ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১২ আগস্ট ২০১৭

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে

চলতি বছর চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার রেকর্ড হওয়ায় নগরবাসীদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। প্রতিবছরই বাড়ছে পানির উচ্চতা। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এখন উঁচু এলাকাতেও পানি উঠছে। উঁচু নিচু এলাকা সর্বত্র অথৈ পানিতে সয়লাব। কেন্দ্রীয় মহাপরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নই বাঁচাতে পারে চট্টলাবাসীকে। একটি আধুনিক নগরীতে জলাবদ্ধতার কোন সুযোগ নেই। বর্তমান চট্টগ্রাম মেয়র ৩৬ দফা দিয়েছিলেন তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিপত্রে। সেখানে জলাবদ্ধতা নিরসনই ছিল বিশেষ অগ্রাধিকার। এখন জলাবদ্ধতায় হাবুডুবু খাওয়া চাঁটগার নাগরিকবৃন্দ কি বৃষ্টিকে দুষবেন, নাকি দুর্ভাগ্যকে! বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ন্যূনতম ৩২টি সরকারী সংস্থা কাজ করে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাসমূহের সমন্বিত ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। আশার কথা হলো কোটি মানুষের ভোগান্তির কারণ চট্টগ্রামের মহাজলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার নতুন একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশদ কাজের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) বাস্তবায়ন করবে। তবে দ্বৈততা ও পুনরাবৃত্তি পরিহার এবং সমন্বয় সাধনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের ৩৬টি খালের ৫ লাখ ২৮ হাজার ঘনমিটার মাটি খনন করা হবে। একই সঙ্গে সোয়া ৪ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারণ করা হবে। অন্যদিকে ৮৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হবে। অর্ধশতাধিক সেতু ও কালভার্ট তৈরি করা হবে। এর পাশাপাশি বন্যার পানি সংরক্ষণের জন্য তিনটি জলাধারও হবে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যে চাক্তাই খাল, সে খালের দৈন্যদশা নগরবাসীর জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জের এক সময়ের ‘লাইফ লাইন’-খ্যাত এ খালের বাঁকে বাঁকে রয়েছে অবৈধ দখলদার। খাল দখল করে দখলবাজরা গড়ে তুলেছে আবাসিক ভবন, গার্মেন্টস কারখানা থেকে শুরু করে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও বস্তি। প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে অবৈধ দখলদাররা পানি চলাচলের পথ রুদ্ধ করায় চাক্তাই খাল তার নিষ্কাশন ক্ষমতা হারিয়েছে। ২০০৩-০৪ সালে কোন সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই ৯ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত গভীরতা রেখে খালের বেশিরভাগ অংশের তলদেশ পাকা করা হয়। দুই-তিন বছরের মধ্যে পাহাড়ী বালু ও ময়লা আবর্জনায় খালের তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। চট্টগ্রাম মহানগরীর এক বড় অংশের জলাবদ্ধতার অবসানসহ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে চাক্তাই খাল দখলমুক্ত ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে এমনটিই প্রত্যাশিত। সারা বাংলাদেশে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। কিন্তু এর সঙ্গে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার মৌলিক পার্থক্য আছে। অন্যান্য জায়গায় পানি শাখা-প্রশাখা নালার মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে খাল ও নদীতে পড়ে। সারাদেশে এই ব্যবস্থা একমুখী। কিন্তু চট্টগ্রামে এটি দ্বিমুখী। এখানে জোয়ারের সময় উল্টো পানি ঢোকে। তাই সারাদেশের ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানের যে পদ্ধতি, তার সঙ্গে চট্টগ্রামকে মেলানো ঠিক হবে না। পরিবেশগত বাস্তবতার বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে স্মরণে রাখতে হবে। চট্টগ্রাম শহর বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী। সাগরের তলদেশ ক্রমান্বয়ে উঁচু হচ্ছে বলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে নতুন বিপদ তৈরি হয়েছে। গোটা শহরকে তো আর উঁচু করা সম্ভব নয়, তাই চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপে অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
×