ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নর-নারীর চিরন্তন সৌন্দর্যচর্চা

মধ্যবয়সী নারী-পুরুষও এখন যাচ্ছেন পার্লারে

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১৪ আগস্ট ২০১৭

মধ্যবয়সী নারী-পুরুষও এখন যাচ্ছেন পার্লারে

সমুদ্র হক শুধু তরুণী নয়, মধ্য বয়সী নারীও কমে যায় না। বয়স্কাদেরও সাধ। ছেলেরাই বা বাদ যায় কেন! তারা কি শুধু নরসুন্দরের (নাপিত) কাছেই যাবে! তাদেরও তো সাধ হয় মুখাবয়াবকে আকর্ষণীয় করে সুন্দর করার। ভেতরের বাসনা যাই থাক, বাইরে তো আকর্ষণ করা গেল। তাই বা কম কিসে। বর্তমানের বিউটি পার্লারগুলো মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও জন্য ‘জেন্টস পার্লার’ খুলেছে। পার্লারে এদের সকলের ভিড় চোখে পড়ার মতো। তরুণরাও ছুটছে জেন্টস পার্লারে। সৌন্দর্য চর্চায় কোন ঘাটতি নেই। এই চর্চা চিরন্তন। ছেলেদের চুল ছেঁটে দেয়ার জন্য আছে নাপিত। নাপিতের রকমফের ঘটেছে। একটা সময় গ্রামের হাটবাজারের নাপিতরা ছোট্ট টুলে বা জলচৌকিতে বসে সামনে ইট রেখে সেখানে কাস্টমার বসিয়ে মাথাটি নাপিতের দুই হাঁটুর মধ্যে রেখে চুল ছেঁটে দিতে। রসিকজনেরা এর নাম দেয় ‘ইটালিয়ান সেলুন’। গ্রামের নাপিত নগরীতে এসে খুলেছে সেলুন। ষাটের দশকে এইসব সেলুনের সামনে লেখা থাকত ‘হেয়ার কাটিং সেলুন’ (চুল কাটার সেলুন)। প্রতিটি সেলুনে হরেক রকমের চুল কাটার ডিজাইন থাকত। দিনে দিনে এই সেলুনের জায়গা দখল করে নিয়েছে ‘জেন্টস পার্লার’। প্রবীণরা বলেন, ‘কলি! ঘোর কলি। কলিকালে আরও কত কিই যে দেখার আছে...।’ নারী তো সাজেই। এখন দেখা যাচ্ছে পুরুষরাও সাজে। সুন্দরীরা হয়ে উঠেছে অপ্সরী। পুরুষরা হয়ে উঠছে অপ্সরা (প্রতীকী অর্থে)। আগে মেয়েরা পার্লারের কয়েকটি সাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন কত বাহারি সাজ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পার্লারে নানা মেজাজের সাজ এসেছে। ফ্যাশনে, সৌন্দর্য চর্চায় এসেছে ভিন্নতা। মেয়েদের চুল কাটারও ফ্যাশন আছে। কয়েক রকমের কাটিং। মেশিনে চুল নানা সাজে ঢেউয়ের মতো ভাঁজ করা হয়। চুলের কিছু অংশ বাম অথবা ডান চোখের ধার দিয়ে গলার কিছুটা ওপরে থাকবে এমন স্টাইল আছে। চুল রিবন্ডিং, চুলের হাইলাইট, স্পা ট্রিটমেন্ট, স্টেপ কাট, লেয়ার কাট, ফিস কাট, ভলিউম কাট, সেকিং কাট, ফ্রিনজেস কাট, ব্যাংগস কাট, মিড লেন্থ কাট কত কি....। হালে ইমো কাট বেশি চলছে। সঙ্গে আছে ভি কাট, ইউ কাট। এমনটি বললেন, বগুড়ার বড় বিউটি পার্লার সুকন্যার স্বত্বাধিকারী ইসমত জাহান মিতু। তিনি বললেন, তাদের জেন্টস পার্লারও