ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘পরীক্ষা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে জেনেছি’

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৩ আগস্ট ২০১৭

‘পরীক্ষা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে জেনেছি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘পরীক্ষা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়ে বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে জেনেছি। বিশেষত উনার অতি সাধারণ জীবনযাপন। কী অবলীলায় উনি অতি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতেন। অনেক সময় সাধারণ মানুষের পক্ষেও এটি সম্ভব নয়।’- কথাগুলো বলছিল ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাবরিনা সাথিলা। আর পরীক্ষার হলে বসে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রেদওয়ান মোহাম্মদ নুরুল্লাহর ভাষ্য, ‘নিজেদের কলেজের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগে অংশ নিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটির পুরোটাই পড়া হয়েছে। বইটি পড়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ বিষয়গুলো নতুন করে জেনেছি। তার রাজনৈতিক পথচলা ছাড়াও বিদেশ ভ্রমণের কথা যেমন জেনেছি, তেমনি জেনেছি বঙ্গমাতাকে তিনি রেনু নামে ডাকতেন।’- সাবরিনা ও রেদওয়ানই নয়, দেশে প্রথমবারের মতো ঢাকা কলেজের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ওপর আন্তঃকলেজ গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধুকে জেনেছে নতুন করে। শুধু জানাই নয়, তাদের দিতে হয়েছে লিখিত পরীক্ষা। ব্যতিক্রমী এ পরীক্ষায় ঢাকা শহরের ১৪টি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এতে ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেয়া ছিল বাধ্যতামূলক। অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কলেজে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই ঢাকা কলেজের আসনে বসে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় পরীক্ষা শুরু হলেও এদিন সকাল ৯টা থেকেই কলেজের প্রবেশপথে ছিল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপচেপড়া ভিড়। কোন কোন কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে এসেছেন বাবা-মায়েরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে অসংখ্য গাড়ির ভিড় সামনের রাস্তায় তখন যানজট। শনিবার সকালে ঢাকা কলেজে গিয়ে দেখা যায়, দিনটি অন্যদিনের মতো নয়। প্রবেশপথেই ছাত্রছাত্রীদের মাঝে উৎসবের আমেজ। একটু ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে তাদের চোখে-মুখে কোন উদ্বেগের ছাপ নেই। বরং উচ্ছ্বাস উছলে পড়ছে। অনেকটা আনন্দে মেতে উঠার মতোই। তবে ঘড়ির কাটা ঘুরতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে রুমের বাইরে ভিড় কমতে থাকলো। সবাইকে আসনে গিয়ে বসতে দেখা গেল। ধীরে ধীরে ঘড়িতে তখন সাড়ে ১১টা। সবার হাতে চলে এলো প্রশ্নপত্র। চলতে লাগলো কলম। তখন অনেকটা নিস্তব্ধ ঢাকা কলেজের রুমগুলো। হন্তদন্ত কক্ষপরিদর্শক। এক পরিদর্শকের কড়া শাসন, কথা বলা যাবে না। পেছনে তাকানো যাবে না। শিক্ষার্থীদের কলম এগিয়ে চলে। কিশোর-কিশোরী অক্ষরে উঠে আসতে থাকে স্বাধীন বাংলার স্থপতি। রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর কৈশর। বংশ পরিচয়। ছাত্র জীবন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কার। খাজা নাজিমউদ্দিন। কোন রেলস্টেশনে বঙ্গবন্ধু কুলির ছদ্মবেশে নেমে আসেন, সেই স্টেশনের নাম। ছয় দফা। এবং রেনু, মানিক মিয়া, গান্ধি ও হাচুর পূর্ণ নাম লিখতে হলো শিক্ষার্থীদের। অনুমতি সাপেক্ষ প্রশ্ন হাতে নিয়ে দেখা গেল, মোট ৫০ নম্বরের পরীক্ষা। এমসিকিউ নয়। লিখিত। পুরো বাক্যে লিখতে হবে বঙ্গবন্ধুকে। নির্দিষ্ট পশ্নের উত্তর লিখতে হবে নির্দিষ্ট স্থানে। ১ থেকে ৪০ পর্যন্ত প্রত্যেক প্রশ্নের মান ১ এবং ৪১ থেকে ৪৫ পর্যন্ত প্রত্যেক প্রশ্নের মান ২। প্রশ্ন পত্রের ওপরে দেয়া কাগজে শিক্ষার্থীদের লিখতে হয়েছে নিজের নাম, কলেজের নাম, শ্রেণী, রোল, বিভাগ ও মোবাইল নম্বর। কক্ষ পরিদর্শককেও দিতে হয়েছে স্বাক্ষর। অন্য আট দশটি পরীক্ষার মতো হলেও ব্যতিক্রম কেবল জাতির পিতাকে জানার অভিনব এ কৌশল। মূলত যা ছিল অনুপ্রেরণাময়। পরীক্ষা দিতে থাকা অবস্থায় কথা হচ্ছিল ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। জনকণ্ঠের কাছে এ কিশোরের ভাষ্য, ‘পরীক্ষার জন্য বইটি পড়তে গিয়ে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এখন আরও অনেক বেশি জানি। তার আদিনিবাস, দাদার দাদা ও তার সঙ্গে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে বিস্তর জেনেছি। আগামীর পথচলায় বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে শিখেছি এটাও।’ ইয়াসিন আরাফাত নামের অপর শিক্ষার্থী জানায়, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের পুরোটা এখনও পড়া হয়নি। তবে ৬০ পৃষ্ঠার মতো পড়েছি। এইটুকু পড়ে বুঝতে পড়েছি বঙ্গবন্ধু কিভাবে ছাত্রনেতা থেকে জাতির পিতা হয়ে উঠেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য তিনি কিভাবে ধীরে ধীরে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে তিনি শহীদ সাহেব বলে ডাকতেন। এটিও আগে জানা ছিল না।’ আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী নিয়ে কলেজ পর্যায়ে এটিই প্রথম পরীক্ষা। এতে ঢাকার ১৪ টি কলেজের ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী উপহার দেয়া হয়। আর তখনই ঘোষণা দেয়া হয় বইটির ওপর পরীক্ষা হবে তাদের। অর্থাৎ সকল শিক্ষার্থীর জন্য এটি বাধ্যতামূলক। তাই ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রথম থেকেই বইটি পড়তে হয়েছে। এমনটি জানিয়েছে কয়েক শিক্ষার্থীও। শিক্ষার্থী রেদওয়ান মোহাম্মদ নুরুল্লাহ জানায়, সে পুরো বইটি পড়েছে। খুব যতœ করে পড়েছে। জানতে চেয়েছে গভীরভাবেও। এ প্রসঙ্গে পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, কলেজ পর্যায়ে আমরাই প্রথম এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছি। মূলত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর চেতনা ছড়িয়ে দিতে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে, পিতা শেখ মুজিবের জীবন থেকে ব্যক্তি জীবনে কিভাবে অনুপ্রাণিত হওয়া যায়; তা জানাতেই আমাদের এ উদ্যোগ। ঢাকা শহরের ১৪টি কলেজ এ উদ্যোগে অংশ নিয়েছে। প্রত্যেক অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষই এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা কলেজের মতো জাতীয় পর্যায়েও এমন পরীক্ষা হওয়া উচিত। আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধুকে জানার এ চর্চা ছড়িয়ে দেয়া উচিত। আর ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন মোল্লা জনকণ্ঠকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম যত বেশি জানতে পারবে দেশের জন্য তা তত বেশি মঙ্গলজনক। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এ উদ্যোগ।
×