ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানিতে লক্ষাধিক গরু-মহিষের টার্গেট, পশু সঙ্কট হবে না

মিয়ানমার থেকে প্রচুর গবাদিপশু আমদানি

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৩ আগস্ট ২০১৭

মিয়ানমার থেকে প্রচুর গবাদিপশু আমদানি

এইচ এম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন ট্রলারবোঝাই গরু আসছে মিয়ানমার থেকে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে আমদানি হয়ে দেশে ঢুকছে এসব গবাদিপশু। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের উত্তর অঞ্চলে বিভিন্ন বাজারে ওসব কোরবানি পশু সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আসন্ন কোরবানি ঈদে পশুর সঙ্কট হবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, সপ্তাহখানেকের মধ্যে মিয়ানমার থেকে অন্তত ৫০ হাজারটি গবাদিপশু আমদানি হয়ে দেশে আসছে। প্রায় এক লাখ গরু-মহিষ আমদানির টার্গেট নিয়ে এবারে ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের বেপারিদের সঙ্গে কথা পাকাপুক্ত করেছে। সে হিসেবে চাহিদা মোতাবেক দেশটির ব্যবসায়ীরা গরু-মহিষ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে। সীমান্তে বিজিবির পাহারা থাকায় চোরাচালানিরা সুবিধা করতে পারছে না। টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে চোরাইপথে পশু আমদানি প্রায় বন্ধ বললে চলে। তারা আরও জানান, একটা যত বড়ই গরু-মহিষ হোক, মাত্র পাঁচশ’ টাকা রাজস্ব দিলে আনায়াসে মিয়ানমার থেকে করিডোরে আনা সম্ভব হচ্ছে। চোরাইপথে এনে অসাধু ব্যবসায়ীদের আম-ছালা দুটোই যাচ্ছে। টেকনাফ শুল্ক কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গবাদিপশু দেশে প্রবেশ রোধে ২০০৩ সালে ২৫ মে শাহপরীর দ্বীপে করিডোর চালু করা হয়। প্রতিটি গরু-মহিষের জন্য মাত্র ৫শ’ টাকা ও ছাগলের জন্য ২শ’ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। ১ আগস্ট থেকে ৮ি দনে ১ হাজার ৭৫৫টি গরু-মহিষ এসেছে করিডোরে। জুলাই মাসে ৬ হাজার ৭৭০ গবাদিপশুর মধ্যে ৪ হাজার ৭৪০ গরু, ২ হাজার ২৯ মহিষ এবং ১টি ছাগল আমদানি করা হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭শ’ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৯৩৬টি গবাদিপশু আমদানি হয়েছে। এসবের মধ্যে ৫৪ হাজার ৪৯৬ গরু, ১২ হাজার ৩৯৫টি মহিষ ও ৪৫টি ছাগল ছিল। এতে তিন কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস শুল্ক কর্মকর্তা এ কে এম মোশারফ হোসেন বলেন, গত অর্থবছরে তিন কোটি সাড়ে ৩৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পশু ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় প্রচুর পরিমাণ পশু আমদানিতে এটা সম্ভব হয়। করিডোর প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরে এটি সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়। তবে করিডোরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও যাতায়াতের সুব্যবস্থা হলে আরও বেশি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে। পশু আমদানি বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। পশু আমদানিকারকরা জানান, মিয়ানমার থেকে এসব গবাদিপশু আসছে। মিয়ানমার থেকে ট্রলারবোঝাই করে গবাদিপশু শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে আনা হচ্ছে। পথিমধ্যে কোন ঝামেলাও নেই। নানদীতে টহলরত বিজিবি জওয়ানরা গবাদিপশু আমদানিতে সহযোগিতা দিচ্ছে। তবে ট্রলার প্রতি চাঁদা না দিলে মিয়ানমারের বর্ডারগার্ড পুলিশ (বিজিপি) মাঝেমধ্যে নাফনদী থেকে গবাদিপশু ভর্তি ট্রলার ধরে নিয়ে যায়। এ জন্য কোরবানের আগে নাফনদীতে বিজিবির টহল বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। টেকনাফের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণ গবাদিপশু মজুদ আছে। আরও আমদানি হয়ে আসছে মিয়ানমার থেকে। তবে কোরবানির সময় ঘনিয়ে না আসায় বর্তমানে ঢালাওভাবে বিক্রি হচ্ছে না। সপ্তাহখানেক পরে সারিবদ্ধ ট্রাকে করে চট্টগ্রাম, ফেনী, সীতাকু- ও উত্তরবঙ্গে এসব গবাদিপশু সরবরাহ করা হবে। পশু ব্যবসায়ী সোহেল জানান, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা প্রায় তিন শতাধিক গরু-মহিষ তার কাছে মজুদ রয়েছে। তার ওপর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে আরও ৫ হাজারের বেশি গরু-মহিষ আমদানির অপেক্ষায় রয়েছি। গবাদিপশু ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দ মেম্বার জানান, শাহপরীর দ্বীপ-টেকনাফ সড়ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় করিডোর থেকে সরাসরি ট্রাকে করে পশুগুলো পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে তাদের খরচ বেশি পড়ছে। কুমিল্লার গরু ব্যবসায়ী আবুল মহাজন জানান, টেকনাফ করিডোরে পর্যাপ্ত গরু-মহিষ মজুদ থাকলেও গত বছরের তুলনায় দাম একটু বেশি। তারা প্রতিবছর কোরবানির আগে মিয়ানমারের গরু-মহিষ কিনে এলাকায় বিক্রি করে মুনাফা করে থাকেন। মিয়ানমার থেকে বর্তমানে যেভাবে গবাদিপশু আমদানি হচ্ছে, তাতে এবারে কোরবানির পশু সঙ্কট হবে না বলে আশা করেন তিনি। দেশে গৃহপালিত গরুর চেয়ে মিয়ানমারের গরুগুলো একটু সাইজে লম্বা। কিনতে দামেও সস্তা পাওয়া যায়। তাই ক্রেতারা কোরবানির সময় মিয়ানমারের গরুর প্রতি ঝুঁকে পড়ে বেশি। আমরাও সামান্যটুকু মুনাফা করে বিক্রি করে থাকি। টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণ গবাদিপশু আমদানি হয়ে আসছে। পশুবাহী ট্রলার যাতে নিরাপদে করিডোরে আসতে পারে, এ জন্য বিজিবি সদস্যরা সহায়তা দিয়ে থাকে। নাফনদীতে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
×