ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ মনোয়ারুল হক;###;বি.এস.এস,বি-এড;###;সিনিয়র শিক্ষক;###;কানকিরহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়;###;সেনবাগ, নোয়াখালী।;###;পরীক্ষকঃ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা।;###;মোবাইলঃ ০১৭১৮৮৬৩০৪৫

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা বিষয় ॥ কৃষিশিক্ষা

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১২ আগস্ট ২০১৭

 নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা বিষয় ॥ কৃষিশিক্ষা

প্রথম পরিচ্ছেদ পারিবারিক কৃষি খামারের ধারণা ও গুরুত্ব পারিবারিক খামার বাংলাদেশের কৃষক পরিবার কৃষি খামারের মাধ্যমেই শস্য, শাক-সব্জি, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মৎস্য উৎপাদন করে থাকে। আকার অনুযায়ী খামার বাণিজ্যিক ও পারিবারিক হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক কৃষি খামার আবার বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক খামারের জন্য বেশি পরিমাণ মূলধন ও লোক বল প্রয়োজন। কিন্তু পারিবারিক খামারের জন্য কম মূলধন ও লোক বল প্রয়োজন। পারিবারিক কৃষি খামারের গুরুত্ব ১। পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মেটায়। ২। অতিথি আপ্যায়নে ভূমিকা রাখে। ৩। পরিবারের বেকার সদস্যদের কর্মক্ষেত্র তৈরি করে। ৪। পরিবারের সদস্যদের অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার হয়। ৫। পরিবারের বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ৬। গবাদি-পশু-হাঁস-মুরগি পালনের মাধ্যমে কৃষি জমির উর্বরতা বাড়ানো যায়। ৭। গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনের মাধ্যমে আগাছা, ফসলের বর্জ্য ও উপজাতসমূহের সঠিক ব্যবহার করা যায়। ৮। গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির মল-মূত্র ব্যবহার করে বায়োগ্যাস উৎপন্ন করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ৯। পরিকল্পিত পারিবারিক কৃষি খামার জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ১০। কৃষকের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করে। পারিবারিক শাক-সব্জি ও পোল্ট্রি খামার পারিবারিক শাক-সবজি খামার পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য এই খামার তৈরি করা হলে ও পারিবারিক ক্ষুদ্র আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই খামারের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য একটা বড় ভুমিকা রাখতে পারে। এই খামার বাড়ির আশে পাশে খালি জায়গায় , উঁচু ভিটা, মাঝারি নিচু জমিতেও করা যায়। অভিজ্ঞ কৃষকের পরামর্শ নিয়ে ঋতুভিত্তিক সারা বছরের চাষ পরিকল্পনা করলে প্রায় সারা বছরেই এই খামার থেকে ফসল পাওয়া যেতে পারে। যা তার পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পরেও কিছু আয় ও করা যায়। পারিবারিক পোল্ট্রি খামার পোল্ট্রি বলতে গৃহপালিত পাখি যেমন, হাঁস, মুরগি, কবুতর, তিতির, কোয়েল ইত্যাদিকে বোঝায়। তিতির ও কোয়েল আমাদের দেশের নিজস্ব পোল্ট্রি নাক হওয়ায় তেমন জনপ্রিয় নয়। এদেশের কৃষক পারিবারিক পোল্ট্রি খামারে হাস, মুরগি, কবুতর পালন করে আসছে। গৃহপালিত পাখি পালন এ দেশের কৃষকের কৃষ্টির অভিচ্ছেদ্য অংশ। অতীতকাল থেকেই কৃষক তার খামারে দেশি জাতের হাঁস , মুরগি, কবুতর পালন করে আসছে। সাধারণত কৃষক তার খামারে ৫-১৫ টি হাঁস-মুরগি পালন করে থাকে। এই প্রচলিত খামারে কোনো উন্নত বাসস্থান বা খাদ্যেরব্যবস্থা থাকে না। হাঁস-মুরগি নিজেরা বাড়ির আশে পাশে চরে খাদ্য শস্য ও পোকা মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। এতে পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটে এবং উদ্বৃত্ত ডিম ও মুরগি বাজারে বিক্রি করে কিছু বাড়তি আয় ও হয়ে থাকে। এখানে বাণিজ্যিক বিষয়টি প্রাধান্য পায় না। কিন্তু বর্তমানে এই ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। দেশি জাতের হাঁস , মুরগির উৎপাদন ক্ষমতা কম হওয়ার কারণে তারা পারিবারিক খামারে উন্নত জাতের হাঁস ও মুরগি পালন করে আসছে যারা বছরে ২৫০ টি পর্যন্ত ডিম দেয়। এই পারিবারিক খামারে তারা অধিক মাংস উৎপাদনশীল ব্রয়লার মুরগিও পালন করে আসছে। পারিবারিক ও বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামার এসব পারিবারিক খামারে ৫০-৩০০ টি পর্যন্ত উন্নত ব্রয়লার বা লেয়ার মুরগি বা হাঁস পালন করতে দেখা যায়। যেসব কৃষক জমির অভাবে শস্য, গর, ছাগল ও মাছ চাষ করতে পারে না তারা সহজে পারিবারিক হাঁস- মুরগি খামার স্থাপন করতে পারে। সফল ভাবে পারিবারিক পোল্ট্রি খামার পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ থাকা উচিত। বিশেষ করে পোল্ট্রির জাত, বাসস্থান, খাদ্য ব্যবস্থাপনা , রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং ভটিকাদান কর্মসূচি সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। পোল্ট্রির স্বাস্থ্য ব্যবস্থপনা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বলতে পোল্ট্রিকে সুস্থ রাখার জন্য রোগ প্রতিরোধ ও অসুস্থ পাখির চিকিৎসাকে বোঝায়। পোল্ট্রির ক্ষেত্রে চিকিৎসা থেকে রোগ প্রতিরোধই শ্রেয়- কথাটি অধিক প্রযোজ্য। কারণ কোন পোল্ট্রি খামারে রোগ দেখা দিলে চিকিৎসা না করে কখনো লাভজনক করা যায় না। তাই পারিবারিক পোল্ট্রি খামার পরিচালনার সময় অবশ্যই নিম্ন লিখিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা অনুসরন করতে হবে। ** সুস্থ ও স্বাস্থযবান বাচ্চা দ্বারা খামার শুরু করা। ** বন্যামুক্ত উঁচু স্থানে খামার করা ও খামারের আশ-পাশে পরিষ্কার করা। ** খামারের চারিদিকে মাঝে মধ্যে জীবাণুমুক্ত স্প্রে করা। ** খামারের পানি নামার জন্য নর্দমার ব্যবস্থ করা। ** সম্ভব হলে খামারের চারদিকে বেরা দেওয়া। ** ঘরের মেঝে ও মুরগির লিটার শুকনা রাখা। ** পোল্ট্রিএ ঘর পূর্ব- পশ্চিমে লম্বা-লম্বি করা। ** ঘরে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখা । ** খাদ্য ও পানির পাত্র পরিষ্কার রাখা। ** সুষম খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। ** হাঁস, লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির জন্য পৃথক টিকাদান কর্মসূচি মেনে চলা। ** খামার কর্মীর শরীর পোশাক পরিচ্ছন্ন থাকা। ** খামারে জৈব নিরাপত্তা (ইরড় ঝবপঁৎরঃু) নিশ্চিত করা। মহামারী আকারে রোগ দেখা দিলে সকল পাখিকে ধ্বংস করে মাটি চাপা দিতে হবে। রোগ নিরাময়ে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ
×