বক্তৃতা আয়োজনে প্রারম্ভিক আলোচনা ও সঞ্চালনা করেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন। সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ (এফএফএসবি) সভাপতি স্থপতি লাইলুন নাহার স্বেমি। আসিফ মুনীর বলেন, ‘আদম সুরত’ সিনেমাটির নির্মাণ প্রক্রিয়ায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। জোকার সেই দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরদের গাড়িতে ছিলেন শিল্পী ঢালী আল মামুনও। গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। তিনি দুজনকে নিয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘মুক্তির গান’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে নতুন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তারেক মাসুদ। এ আয়োজনে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ নিহত চলচ্চিত্রকর্মীদের স্মরণে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। আলোচনা শেষে প্রসূণ রহমান নির্মিত ‘আগস্টের আরিচা রোড’ শীর্ষক মিউজিক ভিডিও উপস্থাপনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় সেদিনের নিহতদের স্মৃতির প্রতি। জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর সমাপনী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে চারুকলা বিভাগের আয়োজনে ২৬ জুলাই থেকে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারিসমূহে শুরু হয় ২২তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী ২০১৭। রবিবার বিকেলে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায় এ প্রদর্শনীর পর্যালোচনা ও সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন চিত্র-সমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও শিল্প-সমালোচক মঈনউদ্দিন খালেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক চিত্রশিল্পী মোঃ মনিরুজ্জামান। সারাদেশের শিল্পীদের নানা মাধ্যমের শিল্পের সমাহারে বৈভবময় এ প্রদর্শনীতে ৩৩২ জন শিল্পীর ৩৮৪টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে চিত্রকর্ম ছিল ২৬৫টি, ভাস্কর্য শিল্পকর্ম ছিল ৬৩টি, স্থাপনা শিল্পকর্ম ছিল ৪৭টি, ভিডিও উপস্থাপনা ছিল ৯টি ও নিউমিডিয়া উপস্থাপনা ছিল ৯টি। বিচারকম-লীর মাধ্যমে ৩৮৪টি শিল্পকর্ম থেকে যাছাই-বাছাই ১০টি ক্যাটাগরিতে ১০ জন শিল্পীর ১০টি শিল্পকর্মকে পুরস্কৃত করা হয়।
×