ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিআরসির সঙ্গে এনবিআরের বৈঠক

ভ্যাট বাবদ ৫২১ কোটি টাকা বকেয়া আদায়ের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৩ আগস্ট ২০১৭

ভ্যাট বাবদ ৫২১ কোটি টাকা বকেয়া আদায়ের উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভ্যাট বাবদ ৫২১ কোটি টাকার বকেয়া রাজস্ব আদায় ও ভবিষ্যতে টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্ট জটিলতা নিরসনে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছ থেকে টেলিযোগাযোগ খাত থেকে ভ্যাট বাবদ ওই পাওনা আদায়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এনবিআর ও বিটিআরসি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছে। সম্প্রতি এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে আলোচনা সভায় বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদসহ প্রতিষ্ঠানটির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আলোচনা সভায় এনবিআর তাদের পাওনা রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে জোর দাবি জানায়। এনবিআরের দাবিকৃত রাজস্বের পরিমাণের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে বিটিআরসি তাদের ?যুক্তি উপস্থাপন করে। তবে দেশের স্বার্থে দুটি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত পোষণ করে। এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাজস্ব আদায় ও টেলিকমিউনিকেশনের উন্নয়নে করণীয় সবকিছু করার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে রাজস্ব বিষয়ে জটিলতা নিরসনে মুখোমুখি অবস্থানে না গিয়ে সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। বৈঠকে জটিলতা নিরসনে প্রয়োজনে আবারও আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সময় উভয়পক্ষ বেশকিছু বিষয় শনাক্ত করে যৌথ প্রস্তাব পাস করে। বৈঠকের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, টেলিকমিউনিকেশনের উন্নয়নের জন্য যা যা করণীয় আমরা তা করব। আমাদের রাজস্ব যাতে কোথাও বকেয়া না থাকে এবং ভবিষ্যতে যাতে রাজস্ব বৃদ্ধি পায় সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বিটিআরসির কাছে আমাদের রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে হিসাব-নিকাশ করে আদায়ের প্রক্রিয়া হচ্ছে। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, সব ক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা করবেন। বকেয়া রাজস্বের বিষয়ে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলো থেকে আদায়কৃত ভ্যাট বাবদ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে এনবিআরের বর্তমান পাওনা প্রায় ৫২১ কোটি টাকা। বকেয়া রাজস্ব পরিশোধে সরকারী সংস্থাটিকে বারবার তাগিদ দিয়েও কোন সাড়া পায়নি এনবিআর। এমনকি বকেয়া আদায়ে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দেরও উদ্যোগ নিয়েছিল এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট। সূত্র জানায়, মোবাইল ফোন অপারেটরদের (গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, সিটিসেল) টু জি লাইসেন্সের আওতায় স্পেকট্রামের সর্বশেষ কিস্তির ভ্যাট বাবদ বিটিআরসির কাছে এনবিআরের পাওনা ছিল ২৬৯ কোটি টাকা। ওই বকেয়া পরিশোধের তাগিদ দিয়ে বিটিআরসির কাছে ২০১৪ সাল থেকে কয়েকবার দাবিনামা পাঠালেও অর্থ পরিশোধের বিষয়ে বিটিআরসির তরফ থেকে কোন সাড়া পায়নি এনবিআর। অন্যদিকে ২০১৬ সালে থ্রি জি লাইসেন্সের ভ্যাট সঠিকভাবে পরিশোধ না করায় বিটিআরসির কাছে ১৬১ কোটি টাকার আরও একটি দাবিনামা পাঠায় এনবিআর। রবি ও এয়ারটেল একীভূত ফির ভ্যাট বকেয়ার বিষয়ে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, এয়ারটেলের অনুকূলে বরাদ্দকৃত টু জি স্পেকট্রামের ক্ষেত্রে ২০১১ সালে সর্বশেষ টু জি লাইসেন্স ও তরঙ্গ নবায়ন বাবদ ৫০৭ কোটি টাকা একীভূতকরণ ফি বিটিআরসিতে জমা দেয়ার কথা কোম্পানির। এ ছাড়া রবি ও এয়ারটেল এক হওয়াসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য ফি বাবদ আরো ১০০ কোটি টাকাসহ ৬০৭ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দিতে হয়েছে। যেখানে এনবিআর ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকা দাবি করেছে। কিন্তু বিটিআরসি ভ্যাট আদায় না করেই তাদের (রবি-এয়ারটেল) এক হওয়ার লাইসেন্স দিয়েছে। এতে বিটিআরসির কাছে রবি-এয়ারটেল একীভূতকরণ ফি বাবদ ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকা পায় এনবিআর। ফি পরিশোধ করতে এনবিআরের পক্ষ থেকে কয়েকবার বার্তা পাঠালেও সাড়া দেয়নি বিটিআরসি। শেষে বাধ্য হয়ে বিটিআরসির বিরুদ্ধে মামলা করে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)।
×