ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি

ট্রাম্পের টার্গেট এবার ভেনিজুয়েলা

প্রকাশিত: ০৩:১২, ১৩ আগস্ট ২০১৭

ট্রাম্পের টার্গেট এবার ভেনিজুয়েলা

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালির সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ভেনিজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং সেখানের জনগণ অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে আছে, তারা সেখানে মারা যাচ্ছে। তাই অনেক বিকল্পের মধ্যে সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও আছে। খবর-সিএনএন, বিবিসি ও এবিসি নিউজের। এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে একজন একনায়ক হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, তিনি জনগণের মতামত উপেক্ষা করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পরিষদ বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে তার অনুগতদের নিয়ে ৫৪৫ জনের একটি গণপরিষদ গঠন করেছেন। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে মাদুরোর এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউস ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। জনগণের ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ উপেক্ষা করে মাদুরো ৩০ জুলাইয়ের এই নির্বাচন সম্পন্ন করেন। নির্বাচনের আগে এবং পরে দেশব্যাপী ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বলেছে, এর আগে গ্রেফতারকৃত এক হাজার নেতাকর্মীর বাইরে নতুন করে পাঁচ হাজার লোককে আটক করা হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তাবাহিনী মাত্রারিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে। সংঘর্ষে নিহত হয় বহু মানুষ। সরকারী হিসেবেই যার সংখ্যা ১২৫ জনের বেশি। বিক্ষোভকারীরা যাতে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনী লিওপোল্ডো লোপেজ ও এন্টোনিও লেদেজমা নামে দু’জন নেতৃস্থানীয় বিরোধী দলীয় নেতাকে মধ্যরাতে গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। ট্রাম্প এ মাসের প্রথমে এ দুই রাজনৈতিক নেতাকে অবৈধভাবে গ্রেফতারের নিন্দা জানান। শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্প নন, ১১টি আমেরিকান রাষ্ট্র মাদুরো ৫৪৫ জনের যে বিতর্কিত গণপরিষদ গঠন করেছেন তার নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তুু মাদুরো সরকার তার নবগঠিত গণপরিষদের বিরুদ্ধে আনীত এসব নিন্দা প্রস্তাব ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করায় পেরু সরকার ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রদূত দিয়েগো মলেরোকে পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের দেশ ত্যাগ করতে বলেছে। প্রেসিডেন্ট মাদুরো অবশ্য একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন নবনির্বাচিত এই গণপরিষদ দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে। এই গণপরিষদে মাদুরোর স্ত্রী, সন্তান ও ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন পরিষদ সদস্য হিসেবে নিজেদের স্থান করে নিয়েছেন। এদিকে ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক হামলার সম্ভাবনা সম্পর্কে ভেনিজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভøাদিমির পেড্রিনো বলেন, এটি হবে বিকৃত মস্তিষ্কের কাজ। শুধু ভেনিজুয়েলার মন্ত্রী নন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাপ্টার অবশ্য সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। পেন্টাগনও এ বিষয়ে তাদের অজ্ঞতা প্রকাশ করে। সম্প্রতি মার্কিন দ্বীপ গুয়ামের সামরিক ঘাঁটিতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি নিয়ে মার্কিন প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা দফতর বেশ ব্যতিব্যস্ত আছে। এমন সময় ট্রাম্পের ভেনিজুয়েলায় সামিরক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। রিপাবলিকান নেতা টেড লিউ বলেন, (কোন দেশের বিরুদ্ধে) সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ সর্বশেষ পদক্ষেপ হতে পারে, সর্বপ্রথম নয়! উত্তর কোরিয়া ও ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের উস্কানিমূলক বক্তব্য অবিবেচনাপ্রসূত। অপর একজন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের নিন্দা জানান। হোয়াইট হাউসের এক খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার নিকোলাস মাদুরো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার জন্য টেলিফোনে সংযোগ দেয়ার অনুরোধ জানান। তবে, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে তাকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, ভেনিজুয়েলায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মাদুরোর সঙ্গে সন্তুষ্ট চিত্তে কথা বলবেন। হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, মাদুরো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সঙ্গে কথা বলবেন। হোয়াইট হাউস জানায়, মাদুরো শুক্রবার ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার অনুরোধ জানিয়েছেন। যদিও মাদুরো ও তার কয়েকজন মিত্রের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। হোয়াইট হাউস জানায়, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প ভেনিজুয়েলার সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে, রাজনৈতিক বন্দীদের ছেড়ে দিতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়ন বন্ধে মাদুরোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু মাদুরোর সরকার ট্রাম্পের এসব আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
×