ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই আসছেন সুষমা স্বরাজ

ঢাকা-বেজিং সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে দেখছে ভারত

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১৪ আগস্ট ২০১৭

ঢাকা-বেজিং সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে দেখছে ভারত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে আরও গভীর সম্পর্ক গড়তে উভয়পক্ষের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের সময় যেসব চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে উভয় পক্ষ। একই সঙ্গে উভয় দেশই আঞ্চলিক সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা-দিল্লীর কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য জানায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এপ্রিলে দিল্লী সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। সে সময় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, সাইবার নিরাপত্তা, পরমাণু বিদ্যুত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ঋণ সহযোগিতা, বর্ডার হাট স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং বিদ্যুত ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা চুক্তি সই হয়। চুক্তির আওতায় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে ভারত। উভয় পক্ষই এখন দ্রুত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নের দিকে ঝুঁকছে। এসব চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ খুব শীঘ্রই ঢাকা সফর করবেন। সূত্র জানায়, অনেক সময় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি ও সমঝোতা সই হলেও বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। তবে ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, তার বাস্তবায়নে উভয় পক্ষই আন্তরিক। উভয় পক্ষই মনে করে সমন্বয়, সদিচ্ছা ও সহযোগিতা থাকলে এসব চুক্তি বাস্তবায়ন কঠিন নয়। ক্রেডিট লাইনের আওতায় ভারত বাংলাদেশের যেসব প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে, সেসব প্রকল্পও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাইছে উভয় পক্ষ। বিশেষ করে রেলপথে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে ভারত এখন আগ্রহী। ঢাকা-কলকাতা রেলপথের পাশাপাশি খুলনা-কলকাতা রেলপথ ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে। এছাড়া উভয় দেশের মধ্যে ১৯৬৫ সালে আরও চারটি রেলপথ চালু ছিল। সেসব রেলপথ পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে গত শুক্রবার কাঠমা-ুতে বিমসটেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই সম্মেলনে বিমসটেক মহাসচিব পদে বাংলাদেশের প্রার্থী নির্বাচিত হন। উভয় দেশই বিমসটেককে প্রাধান্য দিচ্ছে। বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতেও ঐকমত্য হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের (বিবিআইএন) মধ্যেও সড়ক ও বিদ্যুতখাতে সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে ঢাকা-দিল্লী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ভারতের পক্ষ থেকে ভিসা প্রদান সহজ করা হয়েছে। যে কারণে ভারতে বাংলাদেশের পর্যটক বাড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশী পর্যটকদের চাপ মোকাবেলা করতে ভারতের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন কার্যক্রম আধুনিক ও জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। ভারতের জনগণের জন্য বাংলাদেশের ভিসা প্রদান প্রক্রিয়াও সহজ করা হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের গভীর সম্পর্ককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ভারত। দিল্লীর পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে, ঢাকা-বেজিং সম্পর্ক নিয়ে দিল্লীর কোন মাথাব্যথা নেই। বিশেষ করে চীন থেকে সাবমেরিন ক্রয় নিয়ে ভারত দুশ্চিন্তায় রয়েছে, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে দিল্লী খুব স্পষ্ট করেই এটা বলেছে। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশ পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশ চাইলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কারিগরি সহযোগিতা দেবে ভারত। এদিকে উভয় দেশই সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। ইতোমধ্যেই সীমান্ত হত্যা অনেক কমে এসেছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আরও দুইটি সহকারী হাইকমিশন প্রতিষ্ঠা করতে চায় ভারত। এই দুইটি হলো খুলনা ও সিলেট। পাশাপাশি ভারতেও বাংলাদেশ মিশনের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন বাংলাদেশের ৫টি মিশন চালু করা হয়েছে। ভারতে মিশন বৃদ্ধির ফলে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়ছে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশের হাইকমিশন ছাড়াও আরও চারটি মিশন রয়েছে। গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন চালু হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আগরতলা বাংলাদেশ ভিসা অফিসকে সহকারী হাইকমিশন অফিসে উন্নীত করা হয়। এছাড়া ভারতের কলকাতায় ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন চালু রয়েছে। ত্রিপুরার আগরতলায় ২০১২ সাল থেকে একটি ভিসা অফিস চালু করে বাংলাদেশ। সেখান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা দেয়া হতো। তবে ২০১৫ সালে আগরতলা ভিসা অফিস সহকারী হাইকমিশন অফিসে উন্নীত করা হয়। আগরতলা সহকারী হাইকমিশন অফিস থেকে প্রতিদিন প্রায় একশ’ ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশের ভিসা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া কলকাতা, দিল্লী, মুম্বাই মিশন থেকে ভারতীয়দের বাংলাদেশী ভিসা দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন চালুর পর এখান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে মিশনের অন্যান্য কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
×