আছে। দিনে দিনে তরুণ ও মধ্য বয়সী ছেলেদের মধ্যে সাজার আগ্রহ বেড়েছে। বিউটি পার্লারে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড়। অপেক্ষার জন্য বসার ব্যবস্থা দেখে মনে হবে ড্রয়িং রুম। এর মধ্যেই আড্ডা। কে কিভাবে সেজে আসছে তাদের দেখে মন্তব্য। ফেসিয়ালের যে কত বাহার। ক্লিনিং, এ্যালোভেরা, পলিশিং, হলিউড স্টাইল, এ্যাকনি, গোল্ড। হালে হারবাল ফেসিয়াল এসেছে। হারবাল হোয়াটেনিং, হারবাল গ্রীন, মেডিকেটেড ফেসিয়াল কত কি। যাদের মুখে বা ত্বকে ব্রণ ও মেস্তার দাগ আছে তারাই ফেসিয়াল করছে বেশি। ভ্রƒপ্লাক, আপার লিপ। পার্টি মেকাপ, ব্রাইডাল মেকাপ, বডি শাইনিং হারমনি স্পা, ওয়েক্সিং ইত্যাদি। মেনিকিউর, পেডিকিউর (হাতে ও পায়ের সাজ) তো আছেই। বছর দুয়েক আগে বর্ষবরণ, ফাল্গুনের উৎসব, ভ্যালেনটাইন্স ডে, ঈদ উৎসব বিয়ের অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে বিউটি পার্লারগুলোতে বুকিং দেয়া হতো। বর্তমানে নামীদামী পার্লারগুলোতে প্রায় ভর বছর ভিড় লেগেই আছে। সিরিয়াল অনুযায়ী সাজিয়ে দেয়া হয়। দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত হওয়ায়, সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন বেড়ে যাওয়ায় মনের ইচ্ছা, আকাক্সক্ষাগুলোও পাখা মেলতে শুরু করেছে। এমন আকাক্সক্ষা ছেলেদের মনেও বাসা বেঁধেছে। তারাও চায় সাজতে। সৌন্দর্য চর্চায় মেয়ে ও ছেলে বলে কোন কথা নেই। সকলের মনেই সুপ্ত বাসনা থাকে ‘সাজুগুজু’ করার। এ যুগের তরুণী সুরভী নাসরিন বললেন, বর্তমানে পার্লারে অনেক উন্নতমানের আধুনিক সাজ এসেছে। সাজার পর একটু যতœ করে ধরে রাখলে এক সপ্তাহের বেশি রাখা যায়। ফারহা নূর নওরীন, জোশিতা, নোশিতা নওরীন, তৌষি, তাসমিম নওরীন, পৃথ্বা বলল, সাজার আগ্রহ কম বেশি সকলের আছে। মধ্য বয়সী কামরুন্নাহার, কামরুল লায়লা বললেন, সুন্দর হয়ে থাকার, সেজেগুজে থাকার আগ্রহ চিরন্তন। পয়ষট্টি উর্ধ বয়সের আবদুস সালাম ক্রিম, ফেসিয়াল ঘরেই রাখেন। মাঝেমধ্যেই জেন্টস পার্লারে যান। মিডিয়া কর্মী জিয়া শাহীন সুযোগ পেলেই জেন্টস পার্লারে গিয়ে ফেসিয়াল করে আসেন। বর্তমানে পার্লারগুলোতে হলুদের সাজ বিয়ের সাজ ও মেহেদির সাজের আলাদা কর্নার আছে। বড় পার্লারগুলো ‘বাই ওয়ান টেক ওয়ান ফ্রি’র মতো (একটা কিনলে আরেকটি ফি) বেশি সাজলে মেহেদিতে রাঙ্গানো ফ্রি করে দিয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। বড় নগরীর পাড়া মহল্লাগুলোতেও ছোট আকারের পার্লার গড়ে উঠেছে। উপজেলা পর্যায়েও তা সম্প্রসারিত। বিউটিশিয়ানদের সময় কাটে ব্যস্ততায়।
×